স্টাফ রিপোর্টার ।। কোথাও বন্যায় বিধ্বস্ত সড়ক। কোথাও আবার অতিবৃষ্টিতে সড়কের ইট, খোয়া, পিচ উঠে যেন ছোটখাটো পুকুরে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ সড়ক ভেঙে কঙ্কালে রূপ নিয়েছে। বৃষ্টিতে এসব সড়কের গর্তে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। কুমিল্লা নগরী থেকে বিভিন্ন উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত এলাকার সর্বত্রই যেন একই চিত্র।
এসব ভাঙা সড়কে চলাচল করতে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়কের পরিসংখ্যানে প্রায় দেড় হাজার কিলোমিটার ভাঙা সড়ক আছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এবং সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আছে প্রায় ১০০ কিলোমিটার।
কিন্তু এসব সড়ক মেরামতে এখনও সিকিভাগ অর্থও বরাদ্দ পাওয়া যায়নি বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, এবারের ভয়াবহ বন্যা এবং অতিবৃষ্টিতে কুমিল্লার ১৭ উপজেলায় এলজিইডির ১ হাজার ৫২৫ কিলোমিটার এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের ১০০ কিলোমিটারের বেশি সড়কের ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি নামার পর ভেসে উঠছে সড়কের ক্ষতচিহ্ন। গ্রামীণ জনপদের কাঁচা সড়ক ও পাকা রাস্তা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সরেজমিন বন্যাকবলিত বুড়িচংয়ের বুড়বুড়িয়া, নানুয়ার বাজার, বেড়াজাল, ভরাসার, ইছাপুরা, কালিকাপুর, ভবানীপুর, মহিষমারাসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে দেখা যায়, সড়কগুলো ভেঙে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। কোথাও সড়কে বিশাল আকৃতির গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। বুড়িচংয়ের ষোলনল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন বলেন, গত ১২ আগস্ট এ ইউনিয়নের বুড়বুড়িয়া এলাকায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় এলাকার অধিকাংশ সড়ক বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। এসব সড়ক মেরামত না করায় জনগণকে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। একই চিত্র দেখা গেছে জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলোতে। এ উপজেলার কয়েকটি সড়ক বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নাঙ্গলকোট-বাঙ্গড্ডা-বাগমারা, বাঙ্গড্ডা-ঢালুয়া সড়কের অবস্থা ভয়াবহ। মনোহরগঞ্জ-শান্তির বাজার, চিতোষী-হাসনাবাদ, তুঘুরিয়া-উত্তর হাওলাসহ লাকসাম, মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোটের প্রায় প্রতিটি সড়কের অবস্থা বেহাল।
সরেজমিন দেখা যায়, মেরামত না করায় কুমিল্লা বাখরাবাদ-কোটবাড়ী সড়কের ১২ কিলোমিটারের অধিকাংশ সড়ক যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ সড়কে ভোগান্তি নিয়েই প্রতিদিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, বিজিবি, মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ক্যাডেট কলেজ, আনসার একাডেমি, সেনানিবাস, ইপিজেড, আদর্শ সদর উপজেলা, হাইওয়ে পুলিশ, পিবিআই, সিআইডি, দুদক, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, বাখরাবাদ গ্যাস অফিসসহ অর্ধশতাধিক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের যানবাহন চলাচল করছে। এ ছাড়া নগরীর কান্দিরপাড়-ধর্মপুর সড়ক, পুলিশ লাইন-রেইসকোর্স, সদর হাসপাতাল-চকবাজার ও আদালত সড়কে দীর্ঘ দিন ধরে ভোগান্তি নিয়ে লোকজন চলাচল করছে।
দেবীদ্বার উপজেলা প্রকৌশলী সবুজ চন্দ্র সরকার বলেন, এ উপজেলার চরবাকর-ভৈষরকোট, ইউসুফপুর-নিউমার্কেট, খলিলপুর-নূরপুর সড়ক, কামারচর-জয়পুর, সুলতানপুর-সাইচাপাড়া, ঘোষঘর-ওয়াহেদপুর এবং রসুলপুর-বুড়িরপাড় পর্যন্ত প্রায় ৮০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
এলজিইডির কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সায়েদুজ্জামান সাদেক বলেন, জেলায় সর্বাধিক এলজিইডির ১ হাজার ১০৪টি সড়কের ১ হাজার ৫২৫ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে। এ জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে ৭০৬ কোটি টাকা। কিন্তু সম্প্রতি বরাদ্দ এসেছে মাত্র ৫৫ কোটি টাকা। বন্যা ও বৃষ্টিতে জেলার ১৭ উপজেলায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার জন্য যে বরাদ্দ এসেছে, তা দিয়ে প্রতি উপজেলায় গড়ে ৩ কোটি টাকার কাজ করা যাবে– যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
সওজ কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, বন্যায় জেলায় সওজের প্রায় ১০০ কিলোমিটার মহাসড়ক ও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্বল্পমেয়াদি মেরামতের জন্য ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে।