কাতার বিশ^কাপ ফুটবল-২০২২ শুরু ২০ নভেম্বর আর ১৮ ডিসেম্বর তার সমাপ্তি। বত্রিশ দেশ। গ্রুপ পর্বে ৪৮টি খেলা। নক আউট পর্বে ১৫টি খেলা। আজ সেই বিশ^ ফুটবলের সেরা হবার চূড়ান্ত লড়াই। কাতার এর আটটি ষ্টেডিয়ামে এই মহাযজ্ঞের সুচারু আয়োজন। আর্থিক খরচ ব্যবস্থাপনায় এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে এই বিশ^কাপ। প্রায় বার বছর আগে ফিফার বিশ^কাপ আয়োজন এর দায়িত্ব পায় কাতার। আধুনিক সুযোগ সুবিধার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা ছিল-নজর-কড়া। অনেক শংকা, অনেক অপপ্রচার সকল কিছুকেই দক্ষ আর্থিক সয়ম্ভরতায় অতিক্রম করেছে। এই সফলতার জন্য কাতার এশিয়ার দেশ বিধায় আমরাও এশিয়া হিসেবে গৌরবের অংশিজন।
এবার আসা যাক কেমন লাগলো বিশ^কাপ ? নিরপেক্ষ থাকা বৃথা চেষ্টা করেও খেলার আবেগ ও বিনোদন উপভোগ করার জন্য তো কোন না কোন দলকে অবশ্যই দীর্ঘ সময় ধরে সমর্থন করে আসছি। কাংখিত ফলাফল না করতো পারলেও সেই দলের প্রতি কোন বিতৃষ্ণা জমেনি। কেননা আমরা জানি লীগ পদ্ধতি ছাড়া নক আউট পর্বে জয়-পরাজয় একে অপরের খুব কাছের বন্ধু। অর্থাৎ খেলা আমাদেরকে তাৎক্ষনিকভাবে আনন্দ আর বেদনাকে সমানভাবে আলিঙ্গন করার সুযোগ চর্চার পথটি সামনে এনেছে। খেলার এই পদ্ধতি একটা প্রতিকি ব্যবস্থা। কারন আমরা জেনেই ফলাফলের প্রত্যাশার লড়াইয়ে নামছি মাত্র। এটা আমার পক্ষে বা বিপক্ষে যেতে পারে।
কাতার বিশ^কাপ প্রকৃত অর্থে চোখ ধাঁধাঁনো। তবে এই বিশ^কাপে নতুন কোন প্রতিভা উঠে এসেছে, বা কেউ একক নৈপুন্য দিয়ে দর্শকদের মন জয় করতে পেরেছে বলে আমি উল্লেখ করতে পারবো না। অর্থাৎ একটা দল পুরো দলবদ্ধ হয়ে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়েছে। অর্থাৎ ফুটবল যে দল গত ভাবে খেলে দর্শক মন জয় করা যায় এটাই চলমান বিশ^কাপে প্রমানিত হয়েছে।
আরেকটা বিষয় আমার উপলব্ধিতে এসেছে, দেশের চেয়ে ক্লাব ফুটবলে খেলোয়াড়রা অনেক বেশী নিবেদিত। এর অনেক কারন থাকতে পারে-তবে সাদা চোখে অন্যতম কারন হিসেবে আমার বিবেচনায় সেটা হলো অর্থের চাহিদা ও প্রাপ্তি। যার কারনে নিজেকে যতটা উজার করা যায় খেলায়, দেশের হয়ে সম্মানটা অতটা স্পর্শ করে না বলেই আমার মনে হয়। আমার এ ধারনা সর্বাঙ্গীন সঠিক নাও হতে পারে তবে তা বাদ দেওয়া যায় না। এই জন্যই একজন বিশ^কাপ জয়ী কোচ তার মন্তব্যে বলেছিলেন-এখন থেকে জাতীয় দলকে একটা ক্লাব দল হিসেবে বিবেচনা করবো। কেননা যে কোন মওসুমে ক্লাবের মধ্যে যে ঐক্যবদ্ধ চেতনা, আত্মবিশ^াস আর বন্ধুত্ব থাকে সেটা জাতীয় দলে নিয়ে আসার’’।
আজকের ম্যাচ নিয়ে এমন তথ্য দিয়ে শুরু করতে চাই-১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে অনুষ্ঠিত প্রথম বিশ^কাপে প্রথম খেলায় অংশ নিয়েছিল ফ্রান্স বনাম মেক্সিকো। ফ্রান্স আজ খেলবে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে। ১৯৯৮ সালে এবং ২০১৮ সালে চ্যাম্পিয়ন দল ফ্রান্স। গ্রুপ পর্বে দারুণ খেলে-তিউনিসিয়ার সাথে শান্তনার হার। বিশ^কাপ ধরে রাখাই এখন ফ্রান্সের সাফল্য এবং চ্যালেঞ্জ। নিজেদের চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তুলে আনার সামর্থ্য আছে দলটির। দলগত ও ব্যক্তিগত নৈপুন্য যদি একসাথে জ¦লে উঠে তাহলে-বেশ কঠিন প্রতিপক্ষ ফ্রান্স।
১৯৭৮ এবং ১৯৮৬ তে দুবার চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। আর্জেন্টিনা দলটি প্রথম বিশ^কাপের রানার আপ দল। এবারের আগে পাঁচবার বিশ^কাপের ফাইনাল খেলায় অভিজ্ঞতা আছে আর্জেন্টিনার। আর্জেন্টিনা যেমন বিশ^কাপে এই আসরের আগে ৪৯টি ম্যাচ খেলেছে ফ্রান্স ও সমপরিমান ম্যাচ খেলেছে। তবে ম্যাচ জয়ে আর্জেন্টিনার চেয়ে এক ম্যাচ পিছিয়ে। গত ৩৬ বছর যাবৎ বিশ^কাপ জেতার স্বপ্নে বিভোর আর্জেন্টিনা সব ধরনের পজিশনের সেরা ফুটবলার আছে দলে। মেসির শেষ বিশ^কাপ ঘোষিত। এই কারনটা দলের বিশ^াসে শক্তিশালি মাত্রা যোগ করেছে। ছন্দ-বদ্ধ অবস্থায় আর্জেন্টিনা। একটা আকর্ষনীয় ফাইনাল আমাদের হাতছানি দিচ্ছে। জয়-পরাজয় দুটোই ফিফটি-ফিফটি।
ফাইনাল ম্যাচ পরিচালনায় কেন পোল্যান্ডের রেফারী দেওয়া হলো তা আমার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। কেননা গ্রুপ পর্বে পোল্যান্ড ছিল আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ। আবার নক আউট পর্বে প্রথম খেলায় ফ্রান্সের কাছে হার মানে পোল্যান্ড। এটা কি বিবেচনায় দায়িত্ব পেল-দু’শক্রুর বিরুদ্ধে তার খেলা পরিচালনায় কোন আশ্চার্য্যজনক ভূমিকা রাখার পথ তৈরী করে কিনা? যাতে খেলার স্বাভাবিক সৌন্দর্য্য ব্যাহত হবে না তো?
ক্রীড়া সংগঠক ও ক্রীড়া বিশ্লেষক
লেখক : বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ম্যানেজার ও সাবেক সভাপতি, সনাক, কুমিল্লা।