শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


কুমিল্লায় গোল আলুর জমি দখল করছে সরিষা !


আমাদের কুমিল্লা .কম :
23.01.2023

সোহাইবুল ইসলাম সোহাগ ।। অনেক লোকসানের কারণে আলু চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে সরিষা চাষে ঝুঁকছেন কুমিল্লার অঞ্চলের কৃষকরা।অল্প জমিতে কম পরিশ্রম করেই খরচের প্রায় দ্বিগুণ লাভ থাকায় ভাগ্য বদলাতে সরিষাকেই বেছে নিয়েছেন কৃষকরা। ফলে এবার চলতি মৌসুমে গোল আলু নয় সরিষা চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। গেল বছর যে জমিতে কৃষকরা গোল আলু চাষ করেছেন এবার সেখানে সরিষা চাষ করা হচ্ছে। যার কারণে এবার জেলায় গোল আলু চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কুমিল্লা।
কুমিল্লার কৃষি বিভাগ বলছে, সরিষা একটি শস্য বিন্যাস অনুসরণ করে চাষাবাদ করলে উৎপাদন বাড়ার পাশাপাশি লাভেরও নিশ্চয়তা পাওয়া যায়।আর আলুর চাষে অনেক ব্যয় হওয়াতে তারা একই জমিতে আলুর চাষ না করে সরিষা চাষ করে লাভবান হচ্ছে।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর বলছে, গত বছর কুমিল্লায় গোল আলু আবাদ হয়েছে ১০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে।আর তা কমে এ বছর আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ৭৪৩ হেক্টর জমি। কিন্তু এ পর্যন্ত বাজারে আলুর দাম না থাকায় কৃষক এর চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।তবে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে কুমিল্লাতে একটু কম হচ্ছে আলুর চাষ।
জানা গেছে, আলুর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কুমিল্লার চাষীরা গত কয়েক বছর ধরে সরিষা চাষের দিকে ঝুঁকছেন।প্রথমে বিনা ধান-৭, এরপর বিনা সরিষা-৭ এবং সবশেষে বোরো ধান- এই শস্য বিন্যাস অনুসরণের মাধ্যমে সরিষার চাষ করে খুব কম সময়ে ভালো ফলন পাওয়ায় আশাবাদী কৃষকরা।
আমন মৌসুমে আষাঢ় মাসে আগাম জাত বিনা ধান-৭ এর চাষ করে আশ্বিনের শেষ দিকে কর্তন করে সাফল্যজনক ভাবে বিনা সরিষা-৭ চাষ করা যায়।সরিষা কর্তন করে স্বাভাবিকভাবেই করা যায় বোরো ধানের চাষ।এতে আমন এবং বোরো ধানের ফলনও ভাল হয়। বিনা সরিষার একর প্রতি ফলন ২৮ মন এবং গড় ফলন হয় ২২ মন।প্রতি মণ সরিষা দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা বিক্রি হওয়ায় চাষীরা প্রতি একরে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন।
তিন বছর আগেও নিয়মিত আলুর চাষ করতেন কুমিল্লার সদর দক্ষিণ গলিয়ারার শ্রীপুর গ্রামের কৃষক আনু মিয়া। তবে কয়েক বছর লোকসান ও বেশী পরিশ্রমের কারণে শুরু করেন সরিষার চাষ। গত দুই বছর ধরে সরিষায় ঘুরেছে তার ভাগ্য।
গত আট বছর ধরে আলুর পাশাপাশি সরিষার চাষ করছেন জানিয়ে আদর্শ সদর উপজেলার পাঁচথুবী ইউনিয়নের শরীপুর এলাকার কৃষক মনির বলেন, ‘‘গত কয়েক বছর ধরে বাজারে সরিষার দাম ভাল থাকায় এবার আমি চার বিঘা জমিতে হাইব্রিড-৭ জাতের সরিষা চাষ করেছি।এ পর্যন্ত আমার খরচ হয়েছে ৮৫ হাজার টাকা। আশা করছি খরচ বাদ দিয়ে আমার দেড় থেকে দুই লাখ টাকা লাভ হবে।

আলু চাষের চেয়ে সরিষায় খরচ কম জানিয়ে চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কনকাপৈত ইউনিয়নের বশকরা গ্রামের কামাল উদ্দিন বলেন, ‘‘আড়াই বিঘা জমিতে দেশি সরিষার চাষ করতে এখন পর্যন্ত আমার ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।আবহাওয়া ঠিক থাকলে ৮০ থেকে ৮৫ মণ সরিষা উৎপাদন হইবো।আমার খরচের চেয়ে তিনগুণ বেশি লাভ হবে বলে আশা করছি।
অন্যদিকে চাষিরা গত পাঁচ বছর ধরে প্রতি মণ সরিষা বিক্রি করেছেন এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকায়।আর আলুর মণ বিক্রি হয়েছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা।এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে এ বছর তেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সরিষার মন ২৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা হবে।
আঞ্চলিক কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে,এ বছর আলুর আবাদ চান্দিনায় হয়েছে ৮৩০ হেক্টর,দেবিদ্বারে ১৯৮০ হেক্টর,মুরাদনগরে ৪৬০ হেক্টর,দাউদকান্দিতে ৩৩৭৫ হেক্টর,হোমনায় ৫০০ হেক্টর,আদর্শ সদরে ১৫০ হেক্টর,বুড়িচং ৯৭০ হেক্টর,বি-পাড়ায় ১৩০ হেক্টর,চৌদ্দগ্রাম ২৩৫ হেক্টর, লাকসাম ১২ হেক্টর,নাঙ্গলকোট ৬৬ হেক্টর,বরুড়া ২৭৫ হেক্টর,মেঘনা ৩০৫ হেক্টর,তিতাস ১৭০ হেক্টর,মনোহরগঞ্জ ৫ হেক্টর,সদর দক্ষিণ ১৫০ হেক্টর,লালমাই ১৩০ হেক্টর।
কুমিল্লা আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান জানান,চলতি বছর কুমিল্লা অঞ্চলে সরিষা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে অনেক বেশী। কারণ, চাষীরা আগে যারা গোল আলু চাষ করতো এবার অনেকেই সেখানে সরিষা চাষ করছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সরিষায় খরচ কম আর লাভ বেশি। অন্যদিকে গোল আলু থরচের তুলনায় লাভ কম। তাই গোল আলুর জায়গায় দখল করে এগিয়ে যাচ্ছে সরিষা।