শুক্রবার ১৭ †g ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


আমার শৈশবের একুশ….. শাহাজাদা এমরান


আমাদের কুমিল্লা .কম :
22.02.2022

ছোট বেলায় এই ভাবেই শহীদ মিনার তৈরী করে শহীদ ভাইদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছিলাম। আমাদের বড় ভাইয়েরা সন্ধ্যার পর থেকেই হারিকেন,কুপি জ্বালিয়ে স্কুলের সামনে শহীদ মিনার তৈরীর কাজ শুরু করত এবং সারা রাত বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষন মাইকে বাজানো হতো। আর আমরা ছোটরা বিভিন্ন বাড়ি বাড়ি গিয়ে নানান রকমের শাকসবজির ফুলসহ যেই ফুলই পেয়েছি নিয়ে এসেছি। গ্রামে তখন ফুল গাছ খুব একটা ছিল না। যাদের ছিল তারা দিতে চাইতো না। তাই নাছির,রনি,মনিসহ আমরা রাতে চুুরি করে ফুল আনতাম। ফুল চুরির জন্য কত বকা যে শুনেছি তার কোন হিসেব নেই। পড়ে উঠানে বসে ডালা তৈরী করে সকালে কলাগাছ দিয়ে বানানো শহীদ মিনারে যেতাম। আমাদের টেঙ্গারচর গ্রামটি ছিল বিশাল বড় । এখন আরো বড় হয়েছে।
সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রভাত ফেরি শুরু হতো পুরো গ্রাম ঘুরে আবার স্কুলের সামনে এসে শেষ হতো। এরপর চলত সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯১ এই পাঁচ বছর আমি উপস্থিত বক্তৃতায় প্রথম হয়েছি। ১৯৯২ সালে গ্রামের কয়েকজন কলেজ ছাত্রও উপস্থিত বক্তৃতায় আমার সাথে প্রতিযোগিতা করল কিন্তু প্রতিযোগিতায় আমি প্রথম হওয়ার পরেও আমাকে দ্বিতীয় ঘোষনা করে প্রথম পুরস্কার দিল। কারণ জানতে চাইলে প্রয়াত আলমগীর মামা ও তার ছোট ভাই শাহিন মামা আস্তে আস্তে বলল, সে তোমার অনেক সিনিয়র। তাই তার ইজ্জ্বতের দিকে চেয়ে তাকে প্রথম ঘোষনা করলেও তোকে তো প্রথম পুরস্কারই দিয়েছি। এরপর থেকে আর কখনো আমার গ্রামে একুশ পালন করা হয়নি। যদিও এখন আমার গ্রামে খুব একটা যাওয়া বা থাকা হয় না। যাই হোক এখন আধুনিক মানের শহীদ মিনার হয়েছে গ্রামে। আয়োজনটা কেমন হয় তা আর এখন জানি না।
আজ ২১ ফেব্রুয়ারি  সোমবার সহকর্মী মাহফুজ নান্টুর পাঠানো কলাগাছ দিয়ে তৈরী শহীদ মিনারটি দেখে ক্ষনিকের জন্য হলেও ফিরে গিয়েছি আমার শৈশবে। যে শৈশব আমাকে প্রতিনিয়ত হাতছানি দিয়ে ডাকে এখনো। কিন্তু শহুরের যান্ত্রিক বাস্তবতায় সাড়া দেওয়া হয়ে উঠে না আর। ধন্যবাদ মাহফুজ নান্টুকে আমাকে কিছুক্ষনের জন্য হলেও শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য।