শুক্রবার ২৯ gvP© ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


আজ কুমিল্লা মুক্ত দিবস


আমাদের কুমিল্লা .কম :
08.12.2022

রুবেল মজুমদার ।। আজ ৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার কুমিল্লা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার মুক্ত হয় কুমিল্লা । বাংলার বীর সন্তানদের দাপটে পিছু হটে পালায় পাকিস্তান বাহিনী। দীর্ঘ ৯ মাসের যুদ্ধের পর আবার এ দিন হেঁসে উঠে কুমিল্লা শহর।ভোর হতেই কুমিল্লার আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হয়ে উঠে মুক্তিকামী মানুষের মিছিলে।
নভেম্বরের মাঝামাঝি সময় কুমিল্লায় মুক্তিবাহিনীর চুড়ান্ত অভিযান শুরু হয়। বিবির বাজার, কটক বাজার, নিশ্চিন্তপুর, চৌদ্দগ্রাম, বেলুনিয়া, ইটাল্লা ও মাঝিগাছা,সদর দক্ষিণের বিশ^রোড এলাকায় মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এতে হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে পিছু হঠে।
২৮ নভেম্বর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের জগন্নাথদিঘী এলাকা প্রথম মুক্ত হলে কুমিল্লা বিমান বন্দরের ঘাঁটি থেকে শহরসহ পার্শ্ববর্তী সীমান্ত এলাকার বিভিন্ন স্থানে নির্বিচারে সাধারণ মানুষের উপর নির্যাতন চালায়। পরে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে পাক সেনাদের বিমান বন্দরের ঘাঁটির পতনের পর ৮ ডিসেম্বর বুধবার প্রত্যুষে কুমিল্লা শহরকে মুক্ত ঘোষণা করা হয় ।
কুমিল্লা জেলার মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শফিউল আহমেদ বাবুল বলেন,৮ ডিসেম্বর ভোর রাতে গেরিলা দল কুমিল্লায় প্রবেশ করে বিভিন্ন অপারেশন পরিচালনা জন্য কুমিল্লার বালুতুপায় এসে অপেক্ষা করতে থাকে। বালুতুপা থেকে ৮ মাইল দূরে পাকসেনারা বাংকার ডিফেন্স নিয়েছিল। নবম বেঙ্গলের অল্প সংখ্যক সৈন্য হওয়ায় তারা পাকিস্তানিদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয়নি, পাকিস্তানি সেনাদের পিছনের দিক দিয়ে ৬ ডিসেম্বর কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করে।
কুমিল্লা শহরের পূর্বদিক থেকে ঢুকে নবম বেঙ্গল কুমিল্লা শহরের পশ্চিম দিকে ৭ ডিসেম্বর দুপুর ১২ টার দিকে পৌঁছে যায়। দুপুর বারোটায় ভারতীয় শিখ জাট ব্যাটালিয়ন কমান্ডার টমসনের সঙ্গে আইন উদ্দিনের দেখা হয়। শিখ জাট বাহিনীর ও মুক্তিবাহিনীর কাজ ছিল কুমিল্লা বিমান বন্দর আক্রমণ করা। শিখজাট ব্যাটালিয়ন বিমান বন্দর আক্রমণ করেছিল ৬ ডিসেম্বর রাতে। রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধ হয় সেখানে। এই আক্রমণে শিখজাট ও মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকজন আহত ও নিহত হয়। পাকসেনারা বিমান বন্দর ছেড়ে চলে যায়। মূলত এর মধ্য দিয়ে মুক্ত হয় কুমিল্লা শহর।
৮ ডিসেম্বর কুমিল্লা শহরে জয়বাংলা ধ্বনি দিয়ে প্রবেশ করে শহরের সকল স্তরের মানুষ স্বাধীন বাংলার পতাকা নিয়ে আনন্দে উল্লাসে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বরণ করে নেয়। স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজ পতাকা উড়ায় কুমিল্লার সার্কিট হাউজ, কালেক্টরেট ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে।বিজয় মিছিল এবং শ্লোগানে সমস্ত শহর মুখরিত হয়ে উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়। সে এক অপূর্ব দৃশ্য! বিজয়ের কি যে আনন্দ!।
এদিকে, প্রতি বছরের ন্যায়ে এবারও কুমিল্লায় আজ নানা কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে পালিত হবে কুমিল্লা মুক্ত দিবস । দিবসটি উপলক্ষে সকাল ৯টায় নগর উদ্যান সংলগ্ন বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুস্পস্তবক অর্পণ করবেন কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য আঞ্জুম সুলতানা সীমা, জেলা প্রশাসক মো. মোহাম্মাদ কামরুল হাসান ও পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
জেলাপ্রশাসন ছাড়াও জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, জেলা পরিষদ, সদর উপজেলা পরিষদ, জেলাপুলিশ, এলজিইডি, ফায়ার সার্ভিস সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন যথাযথ ভাবে দিবসটি পালন করবে।
পরে বিকাল ৫টায় মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদ বীরাঙ্গণা ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে টাউনহল প্রাঙ্গণে শিখা প্রজ্জ্বলন ও সন্ধ্যা ৬টায় কুমিল্লা হানাদার মুক্তি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে।