শনিবার ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
Space Advertisement
Space For advertisement


যানজটে অতিষ্ঠ কুমিল্লা নগরবাসী


আমাদের কুমিল্লা .কম :
01.01.2025

শামছুল আলম রাজন।। কুমিল্লা নগরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় থেকে পদুয়ার-বাজার (বিশ্বরোড) এলাকার দূরত্ব প্রায় ৫ কিলোমিটার। এ পথ টি সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়ায় চলাচল করে বেশির ভাগ মানুষ। স্বাভাবিক নিয়মে পথটি পার হতে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট সময় লাগার কথা। কিন্তু তীব্র যানজটের কারণে এই পথটি পার হতে বর্তমানে সময় লাগছে কমপক্ষে ৩০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত। শুধুমাত্র এই পথই নয়- পুরো নগরের অন্যান্য সড়ক গুলোর চিত্রও একই।

সরেজমিনে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নগরের কান্দিরপাড় এলাকায় প্রবেশের তিনটি দিক, সালাউদ্দিন মোড়, চক-বাজার, টমছমব্রিজ, শাসনগাছা, বাদশামিয়ার বাজার, পুলিশ লাইনস, রেইসকোর্স, রানীর- বাজার, রাজগঞ্জ, মনোহরপুর, ঝাউতলা, বাদুরতলা, ধর্মপুর এলাকা, জাঙ্গালিয়াসহ বেশকয়েকটি স্থানে প্রতিনিয়ত যানজট লেগেই থাকে। সকাল ৮টা থেকে রাত অন্তত ৯টা পর্যš Íএসব স্থানে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে থেমে থেমে। যানজটের কারণে কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়ে থমকে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা।

দিন যত যাচ্ছে কুমিল্লা নগরের যানজট সমস্যা ততই প্রকট আকার ধারণ করছে। প্রতিনিয়ত বেড়েই চলা যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন কুমিল্লা নগরবাসী। তাই নতুন বছরে তাদের প্রত্যাশা যানজট মুক্ত হোক কুমিল্লা নগরী।

নগরের বাসিন্দাদের ভাষ্য, ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠা হলেও এখনো নগরের সড়ক গুলোতে শৃঙ্খলা ফেরাতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। সিটি কর্পোরেশনের অব্যবস্থাপনার কারণে বছরের পর বছর ধরে যানজট সমস্যা বেড়ে তীব্র আকার ধারণ করছে।

জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ থেকে শুরু করে নগরের বাসিন্দারা বলছেন, কুমিল্লা নগরে যানজটের প্রধান কারণ অনিয়ন্ত্রিত ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও অটোরিকশা। ইজিবাইক স্থানীয়ভাবে ‘মিশুক’ নামে পরিচিত। বিগত সময়ে সিটি কর্পোরেশন নগরে ৬ হাজার মিশুক ও পায়ে চালিত রিকশা অনুমোদন দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলো। সে হিসেবে নগরের সড়কে ৬ হাজার ধারণ ক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪০ হাজারের বেশি মিশুক-অটোরিকশা। নগরের সড়কে চলাচলের জন্য কোন প্রকার অনুমোদন নেওয়ার প্রয়োজন না হওয়ার কারণে প্রতিদিনই বাড়ছে মিশুক ও অটোরিকশার সংখ্যা। পরিস্থিতিটা এমন হয়েছে যে কেউ চাইলেই, যে কোনসময় নগরের সড়কে মিশুক ও অটোরিকশা নামিয়ে চালাতে পারছে।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩ সালের জুনের মাঝামাঝি সময়ে কর্পোরেশন থেকে এক জরুরি বিজ্ঞপ্তি উল্লেখ করা হয়েছিল- ‘সিটি এলাকায় যানজট প্রকট আকার ধারণ করেছে। এ কারণে নগরবাসী প্রতিদিন দুর্ভোগে পড়ছেন, নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা, প্রভাব পড়ছে অর্থনীতিতে। এ অবস্থায় শপিংমলের পার্কিং খালি করা, সড়ক থেকে ভ্যানগাড়ি ও ফুটপাত থেকে দোকান উচ্ছেদ এবং যানবাহন সীমিত করণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া ১ জুলাই (২০২৩ সালের) থেকে নগরে ৬ সিটের ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা, ইঞ্জিন চালিত রিকশা ও নিবন্ধনহীন যানবাহন চলাচল করতে দেওয়া হবেনা। তবে পাঁচহাজার ব্যাটারি চালিত মিশুক ও এক হাজার পায়ে চালিত রিকশার নিবন্ধন দেওয়া হবে। নিবন্ধনধারী মিশুক ও রিকশায় রং লাগিয়ে দেওয়া হবে। চালু করা হবে মিনিবাসও।’গত বছরের ১ জুলাই থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকরের কথা বলা হলেও দীর্ঘ প্রায় দেড় বছরেও এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। রবং ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে নগরের সড়কে কয়েক হাজার মিশুক ও অটোরিকশা বেড়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো.ছামছুল আলম বলেন, বর্তমানে যানজট সমস্যা তীব্র এটা সত্য। সমস্যা সমাধানে আমরা ট্রাফিক বিভাগকে নিয়ে বৈঠক করেছি। এছাড়া অতীতে যানজট নিরসনে যানবাহন সীমিত করণের যেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিলা- সেটিও আমরা কার্যকর করার চেষ্টা করছি। পাঁচ হাজার ব্যাটারি চালিত মিশুক ও এক হাজার পায়ে চালিত রিকশার নিবন্ধন দেওয়ার জন্য ওই সময় আবেদন ফরম জমা নেওয়া হয়েছিলো- সেগুলোও আমরা যাচাই করে দেখছি। আমরা চেষ্টাকরছি সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে।

