রবিবার ১৯ †g ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


বর্ষবরণে উদযাপনের যেন শেষ নেই


আমাদের কুমিল্লা .কম :
15.04.2017

পয়লা বৈশাখ, বছরের প্রথম দিন। সূর্য ওঠার আগেই ঘুম থেকে জেগে ওঠা। এরপর লাল-সাদার সমারোহের পোশাক পরে এগিয়ে চলা রমনা পার্কের দিকে। রমনার বটমূলে সমবেত হয়ে সবাই কন্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে গেয়ে ওঠে চীরচেনা সুরে সেই গান ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো…’।

পয়লা বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম দিন। পুরাতন, জরাজীর্ণতাকে দূরে ঠেলে নতুনকে বরণ করে নেয়ার দিন। সমস্ত অশুভ, কুসংস্কার থেকে মুক্ত করে নতুন ভাবে বেঁচে থাকার আত্মপ্রত্যয়ের দিন।

সকাল সকাল আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের বাড়িতে মিষ্টি, পিঠা-পায়েস, নিয়ে যায়। একে অন্যের খোঁজ খবর নেয়। এরপর সবাই একসাথে বের হয়ে ঘুরাঘুরি করে দিনটাকে উদযাপন করে। পয়লা বৈশাখকে ঘিরে ঢাকার বুকে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান পালন করা হয়। বসে বিভিন্ন স্থানে মেলা। রাস্তায় রাস্তায়ও এদিন ছোট ছোট আকারে ভ্রাম্যমাণ মেলা, দোকান বসে।

সকাল বেলা থেকে ঢাকার অধিবাসী সমবেত হতে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে। সকাল নয়টায় বের হয় বিশ্ব ঐতিহ্যে স্বীকৃত মঙ্গল শোভাযাত্রা। এটি চারুকলা থেকে বের হয়ে রূপসী বাংলা হোটেলের পাশ দিয়ে টিএসসি থেকে ঘুরে চারুকলায় এসে শেষ হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা খুব জোরালো করা হয়। মোড়ে মোড়ে পুলিশ, র‍্যাবসহ অন্যান্য বাহিনী সতর্ক পাহারা বসায়।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেয় সর্বস্তরের জনগণ। শিশুরা তাদের বাবা-মায়ের সঙ্গে অংশগ্রহণ করে। বাদ পড়েনি ভিনদেশিরাও। বিদেশিরা আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির পোশাক পরে বাঙালিদের সাথে আনন্দ উল্লাসে মেতে ওঠে। শোভাযাত্রায় বিশাল আকৃতির বাঘ, হরিণ, হাতি, পাখি, পুতুল, অশুভ শক্তি, শান্তির প্রতীক, ফুল, রাজা-রানির মুখোশ, মাছ ও মানুষ আকৃতির নৌকা প্রভৃতির প্রতিকৃতি নিয়ে শোভাযাত্রা করা হয়।

মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নেন সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিক, চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনসহ শিক্ষক, শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গ।

সকাল নয়টায় বের হওয়া র‍্যালি শেষ হয় ১০টার পর। নেচে গেয়ে, ঢাক ঢোলের তালে তালে আনন্দ করতে থাকে শিক্ষার্থীরা। গণমাধ্যম কর্মীরাও আজ অনেক ঝক্কি ঝামেলার মধ্য নিয়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার কাভারেজ দেয়।

মঙ্গল শোভাযাত্রা চলার সময় হেলিকপ্টার থেকে কয়েকবার নববর্ষের শুভেচ্ছা সম্বলিত কার্ড ফেলা হয়। এটি মানুষকে বাড়তি আনন্দ দেয়।

অন্যদিকে রমনায় ঢুকতে দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। কেউ বের হচ্ছেন কেউ বা ঢুকছেন। স্ক্যানার, মাল্টি জোন মেটাল ডিরেক্টর, ডুয়েল ভিউ ব্যাগেজ এক্সরেসহ অন্যান্য নিরাপত্তা সরঞ্জাম দিয়ে তল্লাশি করে প্রত্যেককে ঢুকতে দেওয়া হয়।

রাস্তার অপর পাশে শিশুপার্কে চলছে গণসংগীত পরিবেশন। বাংলাদেশের বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীরের জনপ্রিয় সব গান শ্রোতাদের মুগ্ধ করে।

পয়লা বৈশাখকে ঘিরে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে। কেউ সাইকেল চালিয়ে বিশেষ পোশাক ও ব্যানার নিয়ে কি ছাতা নিয়ে, কেউ বা আবার গাড়িতে পণ্য নিয়ে গান বাজনা পরিবেশনের মাধ্যমে।

তবে যে যায় করুক সেফি তুলতে ব্যস্ত হাত সবার। অধিকাংশ মানুষই বিভিন্ন বিষয়ের সাথে সেলফি তুলছেন। আর গ্রুপ সেলফি তো আছেই। নারীরা শাড়ি পরে মাথায় ফুলের ব্যান্ড দিয়ে সেজেছেন। ছেলেরা পাঞ্জাবিকে বোধ করছে স্বাচ্ছন্দ।

অনেকেই মুখে হাতে আলপনা এঁকে দিচ্ছেন। তবে তার বিনিময়ে বকশিসও গুনতে হচ্ছে। এক প্রকার অনেকে জোড় করেই মুখে আলপনা আঁকার কাজ করছেন। রাস্তায় রাস্তায় লটারি খেলাও চলছে। সাবান, কোমল পানীয় প্রভৃতি লটারির মাধ্যমে বিক্রি করা হয়। বল দিয়ে যে দুরে রাখা কোমল পানীয় ফেলে দিতে পারবে সে সেটা নিতে পারবে। তবে তিনটি রাখা বোতলই ফেলতে হবে। আবার রিং ছুড়ে সাবান, প্রসাধনের উপর পড়লেই সেটি তার।

মোড়ে মোড়ে বিক্রি হচ্ছে খেলনা, বাঁশি, ছাটা। ঢোল, ডুগডুগি, পাখা ইত্যাদি। ডাব, শশা, শরবত বিক্রির জুড়ি নেই। ভিড় যেন কিছুতেই শেষ হয় না। চারিদিক থেকে বেজে চলেছে বৈশাখী গানসহ নানা ধরনের বাঙালি ঐতিহ্যের গান।

সবাই হাসি আনন্দ করে দিনটি পার করছেন। বিশেষ বিশেষ স্থান আজ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। বিনামূল্যে পথশিশু ও অসহায় বঞ্চিতদের আনন্দ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। জাদুঘর, শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা আজ এই সব শিশুদের জন্য উন্মুক্ত। এভাবেই বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে বাঙালি জাতি বরণ করে নিচ্ছে নতুন বছর।