শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


মহান অমর একুশে আজ


আমাদের কুমিল্লা .কম :
20.02.2024

এম হাসান ।। বাঙালির মননে অনন্য মহিমায় ভাস্বর চিরস্মরণীয় একুশে ফেব্রুয়ারি। ইতিহাসের পাতায় রক্ত পলাশ হয়ে ফোটা সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, সফিউর, আউয়ালের রক্তে রাঙানো অমর ২১শে ফেব্রুয়ারি আজ। রক্তস্নাত ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিবহ মহান শহীদ দিবস। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস।

মাথা নত না করার চির প্রেরণার অমর একুশের এ দিনে সারাবিশ্বের কোটি কণ্ঠে উচ্চারিত হচ্ছে একুশের অমর শোকসংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি…।’ ভাষা শহীদদের রক্তে শৃঙ্খলমুক্ত হয়েছিল দুঃখিনী বর্ণমালা, মায়ের ভাষা। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের যে সংগ্রামের সূচনা সেদিন ঘটেছিল, মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় পথ বেয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মধ্য দিয়ে তা চুড়ান্ত পরিণতি লাভ করে। একুশে ফেব্রুয়ারি তাই বাঙালির কাছে চির প্রেরণার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। প্রতিবারের মতো এবারও যথাযথ মর্যাদায় ভাবগাম্ভীর্যের সঙ্গে পালিত হচ্ছে মহান শহীদ দিবস। রাত বারটা এক মিনিটে একুশের প্রথম প্রহর থেকেই জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে ভাষা শহীদদের স্মরণ করছে। সকলের কণ্ঠে বাজছে একুশের অমর শোকসংগীত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/ আমি কি ভুলিতে পারি…।’

১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে ঘটেছিল বাঙালির ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার ঘটনা। ‘বাংলা ভাষা প্রাণের ভাষা’ স্লোগানে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষায় অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেয় বাঙালি তরুণ প্রজন্ম। একুশের চেতনা আমাদের আত্মমর্যাদাশীল করেছে। ‘একুশ মানে মাথা নত না করা’ চিরকালের এ স্লোগান তাই আজও সমহিমায় রয়েছে।

১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ, তমদ্দুন মজলিশ ও অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত হয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ। ১১ মার্চ ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে সংগ্রাম পরিষদ ধর্মঘট ডাকে। এদিন সচিবালয়ের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধুসহ অনেক ছাত্রনেতা গ্রেফতার হন। ১৫ মার্চ তারা মুক্তি পান। ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় অনুষ্ঠিত জনসভায় সভাপতিত্ব করেন শেখ মুজিবুর রহমান। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৯ সালের ২১ জানুয়ারি তিনি মুক্তি পান। ১৯ এপ্রিল আবারও তাকে গ্রেফতার করা হয়। জুলাই মাসের শেষে মুক্তি পান। ১৪ অক্টোবর ঢাকায় বঙ্গবন্ধুকে আবারও গ্রেফতার করা হয়। কারাগার থেকেই তার দিক-নির্দেশনায় আন্দোলন বেগবান হয়। সেই দুর্বার আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি শাসকগোষ্ঠীর জারী করা ১৪৪ ধারা ভাঙতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিলেন ভাষা শহীদরা। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি সেই রক্তস্নাত গৌরবের সুর বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে আজ বিশ্বের ১৯৩টি দেশের মানুষের প্রাণে অনুরণিত হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর এই দিনকে আস্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। আজ সারা বিশ্বের সকল নাগরিকের সত্য ও ন্যায়ের অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রেরণার উৎস আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। মায়ের বাসা রক্ষার্থে প্রাণ উৎসর্গকারী ও অকুতোভয় ভাষা শহীদদের প্রতি সশ্রদ্ধ সম্মান নিবেদন এবং মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪ যথাযথ মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসন কুমিল্লার উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে কুমিল্লাা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে একুশের প্রথম প্রহর রাত বারোটা ১ মিনিটে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে কুমিল্লা জেলার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি আধা সরকারি স্বায়ত্তশাসিত এবং বেসরকারি ভবন সমূহে সঠিক নিয়মে সঠিক রঙ ও মাপে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে । ভাষা আন্দোলন বিষয়ক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ১০ টা ৩০ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে । সকাল ১১ টায় বঙ্গবন্ধু ও ভাষা আন্দোলন বিষয়ক আলোচনা সভা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হবে। বাদ জোহর বা সুবিধাজনক সময়ে সকল মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয় ভাষা শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে ।