রুবেল/এম হাসান ।। সরকারি চাকরির সব গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিলের দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করতে যাওয়ার পথে পুলিশের বাধার সম্মুখীন হয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ঘটে। এতে পুলিশ, শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকসহ ২০ জন আহত হয়। মহাসড়কে আহত শিক্ষার্থীদের দেখতে এসে বেশ তোপের মুখে পড়েন কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি ড. আবদুল মঈন।
গতকাল বিকাল সোয়া তিনটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন আনসার ক্যাম্প এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়েন শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। এতে পুলিশ, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ অন্তত ২০ জন আহত হন। তাঁদের কয়েকজনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
ঘটনাস্থলে ছিলেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) খন্দকার আশফাকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করছি। শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর হামলা করেছেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাফি জানান, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বিকেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার কোটবাড়ীর দিকে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়। এ নিয়ে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এরপর কিছুক্ষণ পাল্টাপাল্টি ধাওয়া বন্ধ থাকলেও আনসার ক্যাম্পের সামনে আবার শুরু হয়।
প্রথম দফায় বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে সরেজমিনে দেখা গেছে, আনসার ক্যাম্পের সামনে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছে। এ সময় শিক্ষার্থীদের কাউকে কাউকে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে দেখা যায়। পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফাঁকা গুলি ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। এ সময় আহত কয়েকজনকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিতে দেখা যায়।
দ্বিতীয় দফায় বিকেল সাড়ে চারটায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে কোটবাড়ীর দিকে রওনা দিয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটবাড়ি বিশ্বরোড এলাকায় লাঠি নিয়ে অবস্থান নেয়। এসময় পুরো এলাকায় অবস্থান নেয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের মারমুখী আচরণ দেখে পুলিশ পিছনে চলে যায়। এসময় শিক্ষার্থীরা পুলিশের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ।পরে শিক্ষার্থীরা ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে মিছিল শুরু করে এবং মহাসড়কে বসে পড়ে ।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী রাফি বলেন আমাদের ছেলেদের উপর অতর্কিত ভাবে হামলা চালিয়েছে। আমাদের ২০ জন ছাত্র আহত হয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ভর্তি আছে ।
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জোহরা মিম বলেন পুলিশ আমাদের ভাইদের উপর হামলা করে রক্তাক্ত করেছে। আজকে আমরা রাজপথে এসেছি। কোটা প্রথা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তিনি কুমিল্লার সকল বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের অবস্থান নেয়ার জন্য আহ্বান জানান ।
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, বিকেলে পুলিশ সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় অবস্থান নিয়েছিলেন। তখন কেউ কেউ উসকানিমূলকভাবে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়লে আত্মরক্ষার জন্য পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে। তবে পুলিশ কখনোই শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করতে চায়নি। শিক্ষার্থীরা যেন শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে পারেন, সে জন্য পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষায় পুলিশ বদ্ধপরিকর।
এদিকে, মহাসড়কের কোটবাড়িতে অবরোধস্থলে গিয়েছিলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে উপাচার্য অবরোধস্থলে যান। কিন্তু আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে সন্ধ্যা ছয়টা ৯ মিনিটের দিকে তিনি অবরোধস্থল ত্যাগ করতে বাধ্য হন।
কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, কোটা বাতিলের দাবিতে অবরোধ করতে আসার পথে আনসার ক্যাম্পের সামনে যখন পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও লাঠিপেটা করেন আমাদের উপর, তখন উপাচার্য কোথায় ছিলেন?
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ও লাঠিপেটায় আহত শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিতে সেখানে যান। সন্তানতুল্য শিক্ষার্থীরা আহত হওয়ার ঘটনায় তিনি মর্মাহত হয়েছেন। পুলিশ সুপারকে ফোনে বিষয়টি জানানোর পর শিক্ষার্থীদের পথ ছেড়ে দেয় পুলিশ। তিনি বলেন, অবরোধস্থলে উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা কেন এমনটি করল তিনি জানেন না।
এ দিকে, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ড. রনি বলেন, আমাদের এইখানে সর্বমোট ৯ জন আহত অবস্থায় এসেছে। এর মধ্যে ৭ জনকে এডমিশন দেওয়া লাগছে এবং ২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি। ৭ জনের অবস্থাও অতটা খারাপ নয়, তারাও মোটামুটি ভালো আছে। আগামী ২৪ ঘন্টা আমাদের পর্যবেক্ষণে থাকবে।
পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অবস্থান নিয়েছেন সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিকেল ৫ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মহাসড়কে অবস্থান নেন তারা।
এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছেন। পরে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে কুবি শিক্ষার্থীর উপর হামলার বিচারের দাবি জানান তারা।
গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে অবস্থান করছিলেন। মহাসড়কে শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের দুই লাইনে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ময়নামতি হাইওয়ে থানার ওসি ইকবাল বলেন,আন্দোলনের ফলে ঢাকা এবং চট্টগ্রামমুখী দুইলেনের যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।