শুক্রবার ২৬ জুলাই ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement
  • প্রচ্ছদ » sub lead 1 » নাঙ্গলকোটে ট্রেন দুুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে স্থানীয়দের তোপের মুখে রেলপথ মন্ত্রী ‘দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস’


নাঙ্গলকোটে ট্রেন দুুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে স্থানীয়দের তোপের মুখে রেলপথ মন্ত্রী ‘দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস’


আমাদের কুমিল্লা .কম :
24.03.2024

তাজুল ইসলাম, নাঙ্গলকোট ।। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের কুমিল্লার নাঙ্গলকোট তেজের বাজার সংলগ্ন এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে জামালপুরগামী বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ৯টি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনার ৬দিন পর শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন রেলপথ মন্ত্রী জিল্লুল হাকিম। পরিদর্শন শেষে মন্ত্রী বলেন, এখানে এসে সবার সাথে কথা বলে যা বুঝার আমরা বুঝে নিয়েছি। দুর্ঘটনায় যাদের অবহেলা প্রমাণ হবে তাদের বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিবো। আমরা চেষ্টা করছি যাতে নিরাপদ যাত্রায় মানুষকে পৌঁছে দেয়া যায়। যদিও স্থানীয় উরকুটি গ্রামের কামাল রেললাইনে ৩ কিশোরকে দেখার বিয়য়ে বক্তব্য দিয়েছে। আমরা দেখলাম রেলের স্লিপারের খুব দুর্বল অবস্থা। স্থানীয়রা মেনটেনেন্স ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন আমরা এ ব্যাপারটাও ক্ষতিয়ে দেখবো। দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই তবে আমরা আপনাদের সহযোগীতায় দুর্ঘটনা রোধ করতে পারবো। আমাদেরকে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছে যারাই এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিতে। আমরা সবাই মিলে চেষ্টা করলে সব ধরনের দুর্ঘটনা ও নাশকতা রোধ করতে পারবো। এদেশে যারা ট্রেনে আগুন দেয়, রেললাইন কেটে পেলে মানুষ মারতে চায় তাদেরকে প্রতিরোধ করা খুব কঠিন নয়, সবাই সচেতন হলে এটা রোধ করা যাবে। যারা ট্রেনে যাতায়াত করে তাদেরকে নিরাপত্তা দেয়া আমাদের সবার দায়িত্ব। যেখানেই আপনাদের চোখে পড়ে লাইন দুর্বল আছে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করলে দুর্ঘটনা রোধ করা যাবে। আমরা সবাই মিলে সহযোগিতার মাধ্যমে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে পারবো। যে সমস্ত দল মানুষকে মেরে পায়দা লুটতে চায়, যারা জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করে রাজনৈতিক পায়দা লুটতে চায় জনগণ তাদেরকে সমর্থন করেনা। এসময় তিনি নাশকতার কারণে হয়েছে বলায় স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েন রেলপথমন্ত্রী।
এর আগে রেলমন্ত্রী ঘটনাস্থলের আশপাশের লোকজনের সাথে কথা বলে দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চান। এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী শিপন, মনির আহম্মদ ও উরকুটি গ্রামের শাহাদাত হোসেন রিয়াদ মন্ত্রীকে অবহিত করে বলেন, রেলপথের তেজের বাজার এলাকার আপ লাইনের ২০৮ নং ব্রীজের অবস্থা দীর্ঘদিন থেকেই নাজুক। কিন্তু রেল কর্তৃপক্ষ এ ব্রীজটি মেরামতে কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় ব্রীজটি ভেঙ্গে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। মন্ত্রীকে এ রেলপথের আরো কয়েকটি ব্রীজের অবস্থা খারপ বলে অবহিত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান স্থানীয়রা। এছাড়াও রেল দুর্ঘটনার বিষয়ে নাঙ্গলকোট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সামছু উদ্দিন কালু, ভাইস চেয়ারম্যান আবু ইউসুফ ভূঁইয়া ও ঢালুয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজমুল হাছান ভূঁইয়া বাছির তাদের বক্তব্যে এ দুর্ঘনার জন্য রেল কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করে এ অঞ্চলে নিয়োজিত রেল কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বিরুদ্ধে তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রেলপথ মন্ত্রীর নিকট দাবি জানান।
