রবিবার ১৬ জুন ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


পানসে ভোটে আগ্রহ কম জনগণের ফাঁকা কেন্দ্রের মাঠে কুকুর, অলস সময় পার করছেন কর্মকর্তারা


আমাদের কুমিল্লা .কম :
22.05.2024

স্টাফ রিপোর্টার ।। বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা ছাড়া কুমিল্লার সদর দক্ষিণ ও বরুড়া উপজেলায় মোটামোটি শান্তিপূর্ণ ভাবেই ভোট গ্রহণ হয়েছে। তবে যাদের জন্য এই বিশাল ভোটের কর্মযজ্ঞ সেই ভোটাররাই কেন্দ্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোরতা সত্ত্বেও পানসে ভোটে আগ্রহ দেখায়নি সাধারণ জনগণ। তাই সকাল থেকেই কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার ৫৫টি কেন্দ্র ও বরুড়া উপজেলায় ১৩৬টি কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি ছিলো খুবই কম। ভোটার বিহীন খাালি মাঠে কুকুরের দৌঁড়াদৌঁড়ি ছিল লক্ষনীয়। আর পুরোটা সময় জুড়েই ভোটের সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও প্রার্থীর এজেন্টরা অলস সময় পাড় করছেন খোশ গল্প করে। গতকাল মঙ্গলবার টিম আমাদের কুমিল্লার গণমাধ্যমকর্মীরা সদর দক্ষিণ ও বরুড়া উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্র করে এ চিত্র দেখেছে প্রত্যক্ষ ভাবেই। রিটানিং অফিসার বলছেন, শান্তিপূর্ণভাবে ভোট সম্পন্ন হয়েছে।
এ দিকে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে ৩০ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে গতকাল বিকেল ৫টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ।
ভোটের হার কম হওয়া প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, দেশের প্রধানতম রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, এছাড়া তারা ভোট না দিতে লিফলেট বিতরণ করেছে। এজন্য ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে।
অন্য দিকে , দেশের প্রধান বিরোধীদল ভোটের মাঠে না থাকায় পানসে ভোট বলে অবিহিত করছেন সাধারণ মানুষ।
গতকাল সরেজমিনে সকাল ৯টায় সদর দক্ষিণ উপজেলার মুরাদ কালিকাপুর আদর্শ ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ৫নং বুথে এক ঘণ্টায় ১ ভোট সংগ্রহ হয়েছে। এ বুথে বিভিন্ন প্রার্থীদের এজেন্ট রয়েছে ৬ জন। কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, এই কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৪৭০ জন। এখানে মোট ৭টি বুথে ভোটগ্রহণ চলছে। এর মধ্যে ৫ নম্বর বুথে প্রথম ঘণ্টায় একটি ভোট পড়েছে। ওই বুথটি মহিলা ভোটারদের।
অন্যদিকে ভাটপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের সামনে নগদ টাকা বিতরণের সময় এক প্রার্থীর সমর্থককে কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম এহতেশামুল হক (৫৫)। তিনি হেলিকপ্টার প্রতীকের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আবদুল হাই বাবলুর সমর্থক বলে স্বীকার করেছেন। এহতেশামুল হক উপজেলার বাটপাড়া এলাকার ধনপুর গ্রামের রুহুল আমিনের ছেলে।
বরুড়ার মুকুন্দুপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি কক্ষের প্রকাশ্যে আনারস প্রতীকে সীল দিতে দেখা গেছে।
এছাড়াও নির্বাচনের দিন সকালে বরুড়া উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আবুল হাশেম লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র ও পাঁচথুবি আহমদীয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে থেমে থেমে জাল ভোট দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
বরুড়ার মুড়িয়ারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রে কোনো ভোটার সারি নেই। নয়টি বুথ রয়েছে। ভোটার সারিতে চারটি কুকুর। কুকুর দেখে হাসাহাসি করছেন কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ-আনসার সদস্যরা।
দুপুর ২টায় সদর দক্ষিণ উপজেলার শীষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, পুরুষ এবং নারী উভয়ের ভোট কক্ষগুলো খালি। সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, এজেন্ট এবং আনসার সদস্য আলস সময় অতিবাহিত করছেন।
চার নম্বর কক্ষের পোলিং অফিসার সেলিনা আক্তার টেবিলে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছেন। ভোটার না থাকায় হাতে তেমন কাজ নেই। ওই বুথের পোলিং এজেন্টরা মেতে আছেন একে অপরের সঙ্গে খোশগল্পে। সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ঘুরাফেরা করছেন বারান্দায়।
প্রিসাইডিং অফিসার মো. হালিম বলেন, সকালের দিকে ভোটার উপস্থিতি ভালো ছিল। ১২টার পর থেকে ভোটার নেই। দুপুর ২টা পর্যন্ত এ বুথে ভোট পড়েছে ১০২টি।
একই উপজেলার লোলবাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের নারী বুথের পোলিং অফিসার। সকাল পৌনে ১০টার দিকে ওই কেন্দ্রের নারী বুথে গিয়ে দেখা যায়, তিনি বসে ফেসবুকে রিলস দেখে দেখে সময় কাটাচ্ছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ভোটার উপস্থিতি খুবই কম। দুই ঘণ্টায় ভোট গ্রহণ মাত্র ৯টি।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণের শীষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার ভিডিও করায় এক সংবাদকর্মীকে হেনস্তা করার অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ‘একুশে সংবাদ’ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার আবু নোমান সায়েম জানান, সকাল ১০টার দিকে সদর দক্ষিণের শীষপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কিছু যুবক জাল ভোট দেয়ার সময় তিনি ভিডিও করায় তাকে হেনস্তা করে গায়ে হাত তোলা হয় এবং ভোট কক্ষের বাইরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
নির্বাচনের রিটানিং অফিসার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পংকজ বড়ুয়া জানান, ২টি উপজেলায় নির্বাচন সুষ্ঠু শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
সুয়াগাজী বাজারে কথা হয় নলছোঁয়া গ্রামের আ. অজিজের সাথে। তিনি জানান, ভোট এখনা পানসে পানসে হয়ে গেছে। ভোট দিলে বা না দিলে একি দলের লোক জিতে। তাই ভোট দিতে যাই না।