এম এ করিম সরকার দাউদকান্দি ।। গোমতী, কাঁঠালিয়া খিরাই, কালাডুমুর ও আংশিক মেঘনা নদী বেষ্ঠিত কুমিল্লার দাউদকান্দি। এ উপজেলার চারদিকে ঘিরেই রেখেছে মেঘনা, কাঁঠালিয়া, গোমতী খিরাই নদী। এই চারটি নদীর বুকে রয়েছে অসংখ্যক চর। এই চরগুলোতে বিশেষ করে শীতকালীন শাকসবজি চাষ করে থাকেন চাষিরা। এর মধ্যে অন্যতম খিরা চাষ। চরে চরে খিরা চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন অসংখ্যক চাষি।
জানা যায়, প্রায় ৭০ বছর আগে উপজেলার গঙ্গাপ্রসাদ গ্রামে প্রথমে খিরা চাষ শুরু করেন চাষিরা। এখন এ বিস্তার দাউদকান্দি সদর উত্তর ইউনিয়ন ছড়িয়ে ভাটিতে যেমন বিস্তৃতি ঘটেছে। বিপ্লবের ছোঁয়া লেগেছে আশপাশের জনপদেও। শীতে স্থানীয় চরগুলো হয়ে যায় খিরার চর। মাইলের পর মাইল যত দূর চোখ যায় শুধু দেখা যায় খিরা আর খিরার ক্ষেত। দাউদকান্দি উপজেলার বিভিন্ন নদীর দীর্ঘ ১৫ কিলোমিটার চরে ৫ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে বছরে প্রায় ৮ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি খিরা উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য ২ কোটি টাকারও বেশি। অনেকেই চরে খিরা চাষের দিকে আগ্রহ বেশি।
দাউদকান্দি উপজেলার গঙ্গাপ্রসাদ, বাহেরচর, হাসনাবাদ, গোলাপেরচর, চেঙ্গাকান্দি, নয়াহাসনাবাদ, দুধঘাটা, উপজেলা ছাড়াও মেঘনার লুটেরচর, সাতঘরিয়ারকান্দি, দড়িলুটেরচর, মোহাম্মদপুর, রামপ্রসাদেরচর, টিটিরচর, সোনারচর, শেননগর, অনেক চাষি দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ৭’শ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে বীজ কিনে আনে। অনেক চাষী নিজেই উৎপাদন করা বীজে চাষ করে। শীতকালে কানি প্রতি খিরা হয় ২০/২২ মন। গরমে এর উৎপাদন কমে আসে। এ সময়ে কানি প্রতি ৭৬/৮ মন খিরা উৎপাদন করা যায়, বিঘা প্রতি খরচ হয় ৩ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে লাখ হয় ৩/৪ হাজার টাকা। বস্তা প্রতি বিক্রি হয় ৩/৪শ টাকা। এ খিরা বিক্রিতে স্থানীয় দাউদকান্দি বাজারও দাউদকান্দি নতুন ফেরিঘাট সকাল সন্ধ্যা খিরা বাজার বসে। এখান থেকে ট্রাক ও বিভিন্ন যানবাহনে দেশের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা এই বাজারগুলোতে এসে খির পাইকারী দরে বিক্রি করে নিয়ে তারা বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে থাকেন। দাউদকান্দিও মেঘনা উপজেলার খিরা চাষের জীবিকা নির্ভর করে প্রায় ৪৫ গ্রামের মানুষ। এ এলাকার সিংহভাগ মানুষের জীবন জীবিকাই চরগুলোতে খিরা চাষকেন্দ্রিক হয়ে গেছে।
গঙ্গাপ্রসেদ এলাকার আব্দুল হালিম বলেন, এখানকার চরগুলোতে খিরা চাষ শুরু হয় সম্ভবত ১৯৩৮ সালের দিকে। আমি তখন ছোট। বাবা চরে খিরা ক্ষেত করে দাউদকান্দির বাজারে নিয়ে বিক্রি করতেন। এখন আমরাও করি। দুধগাটা গ্রামের আয়েত আলী বাবার পেশার সূত্র ধরে চরে ক্ষীরা চাষের দিকে জড়িয়ে পরেছেন। তিনি বলেন, চরে খিরা ক্ষেত করে আমরা অভাবী মানুষ দু’বেলা খাবার জোটাতে পারছি। এইডা আমাগো সুখ। আরেক কৃষক চরবাউইসা গ্রামের আব্দুল মান্নান বলেন, আমার বাবাও খিরা চাষ করতেন। আমি মনে করি খিরাচাষ আমাদের পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য। আর যাই হোক ক্ষেত করে দুই বেলা পেট ভরে খেতে পারছি। বড়লোক হওয়ার ইচ্ছা আমাদের নেই। চরাঞ্চলের প্রায় ৪৫ এলাকার মানুষ খিরা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।
দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- নারী, পুরুষ ও শিশু খিরা ক্ষেতে কাজে ব্যস্ত। কেউবা খিরা তুলছে, কেউ খিরা বাছাই করছে, আবার কেউবা বস্তায় ভরছে।
মোহাম্মদপুর গ্রামের খিরা ক্ষেতে কথা হয় আছিয়া বেগম সঙ্গে। তার কথা, আমার বাপ গরিব মানুষ। খিরা ক্ষেত কইরা চারটা ডাল-ভাত পেটে দিবার পারি।
দাউদকান্দিও মেঘনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মোট কত হেক্টর জমিতে খিরা চাষ হয়েছে তার পরিসংখ্যান সঠিক ভাবে না বলা গেলেও বিভিন্ন সূত্রে জানাযায়, দুটি উপজেলার ১৫ কিলোমিটার নদীর চর ছাড়াও অন্যান্য জমিতে প্রায় ৫ হাজার ৪২০ হেক্টরে এ খিরা চাষ হয়েছে। মোটামুটি খিরার ফলন ভালো হলে ৮ হাজার মেট্রিক টনেরও বেশি খিরা উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যার বর্তমান বাজার দর মূল্য ২ কোটি টাকারও বেশি। এই মৌসুমি খিরার চাষ করে প্রায় শতাধিক পরিবার স্বাবলম্বী হচ্ছে বলে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানাযায়।