কুমিল্লা জেলা পুলিশের ট্রাফিক ইনচার্জ পরিদর্শক কামাল পাশা বলেন, যে যেভাবে পারছে সেভাবে সড়কে মিশুক ও অটোরিকশা নামাচ্ছে। নগরের মালিক সিটি কর্পোরেশন, তাঁরা সিদ্ধান্ত দেবে আর আমরা সেটা বাস্তবায়ন করবো। কিন্তু এখনো সেটা সম্ভব হয়নি। আমরা মতামত দিয়েছি নগরের ২৭টি ওয়ার্ডে ২০০ করে ৫,৬০০ মিশুক ও রিকশার অনুমোদন দেওয়া হোক। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা সর্বোচ্চ ৭ হাজার হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪০ হাজারের বেশি মিশুক ও অটোরিকশা, যা প্রতিদিনই বাড়ছে। তাহলে যানজট সমস্য আমরা দূর করবো কীভাবে?

তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করতে পারে। অনুমোদনের সময় যদি ৫ হাজার টাকা করে নেওয়া হয় তাহলে হিসেব করে দেখেন কত টাকা হয়! এছাড়া প্রতি বছর লাইসেন্সনবায়ন তো থাকবেই। বর্তমানে এতো পরিমাণে মিশুক ও অটোরিকশা হওয়ায় অনেক চালকের মালিক জমার টাকাও ওঠে না। কান্দিরপাড় কেন্দ্রীক সড়কগুলোতে মানুষ যানজটের ভয়ে পায়ে হেঁটে বেশি চলাচল করে।

নগরের হাউজিং এলাকার বাসিন্দা ফয়জুলহক শাহিন বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কুমিল্লা নগরের যানজট সমস্যা অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে। সড়কে গেলেই শুরু হয় দুর্ভোগ। শুধু প্রধান সড়ক গুলোই নয়- গলির ভেতরের সড়কগুলোতেও এখন তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। নতুন বছরে আমাদের একটাই দাবি যানজট মুক্ত কুমিল্লা চাই।

কুমিল্লার ইতিহাস গবেষক আহসানুল কবীর বলেন, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শহর বলা হয় কুমিল্লাকে। প্রাচীনকাল থেকেই কুমিল্লা ছিলো একটি সাজানো-গোছানো শহর। তবে সমন্বিত নগর পরিকল্প নানা থাকার কারণে গত এক থেকে দেড় দশকের মধ্যে কুমিল্লা নগরে যানজট সমস্যা তীব্র আকার ধারণ করেছে। নিয়ন্ত্রণহীন যানবাহনের পাশাপাশি রাস্তাঘাট প্রশস্ত না করে যত্রতত্র অপরিকল্পিত উন্নয়ন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, সড়কের মধ্যে প্রচুর হকার বসা এবং সর্বোপরি সঠিক নগর পরিকল্পনার অভাবে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে নগরের সবচেয়ে বড় সমস্যা যানজট। ২০২৫ সালে আমরা যানজট নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ চাই।