মঙ্গল্বার ৭ †g ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement
  • প্রচ্ছদ » sub lead 3 » মহিউদ্দিন-নাছিরের কর্মসূচি ঘিরে চট্টগ্রামে উত্তেজনা


মহিউদ্দিন-নাছিরের কর্মসূচি ঘিরে চট্টগ্রামে উত্তেজনা


আমাদের কুমিল্লা .কম :
10.04.2017

চট্টগ্রামে দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দিন চৌধুরী পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি দিয়েছেন। সোমবার বিকালের এই দুই কর্মসূচি ঘিরে উত্তেজনা বিরাজ করছে বন্দরনগরীতে।

নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী সোমবার বিকালে নগরীর লালদীঘি ময়দানে সমাবেশ করবেন। অপরদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীরা একই সময়ে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে সমাবেশ করছেন।

সম্প্রতি নগরীতে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র স্থানান্তর নিয়ে লালদিঘী ময়দানে সমাবেশের ডাক দেয় মহিউদ্দিন অনুসারী সোনালী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি। তবে ওই সমাবেশ নিজেই ডেকেছেন বলে সাংবাদিকদের জানান মহিউদ্দিন চৌধুরী।

গত শনিবার নগরীর চশমা হিলে নিজের বাসভবনে পারিবারিক মেজবানে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, চট্টগ্রামের স্বার্থের পরিপন্থী কাজ যেই করুক, সে আমার ছেলে হোক বা আমার বন্ধু হোক, আমার পিতা হোক, আমি প্রতিবাদ করবো।

সমাবেশ থেকে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধিরও প্রতিবাদ করা হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের এই বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। তিনি বলেন, লালদীঘির মাঠের সভা মূলত তিনিই ডেকেছেন। কথা একটাই-অযোগ্য-অথর্ব লোক চট্টগ্রামবাসী চায় না।

মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগকে তৈরি করেছি। চট্টগ্রামে রাজনীতির ক্ষেত্র তৈরি করেছি। আজ যে যা ইচ্ছা তাই করে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চক্রান্ত করছে। আমি বঙ্গবন্ধুর কর্মী। অন্যায়কে জীবনে প্রশ্রয় দিইনি। আগামীতেও যারা অন্যায় করছে, দলের ক্ষতি করেছে তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।

সাবেক মেয়র বলেন, ‘জীবনে নরম কথা বলিনি। কারও কাছে মাথা নত করিনি। লালদীঘিতে আসুন। সেখানে গরম কথা বলব। সমস্ত কিছু নোট করেছি। সেগুলো লালদীঘির ময়দানে ঘোষণা করব।’

চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে লুটপাট চলছে অভিযোগ করে মহিউদ্দিন মেয়র নাছিরকে দায়ী করে বলেন, ‘চট্টগ্রাম অর্থনীতির একটা শ্রেষ্ঠ কেন্দ্র। এটা বিভিন্নভাবে অবহেলিত হচ্ছে। বন্দর নিয়ে লুটপাট করছে চারজন নেতা। এর একজন নাছির সাহেব।’

এ বক্তব্যের পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন চৌধুরী অনুসারীদের মাঝে। তারা একই সময়ে নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে সমাবেশের ডাক দিয়েছেন। নাছির অনুসারী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে মাদক ও সন্ত্রাসবিরোধী এ সমাবেশের ডাক দেয়া হয়েছে।

মেয়র অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ ইছা ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক কার্যকরী সদস্য আবদুল মান্নান ফেরদৌস জানান, সোমবার বেলা ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত আমরা নগরীর ৪১ ওয়ার্ডে সমাবেশ করবো। যারা সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে এবং একই সাথে মাদক, জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীকে সচেতন করার লক্ষ্যে আমাদের নেতা আ জ ম নাছিরের নির্দেশে আমরা এ সমাবেশের ডাক দিয়েছি।

আর পাল্টাপাল্টি এ সমাবেশ নিয়ে দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেই সাথে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে স্থানীয় জনমনেও।

এ ব্যাপারে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মহিউদ্দিন চৌধুরী নগরীর সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। যানজটসহ নানা সমস্যার কারণে ফেব্রুয়ারিতে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি পাথরঘাটা থেকে রাজাখালে সরিয়ে নেয়া হয়। কিন্তু গত মাসে সেটি আগের স্থানে নিয়ে আসেন সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী। এর আগে হোল্ডিং ট্যাক্সসহ নানা কাজে উন্নয়ন কাজে বাধা দেন। বন্দর নিয়েও তিনি সবসময় বলেন।’

আ জ ম নাছিরের ভাষ্য, ‘সিটি করপোরেশন কেবল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গেজেট অনুসরণ করে। হোল্ডিং ট্যাক্স ধার্য করে না। সিটি করপোরেশন আদায়ের এখতিয়ার রাখে মাত্র। করপোরেশনের আয়ের একমাত্র উৎস রাজস্ব। হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় না হলে করপোরেশন চলবে না। উন্নয়ন হবে না। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছেন তিনি (মহিউদ্দিন চৌধুরী)।’

মেয়র বলেন, ‘নিজের স্বার্থ কিংবা চিন্তার বিরুদ্ধে গেলেই মহিউদ্দিন চৌধুরী এমন কথা বলা শুরু করেন। এ পর্যন্ত কতজনকে তিনি বহিষ্কার করেছেন আবার সঙ্গে নিয়ে ভাতও খেয়েছেন। সমালোচনা করেছেন আবার হিরোও বানিয়েছেন এর রহস্য কেবল তিনিই জানেন।’ লালদিঘী সমাবেশে আজ তিনি গরম কথা কী বলেন সেটা দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন বলেন জানান মেয়র।

আ জ ম নাছিরের অনুসারীদের ভাষ্য, চলতি বছরের মার্চে চট্টগ্রাম সফরে এসে বিমানবন্দর সড়কের বেহাল দশা দেখে ক্ষোভ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। মহিউদ্দিনের মেয়াদেই চট্টগ্রামের রাস্তাঘাটের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এরপর থেকেই নগরীর রাজনীতিতে নানা ইস্যুতে আবার সরব হয়ে ওঠেন বর্ষীয়ান নেতা মহিউদ্দিন।

দলীয় সভাপতির প্রশংসাকে কাজে লাগিয়ে মহিউদ্দিন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র রাজঘাট থেকে পুনরায় পাথরঘাটায় নিয়ে আসাসহ নানা ধরনের তৎপরতা বাড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের ভাষায়, লালদিঘীর সমাবেশও তেমনি একটি কর্মসূচি।