শুক্রবার ২৬ জুলাই ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement
  • প্রচ্ছদ » জেলা উপজেলার খবর » কুমিল্লার ১১ আসনের মধ্যে ৮টিতে আ.লীগের সঙ্গে লড়াই হবে আ.লীগের ৮ আসনে আ.লীগের ‘হেভিওয়েট’ ১২ স্বতন্ত্র প্রার্থী, ‘ডুবাতে’ পারেন নৌকাও


কুমিল্লার ১১ আসনের মধ্যে ৮টিতে আ.লীগের সঙ্গে লড়াই হবে আ.লীগের ৮ আসনে আ.লীগের ‘হেভিওয়েট’ ১২ স্বতন্ত্র প্রার্থী, ‘ডুবাতে’ পারেন নৌকাও


আমাদের কুমিল্লা .কম :
24.12.2023

আবদুর রহমান ।। গত ১৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ পেয়েই কুমিল্লার ১৭টি উপজেলা নিয়ে গঠিত ১১টি সংসদীয় আসনের প্রার্থীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন ভোটের মাঠ। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর শেষ পর্যন্ত জেলার ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে শক্ত কোন বিদ্রোহী প্রার্থী না থাকায় ৩টি আসন নিয়ে স্বস্তিতে রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা। বাকি ৭টি আসনে নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ভোটে লড়তে এরই মধ্যে ভোটের মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগেরই হেভিওয়েট ১২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী। এদের মধ্যে ৭ জনের মনোনয়ন বাতিল করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন ও উচ্চ আদালতে আপিল করে তাঁরা প্রার্থীতা ফিরে পেয়েছেন। কুমিল্লার ১১টি আসনে মোট প্রার্থী ৯৩ জন।
প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর ভোটাররা বলছেন- জেলার ১১টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ওই ৮টিতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী নেতারা বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হওয়ায় এই আসনগুলোতে আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটে লড়াইয়ের আভাস দেখতে পাচ্ছেন তাঁরা। ৮টি আসনের ৭টিতেই লড়াই হবে আওয়ামী লীগের নৌকার সঙ্গে দলটির বিদ্রোহীদের। ওই ৮টি আসন হলো; কুমিল্লা- ১ (দাউদকান্দি-তিতাস), কুমিল্লা-২ (হোমনা-মেঘনা), কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর), কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার), কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া), কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি কর্পোরেশন ও সেনানিবাস এলাকা), কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) এবং কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম)। কুমিল্লা-৮ (বরুড়া) আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুল। তবে শেষ পর্যন্ত গত ১৭ ডিসেম্বর তিনি মনোনয়ন তুলে নেওয়ায় এ আসনের নৌকার প্রার্থী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ব্যবসায়ী আবু জাফর মোহাম্মদ সফিউদ্দিন ওরফে শামীম স্বস্তিতে রয়েছেন।
ভোটারদের ভাষ্য- জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থী থাকলেও শক্ত বিদ্রাহী থাকায় ওই ৮টি আসনের মধ্যে ৭টিতেই নৌকার সঙ্গে লড়াই হবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরই। বাকি ৩টি আসনে খুব সহজেই জয়ী হবেন নৌকার প্রার্থীরা। শুধুমাত্র কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনেই নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটের মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট ৪ প্রার্থী। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা শওকত মাহমুদ। আওয়ামী লীগে একাধিক বিদ্রোহী থাকায় ভোটারদের জরিপে কিছুটা এগিয়ে রয়েছেন শওকত। ৮ আসনের বাকি ৭টিতে লড়াই হবে আওয়ামী লীগের মধ্যেই ।
কুমিল্লা- ১ (দাউদকান্দি-তিতাস) আসনে প্রথমবারের মতো নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর। এ আসনে দলটির স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন বাতিল হয় কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ব্যারিস্টার নাঈম হাসানের। শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশে তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে রয়েছেন ভোটের মাঠে। যার কারণে কিছুটা হলেও বেকায়দায় পড়েছেন নৌকার প্রার্থী।
কুমিল্লা-২ (হোমনা-মেঘনা) আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি সেলিমা আহম্মাদ মেরী। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ এবং মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুল আলম। দলের প্রবীণ নেতা আবদুল মজিদের মনোনয়ন বাতিল করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এরই মধ্যে আপিল করে তিনি ফিরেছেন ভোটের মাঠে। মজিদের প্রতীক ট্রাক আর সফিকুলের ঈগল। এ আসনে বিদ্রোহী দু’জনই হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে নেতাকর্মীদের কাছে পরিচিত। তাই শেষ পর্যন্ত এ আসনে জমে উঠতে পারে নির্বাচন।
কুমিল্লা-৩ (মুরাদনগর) আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন। প্রথমে মনোনয়ন বাতিল হলেও এ আসনে শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতের নির্দেশে প্রার্থীতা ফিরে পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার। ঈগল প্রতীক নিয়ে তিনি ওই আসনে যথেষ্ট হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে নেতাকর্মীদের কাছে পরিচিত।