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন কালে রেলপথ মন্ত্রীর সাথে ছিলেন, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি এ.বি.এম ফজলে কবির চৌধুরী এমপি, কমিটির সদস্য অধ্যক্ষ সফিকুর রহমান বাদশা এমপি, নুরুন নাহার এমপি, রেল সচিব ডক্টর হুমায়ুন কবির, রেলওয়ে মহা পরিচালক সর্দার শাহাদাত আলী, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক নাজমুল ইসলাম, ডি.আর.এম সাইফুল ইসলাম, রেলওয়ে পুলিশ সুপার হাছান আহম্মেদ চৌধুরী, কুমিল্লা জেলা প্রশাসক খন্দকার মুশফিকুর রহমান, নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন, নাঙ্গলকোট থানা অফিসার ইনচার্জ দেবাশীষ চৌধুরী।
এসময় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল মহাব্যবস্থাপক নাজমুল ইসলাম তার বক্তব্যে দুর্ঘটনাটি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের গাফিলতি নেই দাবি করে বিষয়টি নাশকতার কারণে হয়েছে বলায় স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েন তিনি। পরে এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নবানে তিনি তার কথা থেকে সরে গিয়ে বিষয়টি দুর্ঘটনাও হতে পারে বলে স্বীকার করে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার জন্য আহবান জানান। যদি নাশকতা হয় তাহলে হাত দিয়ে কি বিয়ারিং প্লেট খুলে ফেলতে পারে কিনা এ ব্যাপারে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদোত্তর দিতে পারেননি।
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন কালে রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সভাপতি এ.বি.এম ফজলে কবির চৌধুরী এমপি বলেন, আমি আপনাদের সাথে একমত, যখনি দুর্ঘটনা হয় তখন একটি কমিটি হয় কিন্তু এ কমিটির রিপোর্টের বিষয়ে সাধারণ মানুষতো পরে আমরাই কিছু জানতে পারিনা। এখানে আমরা স্থানীয়দের সাথে অনেক কথা বলেছি এবং অনেক কিছু বুঝেছি। তিনি আরো বলেন, আমরা যে এখানে আসলাম আমাদেরও বুঝার শক্তি আছে, হয়তো আমরা এখানে সরাসরি বলছিনা। আমরা বিষয়টি দেখবো। এ কমিটির রিপোর্ট যাই আসুক না কেন আমরাতো নিজের চোখেই দেখলাম।
উল্লেখ্য, গত ১৭মার্চ রবিবার দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের হাসানপুর ও গুণবতী স্টেশনের মধ্যবর্তী নাঙ্গলকোটের শিহর গ্রামের তেজের বাজার সংলগ্ন এলাকায় বিজয় এক্সপ্রেস ট্রেনের ইঞ্জিন থেকে ১৮টি বগি আলাদা হয়ে ৯টি লাইন থেকে ছিটকে পড়ে যায়। এ সময় ট্রেনের বগি ছিটকে গিয়ে রেলপথ সংলগ্ন ২টি বসত ঘরে পড়ে ঘর গুলো তছনছ হয়ে যায়। ওই রেলপথের তেজের বাজার এলাকার আপ লাইনের ২০৮ নং ব্রীজের কাঠের স্লিপার ভেঙ্গে গিয়ে ইঞ্জিন থেকে বগি গুলো আলাদা হয়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে ধারণা স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের। দুর্ঘটনায় ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের আপ লাইনের ৩শ’ মিটার লাইন স্লিপার থেকে খুলে রেলপথ থেকে অন্তত ১শ’ মিটার দূরে গিয়ে পড়ে। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত যাত্রীদেরকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে নাঙ্গলকোট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করে স্থানীয়রা। বগি গুলো ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের উভয় লাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাাম-সিলেট, চট্টগ্রাম-চাঁদপুর, চট্টগ্রাম-জামালপুর রেলপথে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১৫ঘন্টার উদ্ধার অভিযানের পর ডাউন লাইন চালু করে রেল কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ভোরে দুর্ঘটনা কবলিত আপলাইনের মেরামত শেষে লাইনচ্যুত হওয়া বগি গুলো উদ্ধার করায় আপ ও ডাউন লাইনে ৪দিন পর বৃহস্পতিবার ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।