সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ ।। কুমিল্লা নগরীতে বৃষ্টির পানিতে সৃষ্টি হয় যানজট ও জলাবদ্ধতা। পানিতে ডুবছে রাস্তাঘাট, বাসা-বাড়ি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতেও পানি প্রবেশ করায় শিক্ষার্থীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। রবিবার সকালে সামান্য বৃষ্টির বর্ষণে এই জলাবদ্ধতা দেখা দেয় নগরীর অধিকাংশ এলাকাতে। ফলে নগরবাসীর দূর্ভোগ ছিল চরমে।
রোববার দুপুর সোয়া ২টায় নবাব ফয়জুন্নেছা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়েয়ে গিয়ে দেখা যায়, এক দিকে স্কুলের সামনে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে আর অপর দিকে , যানজটে এক নাকাল অবস্থার মধ্যে পড়েছে স্কুলের ছাত্রী,শিক্ষক ও অভিভাবকরা। আর নগরীর অন্যান্য পথচারীরা তো দূর্ভোগে ছিলেনই। এ সময় ছবি তুলতে গেলে এক অভিভাবক বেশ ক্ষোভের সাথে বলেন, ছবি তুলে কি হবে। মেয়র আসে, মেয়র যাবে কিন্তু কুমিল্লার মানুষকে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিতে পারছেন না কেউ।
সরেজমিনে নগরী ঘুরে দেখা যায়, গতকালকের বৃষ্টিতে নগরীর অধিকাংশের বেশি এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় স্কুল কলেজ ছুটি থাকায় ছাত্র,ছাত্রী , শিক্ষক ও অভিভাবকদের দূর্ভোগ ছিল সীমাহীন। এ সময় হাঁটু থেকে হাটু সমান পানিতে বন্দি হন কর ভবন, আদালত রোড, স্টেডিয়াম এলাকা, রেইসকোর্স, হাউজিং এস্টেট, চাঁনপুর, কান্দিরপাড়( নজরুল এভিনিউ), থিরাপুকুর পাড়, নবাব ফয়জুননেছা স্কুল, কুমেক হাসপাতাল, বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
অনেক বাসার ভেতরে হাঁটুপানি ওঠায় চরম দুর্ভোগে পড়েন বাসিন্দারা। রাস্তাঘাটে পানি থাকায় দেখা তীব্র যানজট। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা বের হয়েই পানিতে হেঁটে যাচ্ছে কাপড় ভিজিয়ে। এতে তাদের স্বাস্থ্যর ঝুঁকিও দেখা দিতে পারে মন্তব্য করেছেন নগরীর সচেতন অভিভাবক বৃন্দ।
নাদিয়া মডার্ন স্কুলের শিক্ষার্থী। সে স্কুল ছুটি শেষে বাসায় ফিরতে পারছে না। কারণ, রাস্তায় জলাবদ্ধতার কারণে না পারছে হেঁটে যেতে আবার তীব্র যানজটের কারণে না পারছে রিক্সায় উঠতে।
আরেক শিক্ষার্থী রোকসানা বলেন, আমার সকল কাপড়চোপড় পানিতে ভিজে গেছে। পানিতে আমার জুতাও ভিজে গেছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সাগরের জলবায়ু চাপের প্রভাবটি কুমিল্লায় আরও কয়েকদিন থাকবে। এখন ১০/১১ মি: বেগে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এই বৃষ্টিপাতের পাশাপাশি দমকা হাওয়া প্রবাহিত হচ্ছে।
শাহিন নামের এক বাসিন্দা বলেন, নগরীর এই জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটিকর্পোরেশনের পূর্বেও কোনো পদক্ষেপ দেখিনি। এখনকার মেয়র মহোদয়ের কার্যক্রমও চোখে পড়েনি। রাস্তাঘাট, ড্রেন, কালভাট গুলোতে পানি জমে আছে। সিটিকর্পোরেশন পদক্ষেপ নিলে জলাবদ্ধতা নিরসন সম্ভব।
শাকিল নামের এক বাসিন্দা বলেন, জীবিকার তাগিদে রাস্তায়তো বের হতে হচ্ছে। তাঁর মাঝে রাস্তায় পানি জমে আছে। এই পানিতে অনেক ময়লা-আবর্জনা ভাসমান রয়েছে। দ্রুত এই পানি নিষ্কাশনের জন্য প্রশাসনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। নগরীতে যানজটের কারনে এমনেই নগরীর মানুষ অস্থিরতায় আছে। আর এখন বৃষ্টির কারনে রাস্তাঘাট গুলো পানিতে জমে আছে। এখন যেভাবে বৃষ্টি পড়ছে আরও কয়েকদিন এভাবে পড়তে থাকলে মনে হয় ঘরে ও থাকা যাবেনা।
আসলাম নামের এক বাসিন্দা বলেন, ড্রেনে ময়লা জমে থাকায় পানি যেতে পারছেনা। এই পানি নিষ্কাশনের কোনে পদক্ষেপ কেউ নিচ্ছেনা।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী সফিকুল ইসলাম বলেন, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহন করার কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। কিছু কিছু ড্রেনে পলিথিন আটকিয়ে থাকার কারনে জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাত বলেন, এই জলাবদ্ধতা বেশিক্ষণ থাকবেনা। হয়তো বৃষ্টি কমলে সকল পানি নিষ্কাশন হয়ে যাবে। বৃষ্টির পানির কারনে কিছুটা যানজট ছিল এখন তা নেই। নগরীতে যানজটের জন্য কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।