স্টাফ রিপোর্টার ।। স্থবির হয়ে পড়েছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কাজ। গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর বেশিরভাগ ঠিকাদার গা ঢাকা দেওয়ায় রাস্তা-ঘাট ড্রেন কালভার্ট নির্মাণ ও মেরামত কাজ কোথায়ও একেবারে বন্ধ, আবার কোথাও মাঝপথে থমকে আছে। যে কারণে সুফলের জায়গায় নাগরিক ভোগান্তি তৈরি হচ্ছে দিনের পর দিন। যদিও নগর কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুত সময়ের মধ্যে শেষ করা হকে কাজগুলো। কাজের সময় মেয়াদোত্তীর্ণ হলেই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে তারা।
জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের নানামুখী উন্নয়নের জন্য ২০২১ সালে দেড় হাজার কোটি টাকারও বেশি উন্নয়ন বরাদ্দ ঘোষণা করের তৎকালীন সরকার। এই বরাদ্দের আওতায় শুরুতেই সাড়ে ৪০০ কোটি টাকারও বেশি উন্নয়ন কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে। নানান অজুহাতে এক বছর সময় বাড়িয়েও সময় মতো এসব কাজ শেষ করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। মেরামত ও নতুন নির্মাণ কাজে রাস্তাঘাট-ড্রেন কালভার্ট অসম্পূর্ণ হয়ে পড়ে থাকায় ভোগান্তি বাড়ছে দিনের পর দিন।
কুমিল্লা নগরীর মোগলটুলী এলাকার বাসিন্দা সংবাদকর্মী সেলিম রেজা মুন্সী বলেন, ‘হাই স্কুলের পেছন থেকে শুরু করে চৌধুরী পাড়া পর্যন্ত রাস্তা ও ড্রেনের কাজ হচ্ছে প্রায় এক বছর ধরে। একটা বর্ষা পুরো ভোগান্তির মধ্যে গিয়েছে আমাদের। এখনও রাস্তা কাজ থেমে থেমে চলে। এ পথে যান চলাচল বন্ধ। কবে যে এই কাজ শেষ হবে কেউ জানে না। চাইলে চার পাঁচ মাসেও কাজটি শেষ করা যেত।’
নগরবাসীর অভিযোগ, রাজনৈতিক যোগসাজশে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের বেশির ভাগ কাজ ঠিকাদারই ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সমর্থক। ৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের সিটি মেয়র-কাউন্সিলরদের পাশাপাশি গা ঢাকা দিয়েছেন তারাও। ফেলে গেছেন অসম্পূর্ণ রাস্তাঘাট-ফুটপাত-ড্রেন, কালভার্ট।
কুমিল্লা আদালতের আইনজীবী তারিক আনাম বলেন, ‘কে বা কারা পালিয়ে গেছে, কাজ বন্ধ- এসব আমরা মানতে চাই না। আমরা চাই দ্রুত কাজ শেষ হোক। সিটি কর্পোরেশন কীভাবে কাজ শেষ করবে তারা জানে। নগরীর সবগুলো গুরুত্বপূর্ণ সড়কেরই প্রায় একই অবস্থা।’
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ৩০৫ কিলোমিটার নতুন রাস্তার নির্মান কাজের মধ্যে ৪৫ কিলোমিটার কাজ চলমান রয়েছে, ১০৫ কিলোমিটার রাস্তার কাজ এখনও শুরু হয়নি। অন্যদিকে ২০৩ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মান কাজের মধ্যে ৫০ কিলোমিটার চলমান রয়েছে। ৫৩ কিলোমিটার কাজ এখনও শুরু হয়নি। এ ছাড়া বিদেশি উন্নয়ন সংস্থা ও সরকারি বরাদ্দের বেশির ভাগ কাজই নকশা ও পরিকল্পনায় থেমে আছে।
নগরবাসীর অভিযোগ, বিগত সময়ে রাজনৈতিক প্রভাবের কারনে ঠিকাদারেরা কখনোই সময় ও পরিকল্পনা মতো উন্নয়ন কাজ শেষ করেননি। যে কারণে কুমিল্লায় নাগরিক ভোগান্তি লেগে থাকে সব সময়ই।
নাগরিক প্রতিনিধি মাল্টিপার্টি এডভোকেসি ফোরাম-কুমিল্লার সভাপতি বদরুল হুদা জেনু বলেন, ‘বিশেষ ব্যবস্থায় দ্রুত সময়ের মধ্যে উন্নয়ন কাজ শেষ না করা হলে ক্ষোভ বাড়বে নাগরিকদের মাঝে। ঠিকাদাররা কাজে যে দীর্ঘ সময় নেয় বা অনিয়ম করে তা সিটি কর্পোরেশনের আঁতাতেই হয়। সুতরাং এখন যদি কেউ পালিয়ে যায় সেটির দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। আমরা চাই কাজগুলো শেষ হোক।’ প্রয়োজনে ঠিকাদার পরিবর্তন কিংবা প্রকল্প পরিবর্ধনের পরামর্শ দেন তিনি।
এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু সায়েম মজুমদার বলেন, ‘ঠিকাদাররা প্রকাশ্যে না থাকায় কিছুটা স্থবিরতা তৈরি হলেও আগামী তিন মাসের মধ্যে সকল কাজ সম্পন্ন করা হবে। সময়মতো কাজ শেষ না হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থারও বিধান রয়েছে।’
আবু সায়েম আরও বলেন, ‘সাম্প্রতিক বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে কাজে বিলম্ব হয়েছে। তবে আগের কাজগুলো ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শেষ করার জন্য বাড়তি সময় চেয়ে রাখা হয়েছে।’