স্টাফ রিপোর্টার ।। শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর ভোরে কুমিল্লা নগরীর নানুয়াদিঘির পাড়ে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে তৈরি অস্থায়ী পূজামণ্ডপে প্রতিমার মধ্যে পবিত্র কোরআন পাওয়ার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওইদিন নগরীর চারটি মন্দির ও সাতটি পূজামণ্ডপে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এছাড়া সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্নস্থানে। শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) দুইবছর পূর্ণ হয়েছে ওই ঘটনার।
কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখা ও সহিংসতার ঘটনায় মোট ১২টি মামলা হয়েছিলো কুমিল্লা কোতয়ালিসহ জেলার বিভিন্ন থানায়। ঘটনার পরপরই ওই ১২টি মামলার মধ্যে ৬টির তদন্তের দায়িত্ব পায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), কুমিল্লা। বাকি ৬টি মামলার মধ্যে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই), কুমিল্লা তদন্তের দায়িত্ব পায় ৪টি এবং কুমিল্লা কোতয়ালি মডেল থানা পুলিশ দুু’টি মামলার তদন্ত করে। এরই মধ্যে ওই ১২টি মামলার সবকটিতেই আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) জমা দিয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। এখন প্রতিটি ঘটনার বিচার হওয়ার অপেক্ষায় আছেন কুমিল্লার হিন্দু সম্প্রদায়সহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষজন।
নগরীর নানুয়ার দিঘির পাড়ের ওই পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন ইকবাল হোসেন। ইকবাল নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বিতীয় মুরাদপুর-লস্করপুকুর এলাকার বাসিন্দা। ১২টি মামলার মধ্যে সবশেষ এই মামলাটির চার্জশিট আদালতে দাখিল করেছে সিআইডি।
সিআইডি, কুমিল্লা কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার ঘটনায় মূলহোতা ইকবাল হোসেন ছাড়াও ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মণ্ডপে কোরআন দেখে ৯৯৯ খবর দেওয়া নগরীর মৌলভীপাড়ার ইকরাম হোসেন ওরফে রেজাউল হক, পাশের দারোগাবাড়ির মাজারের সহকারী খাদেম নগরীর উত্তর চর্থা এলাকার বাসিন্দা আশিকুর রহমান ফয়সাল, তার সঙ্গী মো.হুমায়ূন কবির এবং কুমিল্লা সিটির সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচিত মহিউদ্দিন আহমেদ বাবু। বর্তমানে এ মামলায় ইকবাল হোসেন ছাড়া বাকি আসামিরা জামিনে রয়েছেন। আদালতে দেওয়া চার্জশিটে ইকবালসহ এই ৫জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
ইকবালের মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি, কুমিল্লার পুলিশ পরিদর্শক মো. নুরুল হাকিম বলেন, কুমিল্লার পূজামণ্ডপের ঘটনায় মোট ৬টি মামলা তদন্ত করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে সিআইডি, কুমিল্লা। সবশেষ মূল মামলাটিতে ইকবালসহ ৫জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে চলতি বছরের মার্চ মাসে। এই এই মামলাটিতে মোট দু’টি চার্জশিট দেওয়া হয়েছে আদালতে। এরমধ্যে একটি মণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখার ঘটনায় একটি; অন্যটি সন্ত্রাস দমন আইনে। প্রতিটি মামলাই এখন আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। সিআইডি, কুমিল্লার তদন্ত শেষে আদালতে দেওয়া ৬টি মামলার চার্জশিটে মোট ১০৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) খন্দকার আশফাকুজ্জামান বলেন, কুমিল্লার পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন রাখা ও সহিংসতার ঘটনায় মোট ১২টি মামলা হয়েছিলো জেলার বিভিন্ন থানায়। এসব মামলার মধ্যে জেলা পুলিশ ও পিবিআই যেগুলোর তদন্ত করেছে- তার সবগুলোর অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করা হয়েছে। সিআইডি সবগুলো মামলার চার্জশিট দিলে কুমিল্লায় এখন আর কোন মামলা তদন্তাধীন নেই। বর্তমানে সবগুলো মামলা বিচারাধীন পর্যায়ে রয়েছে।