শনিবার ১২ অক্টোবর ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


আসুন সহনশীলতা এবং শান্তির আলোকিত পথে চলি


আমাদের কুমিল্লা .কম :
01.11.2020

ফ্রান্স এবং লালমনিরহাটে যা হচ্ছে, তা কোন মতেই ভাল খবর নয়। সচেতন নাগরিকবৃন্দকে অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করতে হবে। বিষয়গুলি সম্বন্ধে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আমাদেরকে এর ভবিষ্যত ফলাফল ভুলে গেলে হবে না, আমরা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন কোনও দ্বীপে বাস করি না। শান্তি আর সহনশীলতাই আমাদের সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে দিতে পারে, এই শিক্ষা আমাদেরকে আমাদের মহানবী এবং ধর্মই দেয়। দেশে আমাদের তরুণ প্রজন্ম চমৎকার একটি শিক্ষা নিয়ে বেড়ে উঠছে, তাদের কেবল দেশের ভিতরেই নয়, দেশের বাইরেও সফল পেশাদার জীবন গড়ে তুলে সফল হতে হবে। আমাদেরকে তাই একই সঙ্গে হতে হবে দেশপ্রেমিক এবং আন্তর্জাতিকতাবাদী । বাংলাদেশ ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে, ইউরোপীয় এক সংসদ সদস্যের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য থেকে বিষয়টি আঁচ করা যায়। তিনি ফ্রান্সের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রতিশোধ হিসেবে ইউরোপীয়দেরকে বাংলাদেশের পোশাক বয়কট করার আহবান জানিয়েছেন ! আমাদের রাজধানীতে কেউ কেউ ফরাসি পণ্য বর্জন এবং ফরাসী দূতাবাসকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কারের দাবি করেছেন, যারা এই দাবিগুলো তুলেছেন, আমার বিশ্বাস- জাতীয় নীতি নির্ধারক পর্যায়ে এদের প্রভাব অতি নগন্য। কিন্তু এরপরেও এধরনের আন্দোলন বিশ্বকে একটি ভুল বার্তা দেয়। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আমাদের তৈরি পোশাকের ৮০% বাজারই ইউরোপে। আমার মনে হয় ফ্রান্সের আসন্ন নির্বাচনকে উপলক্ষ করেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য রাজনীতিকে প্ররোচিত করা হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতি অব্যহত থাকলে ১৮ মাস পরে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে ডানপন্থী অতি-জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী ক্ষমতায় আসবে, যাদের রাজনীতি প্রত্যক্ষভাবে মুসলমান এবং অভিবাসীদের বিরুদ্ধে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, ফ্রান্স হলো বিশ্বের একমাত্র দেশ যা অভিবাসীদেরকে তার নাগরিক হিসেবে সমান সুযোগ-সুবিধা দেয় এবং তাদের কাছে আছে বিশ্বের অন্যতম সেরা শিক্ষিত “ইমাম” শ্রেণী। আমার এক বন্ধুর ছেলে এবং তার স্ত্রী ফ্রান্সে অভিবাসী হিসাবে বসবাস করছেন, তার কিছু জটিল রোগ রয়েছে, তিনি বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পান, এবং স্বল্প ছুটি নিয়েও বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তায় ভৃগেন, কারণ বাংলাদেশে সেই স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ব্যাপারে তার সন্দেহ রয়েছে। দু’বার প্যারিসে থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমার। প্রথমবার ২০১৫ সালের সালের ডিসেম্বরে জলবায়ু সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে আমি কয়েকদিন প্যারিসে ছিলাম। সেই সম্মেলনেই জলবায়ু সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিলো, ডোনাল্ড ট্রাম্প ছাড়া বর্তমান বিশ্বের সকল রাষ্ট্রনেতারাই এই চুক্তিতে একমত পোষণ করেছিলেন। একদল বাংলাদেশী সাংবাদিক, নাগরিক সমাজকর্মী এবং সরকারি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে একটানা ১৬ দিন সেসময় প্যারিসে আমার সুযোগ হয়েছিলো। সেই বছর ১৩ নভেম্বর একটি ফুটবল ম্যাচে তথাকথিত মুসলিম সন্ত্রাসীদের হামলায় ১৩৭জন নিহত হয়। এর ঠিক একমাস পরেই জলবায়ু সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে পারবে কি না, তা নিয়ে আমরা শংকিত ছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা নির্দ্বিধায় আমরা প্যারিসে চলে এসেছি, শহরটি উপভোগ করেছি, আমাদেরকে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনও ঘটনার মুখোমুখি হতে হয়নি। ট্রেনে বা রাস্তায় চলাচল করার সময় সাধারণ মানুষের চমৎকার আচরণ আমাদের বিস্মিত করেছে। সত্যিকার অর্থে ফরাসী জনগণকে আমার কাছে স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্বের প্রতীক মনে হয়েছে, যেমনটা তাদের ফরাসী বিপ্লবের মাধ্যমে প্রাপ্ত দেশটির পতাকাতেও চিহ্নিত করা হয়েছে। ফ্রান্সের জনগণ রাজতন্ত্র ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, একটি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছে এবং সকল নাগরিকের কাছে সমতার দর্শন কে মূর্ত করেছে। ফরাসী বিপ্লবের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো গীর্জার প্রভাব, রাষ্ট্রের উপর বিশেষত ক্যাথলিক গীর্জা এবং ধর্মের একচ্ছত্র প্রভাবের বিরুদ্ধে। চার্চগুলো জন্ম, বিবাহ এবং মৃত্যুসহ মানবজীবন নিয়ন্ত্রণ করত, তারা ছিল বিশাল ভূ-সম্পত্তির মালিক। ফরাসী বিপ্লব চার্চের মালিকানাধীন এই সমস্ত ক্ষমতা বাতিল করে এবং সম্পত্তিগুলি বাজেয়াপ্ত করে। প্যারিসের ড্রানসি মসজিদের ইমাম এবং ফ্রেঞ্চ ইমাম কনফারেন্সের প্রেসিডেন্ট জনাব হাসেন চালঘৌমি গত সোমবার বলেছেন যে, শিরশ্ছেদ করা ইতিহাস শিক্ষক বাক স্বাধীনতার এক শহীদ। তিনি ফ্রান্সের মসজিদগুলিকে শুক্রবার এই শিক্ষকের জন্য দোয়া করার আহ্বান জানানা। জনাব হাসেন অন্যান্য মুসলিম নেতাদের সাথে নিয়ে এই স্কুলের বাইরে ফুল দিয়েছেন, তিনি আরও বলেন- ধর্মীয় উগ্রবাদের বিপদ থেকে বাঁচতে মুসলিম সম্প্রদায়ের জেগে ওঠার সময় এসে গেছে। তিনি বলেন, “আমরা অত্যাচারিত- এই অজুহাত দেওয়া বন্ধ করতে হবে। অন্য সবার মতো ফ্রান্সে আমাদের সবারই অধিকার রয়েছে । পিতামাতার উচিত এই দেশের ভাল দিকগুলো সম্বন্ধে তাদের সন্তানদের অবগত করানো।” ফ্রান্সে প্রায় ৭০ লাখ মুসলমান রয়েছে, তাদের জন্য অবশ্যই শান্তি ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করার কথা আমাদের ভাবতে হবে। শান্তি ও সহিষ্ণুতার মহান ধর্ম ইসলামে চরমপন্থা ও হত্যার কোনও স্থান নেই। বিভক্তি এবং উগ্রবাদ ইতিহাসে কখনই কোনও ভাল কিছু অর্জন করতে পারেনি।

রেজাউল করিম চৌধুরী, ৩১ অক্টোবর ২০২০