শনিবার ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
Space Advertisement
Space For advertisement


কুমিল্লা মহানগর আ.লীগের কার্যালয় এখন মাদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানা


আমাদের কুমিল্লা .কম :
27.12.2024

রুবেল মজুমদার।। কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগ কার্যালয় এখন মাদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানা। ৫ আগস্টের আগে এ কার্যালয় থেকে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের সমস্ত কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো। কাক ডাকা ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নেতাকর্মীদের ভীরে মুখরিত থাকত এ কার্যালয়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন বানচাল করতে ও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নির্মম ভাবে দমনে এ কার্যালয় ব্যাপক ভুমিকা রেখেছে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি আকম বাহা উদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে সাবেক মেয়র ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. তাহসিন বাহার সূচনার নেতৃত্বে। বিএনপি জামায়াত নিধনেও এ কার্যালয় নগরীতে ব্যাপক ভুমিকা রাখে। ৫ আগস্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতন হলে বিক্ষুদ্ধ ছাত্র জনতার রোশানলে পড়ে জেলার প্রভাবশালী এই রাজনৈতিক কার্যালয়টি। ব্যাপক ভাংচুর করে , মালামাল লুট করে জ¦ালিয়ে দেওয়া হয় কার্যালয়টি।
এখন অনেকটা ধ্বংসস্তূপের মতো দাঁড়িয়ে আছে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের কার্যালয়টি। এ যেন এক ‘ছাড়া বাড়ি। পথ শিশু ও ফকির মিসকিনরা এখানে মলমূত্র ত্যাগ করে রেখেছে। পরিত্যক্ত এই পোড়া ভবনটি এখন মাদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিনত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান।
সরেজমিন দেখা গেছে, কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় রামঘাটলায় অবস্থিত কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের কার্যালয় পরিত্যক্ত পোড়া ভবন দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে রাত নামলে পথশিশু আর মাদকসেবীদের আড্ডা চলে। জনশূন্য এ কার্যালয়ের নিচতলা থেকে শুরু করে ৯ তলা ভবনের প্রায় প্রতিটি তলায় একই অবস্থা। যত্রতত্র মলমূত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকায় আশপাশের এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ আগস্টের আগে এ কার্যালয়ে বেশ কিছু কর্মচারী কাজ করতেন। তবে সরকার পতনের পর থেকে আ.লীগ নেতাকর্মীর পাশাপাশি এসব কর্মচারী আত্মগোপনে গেছেন। ফলে তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
জানা যায়, নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় রামঘাটলাস্থ ১০ শতক জমির উপর নির্মাণাধীন এ ভবনে থাকছে আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা। ৯তলা ভবনটিতে আছে মহানগর আ.লীগ, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অফিস, কনফারেন্স হল, মিডিয়া রুম, গেষ্ট হাউজ, নামাজের রুম, ক্যাফেটারিয়া, ইনডোর গেইম স্পট, একাধিক লিফট, সিসি ক্যামেরা, ইন্টারকম, অগ্নি-প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও ওয়াইফাই সুবিধাসহ অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সব সুযোগ। ভবনটিতে আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর মিশেলে ইনডোরে আলোক চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে দেশ ও দলের ইতিহাস। প্রতিটি ফ্লোরের নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের নামে। ভবনের সম্মুখে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর বিশাল প্রতিকৃতি। দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা, গবেষণা, ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণে আধুনিক কার্যালয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করছেন দলের বিভিন্ন পর্যায়ের প্রবীন নেতারা।
২০২১ সালের ২১ অক্টোবর নান্দনিক কারুকাজ ও আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত এ ভবনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এ ভবনের উদ্বোধন করবেন।
আ.লীগের কার্যালয়ের সামনে দিয়ে চলাচল করা এমরান হোসেন নামের এক যুবক বলেন, গত ৫ আগস্টের আগে এ অফিসের সামনে শত শত নেতা কর্মী দেখা যায়। সরগরম থাকতো পুরো অফিস। ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যর্থনে শেখ হাসিনা পদ ত্যাগের পর পরই পুরো অফিসটি ভাংচুর ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এটি একটি ছাড়া বাড়ি। আ.লীগের সকল নেতাকর্মী আত্মগোপন চলে গেছে।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে মহানগর আ.লীগের এক নেতা আলেন, ৫ আগস্টের সরকার পতনের দিন বিকেলে ভবনটি আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে চলে ভাঙচুর ও লুটতরাজ।
যে যার মতো করে কার্যালয়টির বিভিন্ন তলার কক্ষে থাকা মূল্যবান আসবাব, স্টিলের আলমারি, কম্পিউটার, ইলেকট্রিক সামগ্রীসহ সব ধরনের মালপত্র লুট করে নিয়ে গেছে। হাতুড়ি পিটিয়ে খুলে নেওয়া হয়েছে লোহা, স্টেইনলেস স্টিল, দরজা-জানালা। এর পর থেকে ভবনটি পরিত্যক্ত।