জাহিদ হাসান নাইম ।। ‘জীবন বাঁচাতে চাই কর্মোদ্যোগ’ বিষয়ক টক শো অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতে কুমিল্লা আল নূর হসপিটালের সৌজন্যে দৈনিক আমাদের কুমিল্লা ও জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল কুমিল্লার জমিনের যৌথ উদ্যোগে এ টক শো অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক, সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক শাহাজাদা এমরানের সঞ্চালনায় ১৪৩ তম পর্বের এই টকশো তে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, হার্ট কেয়ার ফাউন্ডেশন, কুমিল্লা বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি , বিশিষ্ট হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ।
এসময় টকশো তে, হৃদরোগ থেকে মুক্ত থাকার উপায়সহ গুরুত্বপূর্ণ সচেতনতামূলক আলোচনা উঠে এসেছে।
আলোচনার এক পর্যায়ে, অধ্যাপক ডা. তৃপ্তীশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, মানুষের জন্য কিছু করার তীব্র ইচ্ছা থেকেই হৃদরোগ নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কিছু তৈরী করতে চেয়েছিলাম। সেই ইচ্ছা থেকেই, হার্ট কেয়ার ফাউন্ডেশন তৈরী হওয়া। কুমিল্লার মানুষও আমার উপর আস্থা রেখেছিলো। আমার জন্ম টাঙ্গাইলে ও লেখাপড়ার জীবন চিটাগংয়ে কেটেছিলো। পরে, দেশে সরকারিভাবে ইন্টার্নি চালু করার দাবিতে আন্দোলন করেছিলাম ও ৯ দিন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলে কারাবরণ করেছিলাম। পরে, ইন্টার্নি চালু হয়ে সরকারী চাকুরী পেয়েছিলাম। কিন্তু, আমি তখন স্কলারশিপ নিয়ে রাশিয়ায় পিএইচডি করতে চলে যাই। যখন পিএইচডি করে ফিরে আসি তখন সরকারী চাকুরীতে না গিয়ে স্বাধীনভাবে থাকতে চেয়েছিলাম। পরে, ১৯৯৩ সালের দিকে, বন্ধুদের সুবাদে কুমিল্লার একটি বেসরকারী হাসপাতালে বসি। এখনো সেখানেই রয়েছি। হার্ট কেয়ার ফাউন্ডেশনে আমাদের হৃদরোগ নিয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক সেমিনার কিংবা সভা করে থাকি আমরা। দেশে কুমিল্লার বাহিরে হার্ট কেয়ার ফাউন্ডেশনের কোনো শাখা বা প্রশাখা নেই, কিন্তু ভবিষ্যতে এটাকে দেশব্যাপী সাংগঠনিক কাঠামো করার ইচ্ছা রয়েছে। কিন্তু, দেশের বিভিন্ন জায়গায় আমরা হার্ট কেয়ার ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়াও, অতীতে কুমিল্লায় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ছিলো না।
কুমিল্লাতে আমিই প্রথম হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ শুরু করি। এখন কুমিল্লায় ৩০-৩৫জন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তখন থেকেই মানুষকে বুঝিয়েছি বুকে ব্যাথা হলে মেডিসিন কিংবা বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞের কাছে না গিয়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। কুমিল্লায় চিকিৎসা পদ্ধতি আরো অনেক সহজলভ্য হওয়ার সুযোগ ছিলো। কিন্তু, চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবে কুমিল্লা তেমন অগ্রসর হতে পারছে না। আর সেটার কারণ, ঢাকা আমাদের জন্য কম দূরত্বের। কিন্তু, মানুষ এখন আমাদের উপর আস্থা রাখা শুরু করেছে। এখন, অসুস্থ হলে আমাদের কাছেই আসে। হৃদরোগ এখন যেকোনো বয়সেই হয়। আমাদের জীবন পরিচালনার ধরণের কারণে এমনটা হচ্ছে। আমাদেরকে হৃদয় দিয়ে কর্মোদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সহজ খাদ্যাভ্যাস নিজেরা মেনে চললেই হৃদরোগ থেকে দূরে থাকা যাবে। যেমন, তেল চর্বি যুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। জাংক ফুড, কোল্ড ড্রিংক্স পরিহার করবো। তাহলেই হৃদরোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারবে। আমাদেরকে শাক সবজি যুক্ত খাদ্যাভ্যাস করতে হবে। ডায়বেটিকস রোগীর সাধারণদের চাইতে দ্বিগুণ বা তিনগুণ হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশী। আর, কোলেস্টরল ও চিনির সঙ্গে যেহেতু ডায়বেটিকস জড়িত, তাই চিনিকে ত্যাগ করাই উত্তম। এছাড়া, তামাক জাতীয় দ্রব্য পরিহার করাতে হবে। পাশাপাশি, মানসিক দুশ্চিন্তা কিংবা মানসিক চাপ হার্ট অ্যাটাকের কারণ। আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে বায়ু দূষণ। তাই, বায়ু দূষণ সম্পর্কে আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে, বায়ুকে নির্মল রাখতে হবে। এছাড়াও, ভুড়ি বেড়ে যাওয়াও হৃদরোগের একটি কারণ। এরজন্য নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে। আর, আমি জোরদাবি জানাবো আমাদেরকে ভেজাল খাবার ও ভেজাল ঔষধ থেকে দূরে থাকতে হবে। আর ভেজাল ঔষধটা বাজারে কিভাবে আসে সেটা আগে দেখতে হবে। মার্কেটে ঔষধ আসলে, সেটা ডাক্তাররা তখন আর বুঝতে পারে না কোনটি কম মানসম্মত কিংবা কোনটি বেশী মানসম্মত। দায় সবারই রয়েছে। ঔষধ অধিদপ্তর থেকে শুরু করে, ডাক্তার, রোগী সবাই এর জন্য দায়ী। সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে ঔষধ বাজারে আসার আগে সেটা মান তদারকি করতে হবে। ধূমপান ত্যাগ করুন, দৈনিক ৩০ মিনিট হাঁটুন কমপক্ষে আর স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খান, এই তিনটি জিনিস বজায় রাখলে হৃদরোগ থেকে মুক্ত থাকা যাবে। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে জনগণকে সচেতন থাকতে হবে।