বৃহস্পতিবার ২৮ gvP© ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


চুরির অভিযোগে মেম্বারের নেতৃত্বে গাছের সাথে বেঁধে রাজমিস্ত্রিকে সারা রাত পাশবিক নির্যাতন


আমাদের কুমিল্লা .কম :
11.02.2023

খলিলুর রহমান,দেবিদ্বার ।। কুমিল্লার দেবিদ্বারে চুরির অপবাদ দিয়ে এক রাজমিস্ত্রীকে গভীর রাতে ঘর থেকে তুলে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে পরিবারের লোকদের সামনে অমানবিক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক সাবেক ইউপি মেম্বার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটে বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারী) দিবাগত রাত ২টায় উপজেলার ইউসুফপুর ইউনিয়নের পূর্ব নবীপুর গ্রামের বাহার উদ্দিন সরকার বাড়িতে।
ভিক্টিমের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান পূর্ব নবীপুর গ্রামের মৃত আব্দুল কাদেরের ছেলে মোঃ মামুন (৪০) কে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে বুধবার রাত ২টায় নিজ ঘর থেকে বশির মেম্বারের বাড়িতে তুলে নিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রেখে রাত ভর শারীরিক নির্যাতন শেষে বৃহস্পতিবার সারা দিন একটি ঘরে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন করে। মামুনের পরিবার অনেক আকুতি মিনতি করেও তাকে ছাড়িয়ে নিতে ব্যার্থ হয়। উপরন্ত এ ঘটনা পুলিশকে জানালে জীবন নাশেরও হুমকি দেয় বশির মেম্বার ও তার লোকজন।
অবশেষে মামুনের পরিবার স্থানীয় ইউছুফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকারিয়া ম্যানেজারের নিকট বিচার প্রার্থী হলে বৃহস্পতিবার বিকেলে চেয়ারম্যানের নিজ বাড়িতে এক সালিসে ঘটনার মিমাংসা করে দেন। চুরির প্রমান ছাড়া একজন লোককে চুরির অপবাদে এভাবে মারধর করা ঠিক হয়নি, তাই আহত মামুনের চিকিৎসার জন্য বশির মেম্বারকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পরে ইউপি চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭ টায় মামুনকে তার স্বজনরা দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন।
আহত মামুন জানান, আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি ও আমার ছেলে রাশেদ টাইলস এর কাজ করে। কাজ শেষে ঘরে এসে রাতে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পরি। মেবাইল চুরির ঘটনার বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবোনা। রাত ২টার দিকে বশির মেম্বার তার ছেলে রুবেল, মেহেদি এবং ভাতিজা শামীম, শরিফ ও তাদের অনুসারী ইয়াসিন, কাঠমিস্ত্রী রুবেলসহ আরো কয়েকজন আমার বাড়িতে এসে আমাকে চোর চোর বলে উচ্চস্বরে ডাকাডাকি শুরু করে। পরে আমি দরজা খুললে আমাকে টেনে হেচরে ঘরে থেকে বাহির করে নিয়ে যায়। বশির মেম্বারের বাড়িতে সারারাত আমগাছের সাথে বেঁধে রেখে লাঠিসোঁটা ও পাইপ দিয়ে বেধরক মারধর করেন। সকাল হলে মেম্বারের বাড়িতে একটি ঘরে নিয়ে বেঁধে পাশবিক নির্যাতন করেন। আমি মোবাইল চুরি করেছি তা স্বীকার করার জন্য জুয়েল প্লাস দিয়ে আমার পায়ের নখ তুলে নেয়।
দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেন। রাত ১১ টায় তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহত মামুনের স্ত্রী রাবেয়া আক্তার বলেন, আমরা ঘুমিয়ে ছিলাম এতো রাতে আমার স্বামীকে ঘরে থেকে তুলে নিয়ে চোর অপবাদ দিয়ে মারধর করলো, মেম্বার সারারাত সারাদিন বেধে রাখলো, আমারা আইনের আশ্রয় নিতে চাইলে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন। আমরা গরিব বলে কি কোনো বিচার নেই। আমার স্বামীকে বিনাদোষে চুরির অপবাদে রাতভর গাছের সাথে বেঁেধ বর্বর নির্যাতন চালায়, থানা পুলিশের আশ্রয় চাওয়া দুরের কথা, চিকিৎসা নিতেও দেয়নি। চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় হাসপাতাল এনেছি।
এবিষয়ে ইউছুফপুর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার বশির এর সাথে বার বার মোবাইল ফোনের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
শুক্রবার দুপুরে ইউসুফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকারিয়া ম্যানেজারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, গতকাল (বৃহস্পতিবার ৯ ফেব্রয়ারী) বিকেলে গ্রামবাসীদের নিয়ে সালিসে বসে ঘটনাটি মিমাংসা করে দিয়েছি। মোবাইল চুরি হয়েছে সত্য, তবে মামুন মিয়া চুরি করেছে তার প্রমান পাওয়া যায়নি। তাই বশির মেম্বারকে মামুনের চিকিৎসা খরচ হিসেবে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছি।
দেবিদ্বার থানার অফিসার ইনচার্জ(তদন্ত) খাদেমুল বাহার জানান, এ বিষয়টি (আজ ১০ ফেব্রুয়ারী) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সাংবাদিকদের কাছ থেকে জেনেছি। তবে ভিক্টিমের পক্ষ থেকে কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।