#নিরব সময়ে তৎপর কিশোর গ্যাং
#স্থানীয় বড় ভাইদের দ্বারা এরা প্রভাবিত
#ঈদকে সামনে রেখে বাড়ানো হয়েছে পুলিশের ফোর্স-অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশফাকুজ্জামান
সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ ।। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে রমজান মাসে সক্রিয় হয়ে উঠেছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। বিভিন্ন মার্কেট ও সড়কগুলোতে ওৎ পেতে থেকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ছিনতাই করে যাচ্ছে।
সন্ধ্যা হলেই কুমিল্লা নগরীর অলিগলি ও সড়ক চলে যায় তাদের দখলে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই পথচারী, যানজটে থাকা অটোরিকশা ও অটোরিকশা যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়াই এই কিশোর গ্যাংয়ের মূল উদ্দেশ্য।
এমনই ঘটনা সরাসরি দেখতে পান টিম আমাদের কুমিল্লা। শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে নগরীর টমসমব্রীজ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনের সড়কের পাশে হঠাৎ চিৎকার এক অটোরিকশা চালকের। কয়েকজন এগিয়ে গেলে তাদের গায়ে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। পরে লোকজন প্রাণের ভয়ে দৌড়ে জীবন রক্ষা করে। আর ওই অটোচালককে ছুরি দিয়ে আঘাত করে নিয়ে যায় টাকা-পয়সা। এরপর পালিয়ে যায় কিশোং গ্যাং সদস্য। কুমিল্লা ইপিজেড ফাঁড়ি পুলিশকে বিষয়টি অবগত করলে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
গত ২০ শে মার্চ এমন আরও একটি ঘটনার বর্ণনা দেন এক ভুক্তভোগি রাশেদ। ফজরের নামাজ শেষে ঘুমে যখন কাতর নগরবাসী। তিনি এমন সময় সকাল ৫টার দিকে ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। ঢুলিপাড়া মোড়ে দাঁড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ঠিক তখনই কিছু কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য তাকে ভয় দেখিয়ে ছিনিয়ে নেয় মানিব্যাগ ও এটিএম কার্ড। কিন্তু ভাগ্যক্রমে আশপাশ থেকে কোথাও একটা গলার আওয়াজে মোবাইল না নিয়েই পালিয়ে যান কিশোর গ্যাংয়ের প্রায় পাঁচ-সাতজন সদস্য। পরে তিনি কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানায় একটি জিডি করেন। এমন পরিস্থিতিতে আরও অনেকেই পড়ছেন।
শুধু এটাই নয়, সারা বছরের মতো রমজান মাসে নগরী জুড়েই চলছে ‘কিশোরগ্যাংয়ের এমন অনেক অপতৎপরতা। এরা বিভিন্ন এলাকায় বড় বড় অপরাধ করছে স্থানীয় বিভিন্ন দলের নেতাদের প্রশ্রয়ে। বলছেন ভুক্তভোগি এবং সচেতন সমাজ।
জানা গেছে, বিশেষ উৎসব এলে এসব কিশোরগ্যাংয়ের বেপরোয়া ছিনতাই বেড়ে যায়। পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা খুব চাতুরতার সাথে নীরব সময়গুলোতে এসব আক্রমণ করে। এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেয়া তথ্য মতে, কুমিল্লা নগরীতে বেপরোয়া হয়ে উঠা কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা হাজারেরও বেশি। মোটকথা, বর্তমানে নগরবাসীর জন্য অন্যতম দুশ্চিন্তার কারণ এই কিশোর গ্যাং।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসূত্র বলছে, নগরীতে বিভিন্ন এলাকায় ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে গড়ে উঠছে এসব কিশোরগ্যাং। তারা বিভিন্ন অপরাধ সংগঠনের পাশাপাশি নিজেদের একটা জগত তৈরি করেছে। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় তৈরি হওয়া কিশোর গ্যাং নিজেদের তৈরি করা সাংকেতিক ভাষায় তথ্য আদান-প্রদান করে। ঈগল, রয়েল বেঙ্গল, সিজলিন, জে অ্যান্ড জে, বিগ ব্রাদার, টুইস্ট, ব্ল্যাক স্টার, ডার্ক, ঈগল, আরজিএস, র্যাক্স, এক্স, এলআরএন, সিএমসি, মডার্র্ণ, রক স্টার, ডিস্কো বয়েজ, বস প্রভৃতি ইত্যাদি নামে পরিচিত ‘কিশোর গ্যাং’ আধিপত্য বিস্তারে ছিনতাই, চুরি পাড়া বা মহল্লার রাস্তায় মোটরসাইকেলের ভয়ংকর মহড়া, মাদক এবং ইয়াবা সেবন ও বিক্রি, চাঁদাবাজি, মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার মতো বড় বড় অপরাধের সাথে জড়িয়ে যাচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নগরীর বাসিন্দারা জানান, প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীরা সাহস দিয়ে কিশোরদের ব্যবহার করে অপরাধ করায়। এসব কিশোররাও উঠতি বয়সের কারণে নিজের অবস্থান ধরে রাখতে প্রতিযোগিতা করে অপরাধ করে। মূলত, তারা মারামারি, জমি দখল, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল এবং এদের কেউ কেউ আবার মাদকের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে এসব কিশোর গ্যাং তৈরি করেছে। এখন ঈদকে সামনে রেখে বিভিন্ন এলাকায় এসব কিশোর গ্যাংয়ের জমাট দেখা যাচ্ছে এবং তাদের লক্ষ্যও থাকে বিভিন্ন উৎসব।
এ বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অবস্থান কি থাকবে জানতে চাইলে কুমিল্লা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার আশফাকুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন জায়গায় আমাদের পুলিশের ফোর্স বাড়ানো হয়েছে। টহল টিম বাড়ানোর পরও মাঝেমাঝে একটু সমস্যা হলে আমাদের অবগত করলে সাথে সাথে আমাদের টিম পৌঁছে যাবে। পূর্বের ন্যায় কিশোর গ্যাংদের গ্রেপ্তারের অভিযান নিয়মিত চলছে।