কুমিল্লা-৪ (দেবিদ্বার) আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল। হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে এখানে ভোটের মাঠে রয়েছেন সদ্য পদত্যাগী উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। জেলার মধ্যে এ আসনে ভোটের লড়াই বেশ জমজমাট হবে- এমনটাই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
ঈগল প্রতীকের প্রার্থী আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমার বিজয় হলে তো আওয়ামী লীগেরই বিজয় হবে। এরই মধ্যে চারদিকে গণজোয়ার দেখতে পাচ্ছি। ইনশাল্লাহ আমার বিজয় সুনিশ্চত।
বর্তমান সংসদ সদস্য রাজী মোহাম্মদ ফখরুল বলেন, আমার যৌবনের পুরো সময়টা ব্যয় করেছি দেবিদ্বারের মানুষের কল্যাণে। আশা করছি মানুষ অতীতের মূল্যায়ন করে আমাকেই নির্বাচিত করবে।
কুমিল্লা-৫ (বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া) আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি অ্যাডভোকেট আবুল হাশেম খান। নৌকার মনোনয়ন না দলীয় ৪ জন নেতা এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে মূল তিনজন হেভিওয়েট প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেছিলেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরবর্তীতে নির্বাচন কমিশনে আপিল করে তারা আবারো ফিরেছেন ভোটের মাঠে। তাঁরা হলেন- কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুলকপি প্রতীকের সাজ্জাদ হোসেন স্বপন, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ থেকে সদ্য পদত্যাগ করা কেটলি প্রতীকের এম এ জাহের, একই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাঁচি প্রতীকের জাহাঙ্গীর খান। অপর প্রার্থী হলেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র এহতেশামুল হাসান ভূঁইয়া রুমি। এ আসনে আওয়ামী লীগের ৪ হেভিওয়েট বিদ্রোহী ও বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত শওকত মাহমুদ প্রার্থী থাকায় ভোটের লড়াই জমে উঠতে পারে।
কুমিল্লা-৬ (আদর্শ সদর, সিটি কর্পোরেশন ও সেনানিবাস এলাকা) আসনে নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি। মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আঞ্জুম সুলতানা সীমা। তিনি সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি। ঈগল প্রতীকের প্রার্থী সীমা কুমিল্লার বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আফজল খানের কন্যা। প্রায় চার দশক ধরে আফজল খান পরিবারের সঙ্গে বাহাউদ্দীন বাহারের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলছে। যার কারণে চিরচেনা দুই গ্রুপের মধ্যে ভোটের লড়াইয়ের আভাস দেখতে পাচ্ছেন ভোটাররা।
এ বিষয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেন, নেত্রীর ঘোষণার পর এই নির্বাচন দলীয়ভাবে সবার জন্য উন্মুক্ত। কুমিল্লার মানুষের আগ্রহে আমি প্রার্থী হয়েছি। আশা করি নির্বাচনে জয়ী হব। চারদিকে গণজোয়ার দেখতে পাচ্ছি।
বর্তমান সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার বলেন, রাজনীতির শুরু থেকেই আমি কুমিল্লার মানুষের জন্য সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। ইনশা-আল্লাহ এবারও তারা আমাকেই জয়ী করবে। আশা করছি বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এবারও এই আসন বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে উপহার দেব।
কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য প্রাণ গোপাল দত্ত। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) এ আসনে উচ্চ আদালত থেকে প্রার্থিতা ফিরে পেয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন চান্দিনা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনতাকিম আশরাফ টিটু। ঈগল প্রতীকের প্রার্থী টিটু এই আসনের পাঁচবারের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক ডেপুটি স্পিকার প্রয়াত আলী আশরাফের ছেলে। এখানেও ভোটের লড়াই জমে উঠবে বলে মনে করছেন ভোটাররা।
কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনে সাবেক রেলপথ মন্ত্রী ও বর্তমান এমপি মো.মুজিবুল হক নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। নৌকার মনোনয়ন না পেয়ে এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মিজানুর রহমান। তবে এ আসনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও শক্তিশালী অবস্থানে আছেন মুজিবুল হক এমপি। শেষ হাসি নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা মুজিবুল হকই হাসতে পারেন বলে ভোটারদের মতামত।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো.মুজিবুল হক বলেন, যারা দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ, তাঁরা কখনো দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেতে পারে না। নেতাকর্মীরা সকলে নৌকার পক্ষে মাঠে নেমেছেন।
ফুলকপি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান বলেন, চৌদ্দগ্রামের মানুষ পরিবর্তন চায়। চারদিকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদি।