সোমবার ১৮ gvP© ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement
  • প্রচ্ছদ » লিড নিউজ ১ » কাউন্সিলর সোহেলসহ জোড়া খুনের এক বছর  হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে পরিকল্পনাকারীরা


কাউন্সিলর সোহেলসহ জোড়া খুনের এক বছর  হলেও এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে পরিকল্পনাকারীরা


আমাদের কুমিল্লা .কম :
23.11.2022

 

আবদুর রহমান ।। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেল (৫০) ও তার সহযোগী আওয়ামী লীগ কর্মী হরিপদ সাহাকে (৫৫) এলোপাতাড়ি গুলি করে খুনের নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন। দেশজুড়ে আলোচিত এই জোড়া খুনের বছর ঘুরলেও এখনো পেছনে থাকা পরিকল্পনাকারীদের নাম প্রকাশ করেননি তদন্ত সংস্থা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

নিহত সোহেলের পরিবারের দাবি- পরিকল্পনাকারীদের নাম প্রকাশসহ তাদেরকে গ্রেপ্তারে গড়িমসি করা হচ্ছে। অথচ তদন্ত সংস্থাসহ আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা চাইলে অনেক আগেই নেপথ্যের ব্যক্তিরা গ্রেপ্তার হতেন। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে- জোড়া খুনের পেছনে থাকা পরিকল্পনাকারীরা সামনে আসবে কবে? কুমিল্লার রাজনৈতিক অঙ্গনে সবচেয়ে বেশি আলোচিত এই জোড়া খুনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর)।

হত্যাকাণ্ডের শুরুর দিকে থানা পুলিশের পর এই জোড়া খুনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়াকে। ৯ মাসের বেশি সময় মামলাটির তদন্ত করেছেন তিনি। তবে গত ১৫ সেপ্টেম্বর মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান জেলা ডিবি পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা  রাজেশ বড়ুয়া। বর্তমানে মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক শরীফ আলমকে। বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তার ভাষ্য- শিগগিরই পরিকল্পনাকারীদের নামসহ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করবেন তিনি।

আলোচিত এই জোড়া খুনের ঘটনার শুরু থেকেই নিহত সোহেলের পরিবারের সদস্যরা বলে আসছেন, পেছন থেকে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ইন্ধন দিয়ে এবং অর্থ ও অস্ত্রের যোগান দিয়ে হত্যাকাণ্ড বাস্তবায়ন করিয়েছে। তবে শুরুতে বিষয়টি মানতে নারাজ হলেও ঘটনার ৬ মাস পর মামলাটির আগের তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মঞ্জুর কাদের ভূঁইয়া এ প্রতিবেদককে বলেছিলেন- তদন্তে হত্যাকাণ্ডের পেছনে কেউ আছেন বলে জানতে পেরেছেন তিনি; তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত সময়ের মধ্যে পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। তবে এই তথ্য দেওয়ার ৬ মাস পার হলেও এখনো নেপথ্যের ব্যক্তিরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহতদের পরিবার ও স্থানীয় এলাকাবাসী।

গত বছরের ২২ নভেম্বর নগরীর পাথরিয়াপাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজে কাউন্সিলর কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন তৎকালীন কাউন্সিলর সোহেল ও তার সহযোগী হরিপদ সাহা। কাউন্সিলর সোহেল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। নিহত হরিপদ সাহা নগরীর ১৭নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সাহাপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

জোড়া খুনের ঘটনার পরদিন ২৩ নভেম্বর রাতে কাউন্সিলর সোহেলের ছোট ভাই সৈয়দ মো. রুমন বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮ থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এছাড়া আলোচিত এই জোড়া খুনের সাতদিন পর পুলিশ জানিয়েছিলো- সোহেল ও হরিপদকে গুলি করে হত্যার সময় হিট স্কোয়াডে ছিলেন ৬ জন সন্ত্রাসী। এঁদের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন মামলার প্রধান আসামি শাহ আলম, তিন নম্বর আসামি সাব্বির সোহেল ও পাঁচ নম্বর আসামি মো.সাজন। আর মামলার ২ নম্বর আসামি জেল সোহেল, এজাহারবহির্ভুত পিচ্চি নাজিম ও অস্ত্র সরবরাহকারী রিশাত স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে এখন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। এই জোড়া খুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট সাতজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এছাড়া এই মামলায় এখন পর্যন্ত এজাহারনামীয় সাতজন ও সন্দেহভাজন পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে থানা পুলিশ, ডিবি পুলিশ ও র‌্যাব।  আর এখনো পলাতক রয়েছেন ১১ নম্বর আসামি রনি। তবে বর্তমানে মামলার কয়েকজন আসামি জামিনে রয়েছেন বলে জানা গেছে।

সোমবার (২১ নভেম্বর) দুপুরে মামলার তদন্তের অগ্রগতির সম্পর্কে জানতে চাইলে বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা জেলা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক শরীফ আলম বলেন, ‘আমাদের তদন্তের কাজ প্রায় শেষ। ঘটনার পর উদ্ধার হওয়া সিসিটিভি ফুটেজগুলো পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। সেটির রিপোর্ট এখনো হাতে পাইনি। তবে এইটুকুই বলতে পারি- হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী একাধিক ব্যক্তি। তাদের বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। সব কিছু শেষ হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে। খুনের নেপথ্যে থাকা ব্যক্তিরা ও সরাসরি অংশ নেওয়া সকলের নামই চার্জশিটে যাবে।’ তবে পরিকল্পনাকারীদের নাম-পরিচয়সহ বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি তিনি।

শরীফ আলম আরও বলেন, আমর পূর্বের তদন্ত কর্মকর্তা মামলাটির তদন্তে ভালো অগ্রগতি এনেছেন। এরই মধ্যে হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের অভিযানে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র এবং হতাহতদের শরীরে লাগা গুলির ব্যালেস্টিক রিপোর্ট হাতে এসেছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনও পাওয়া গেছে। ব্যালেস্টিক রিপোর্টে উদ্ধার হওয়া পিস্তলের সঙ্গে গায়ে লাগা গুলি ম্যাচিং করেছে।

বছর ঘুরলেও পেছনে থাকা ব্যক্তিরা এখনো সামনে না আসায় হতাশার প্রকাশ করেছেন কাউন্সিলর সোহেলের ছোট ভাই ও মামলার বাদী সৈয়দ মো. রুমন। তিনি বলেন, খুনের ১ বছর হয়ে গেল অথচ এখনো পেছনের মূলহোতাদের নামটা জানতে পারলাম না। এটা শুধু আমরাই নয়, পুরো কুমিল্লাবাসীর জন্য দুঃখজনক ঘটনা। অথচ পুলিশ চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সকল পরিকল্পনাকারীকে গ্রেপ্তার করতে পারে। খুনিরা যেভাবে হত্যার মিশন বাস্তবায়ন করেছে, সেটা থেকেই বোঝা যায় তাদের পেছনে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা রয়েছে। আমরা চাই দ্রুত পেছনে থাকা পরিকল্পনাকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক এবং তাদের নাম প্রকাশ করুক তদন্ত সংস্থা।

নিহত কাউন্সিলর সোহেলের একমাত্র ছেলে হাফেজ সৈয়দ মো.নাদিম বলেন, পরিকল্পনাকারীদের নাম-পরিচয় জানতে আমরা আর কত অপেক্ষা করবো? খুনের পরিকল্পকারীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে, এজন্য আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। শুধু আমাদের পরিবারই নয়, কুমিল্লা নগরীর সর্বস্তরের মানুষ জানতে চায়- কারা অর্থ ও ইন্ধন দিয়ে এই জোড়া খুন করিয়েছে।