শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement
  • প্রচ্ছদ » লিড নিউজ ১ » কুমেক হাসপাতালে ইন্টার্নি চিকিৎসকরা বেপরোয়া # মারধর ও হয়রানির শিকার হন রোগীর স্বজনরা # গড়ে উঠেছে ‘বকশিস সিন্ডিকেট’ # ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে- পরিচালক


কুমেক হাসপাতালে ইন্টার্নি চিকিৎসকরা বেপরোয়া # মারধর ও হয়রানির শিকার হন রোগীর স্বজনরা # গড়ে উঠেছে ‘বকশিস সিন্ডিকেট’ # ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে- পরিচালক


আমাদের কুমিল্লা .কম :
10.10.2023

সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ ।। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসকরা এখন অনেকটাই বেপরোয়া। তাদের হাতে প্রতিনিয়ত মারধর ও হয়রানির শিকার হচ্ছে রুগী ও তার স্বজনরা।
এমনিতেই হাসপাতালটিতে কর্মচারী, দালাল ও বিভিন্ন পরিচয়ে দাপিয়ে বেড়ানো ‘বকশিস সিন্ডিকেট’ চক্রের সদস্যদের কাছে রুগীরা জিম্মি হয়ে থাকে। তারম াঝে ইন্টার্নি চিকিৎসকদের বেপরোয়া আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান রুগীরা।
গত শনিবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইন্টার্নি চিকিৎসকদের বেপরোয়া আচরণের এক রুগীর স্বজনকে মারধরের একটি ভিডিওটি প্রকাশ পায়। পরে রুগীর স্বজনরা অভিযোগ করেন। এ ভিডিও ও অভিযোগের কপিটি সাধারণ মানুষ শেয়ার করে এর প্রতিকার দাবি করছেন।
জানা যায়, কুমেক হাসপাতালের মহিলা মেডিসিন বিভাগে নাঙ্গলকোট উপজেলার চাটিতলা এলাকার জানে আলম তার অসুস্থ মাকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গিয়ে গিয়ে ইন্টার্নি চিকিৎসকের কবলে পড়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন।
এ বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন জানে আলম। এর অনুলিপি দেওয়া হয়েছে কুমিল্লা সিভিল সার্জনকেও।
অভিযোগে জানে আলম উল্লেখ করেন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর তার মা স্ট্রোক করলে হাসপাতালে ভর্তি করাতে জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন স্বজনরা। পরে ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ১১ নং মহিলা ওয়ার্ডে রেফার করে। রুগীর রেজিস্ট্রেশন নং- ২৬২২৭/৪১।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভর্তি পরবর্তী মেডিসিন বিভাগে তার অসুস্থ মাকে নেওয়া হলে সেখানে বেড খালি থাকলেও সিট দেওয়া হয় মেঝেতে। মা মেঝেতে শুয়ে থাকা অবস্থায় বমি করে। কর্তব্যরত ইন্টার্নি ডাক্তার ফয়সাল, সাকিবসহ ৩/৪ জনের নিকট অনুনয়-বিনয় করে বিষয়টি বললে তারা বিরক্তিবোধ করে নিজেদের মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে আর হাসাহাসি করে। যা সিসিটিভির ফুটেজে সংরক্ষিত আছে। এমন অবহেলায় রাতটি পার হলে সকাল ১০ টায় সিনিয়র ডাক্তার রুগীদের পর্যবেক্ষণে যাওয়ার আগে ইন্টার্নি ডাক্তার ফয়সাল তার মায়ের ফাইলটি নিয়ে যাওয়ায় ডাক্তারের ভিজিট সেবা থেকে তার মা বঞ্চিত হয়। তার মায়ের ফাইলটি কেন সিনিয়র ডাক্তারকে দেখায়নি তা নিয়ে বাকবিতন্ডা হয় ডাক্তার ফয়সালের সাথে। পরে ইন্টার্নি চিকিৎসকরা মিলে রুগীর স্বজন জানে আলমের সাথে বেপরোয়া আচরণ করতে থাকে। পরে ডা. ফয়সাল ও ডা. সাকিবের নেতৃত্বে ৩/৪ জন তার উপর হামলা করে।
আরও জানা যায়, শুধু এই রুগী নয়। গত ৮ জুন কুমেক হাসপাতালে নবজাতক শিশু বাচ্চার নিউমোনিয়ার চিকিৎসা করাতে বুড়িচং উপজেলার সাদকপুর থেকে আসেন মোস্তাফিজ। বাচ্চাকে ইমার্জেন্সি বিভাগে নেওয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার রেফার করে নবজাতক ওয়ার্ডে। রুগীর বাবা মোস্তাফিজ বাচ্চাকে নবজাতক ওয়ার্ডে আনার পর দেখতে পান ওয়ার্ডে নেই কোন ডাক্তার। পরে কুমেক পরিচালক ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী এসে রুগীকে দেখে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য সবাইকে ডাক দেন। কিন্তু পরিচালক বলে যাওয়ার পরেও বাচ্চাটি ৪০ মিনিট ডিউটি ডাক্তারের টেবিলে শোয়ানো ছিলো। বিষয়টি পরিচালককে অবগত করলে ইন্টার্নি কিছু ডাক্তার বাচ্চার বাবা মোস্তাফিজের উপর অনেক চড়াও হয়ে তাকে মারধরের হুমকি দেয়। এমতাবস্থায় বাগবিতণ্ডা চলার পর বাচ্চার অবস্থা অবনতি দেখে কুমিল্লা টাওয়ার হসপিটালের এনআইসিইউতে ভর্তি করানো হয়।
ভুক্তভোগী জানে আলম বলেন, আমি আমার মায়ের চিকিৎসা না করাতে পেরে এত মারধরের শিকার হয়েছি যা কল্পনার বাহিরে। ঘটনাটি অত্যন্ত মানসিক পীড়াদায়ক ও অপমানজনক। আমি আমার মাকে বাঁচাতে কুমেক হাসপাতাল থেকে নিয়ে আরেক হাসপতালে ভর্তি করি। এখন আমার মা অনেকটাই সুস্থ আছে। যে ইন্টার্নি ডাক্তাররা আমাকে ওই দিন লাঞ্ছিত করে মেরেছে ও আমার মাকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করেছে তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।
আরেক ভুক্তভোগী মোস্তাফিজ বলেন, কুমেক হাসপাতালের ইন্টার্নি ডাক্তারদের আচরণ দেখলে মনে হয় তারা এখানে সেবা না দিয়ে গুন্ডামী করতে আসছে। অনতিবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না দিলে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে রুগীদের সেবা থেকে বঞ্চিত করবে।
অভিযোগের বিষয়টি যথাযথ অনুসন্ধানপূর্বক কুমেক হাসপাতালে রোগী ও স্বজনদের হয়রানি বন্ধ এবং সেবার মান বৃদ্ধিতে সক্রিয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান সাধারণ মানুষ।
এ বিষয়ে কুমেক হাসপাতাল পরিচালক ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিক বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।