শুক্রবার ১৯ GwcÖj ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


জনবল সংকটে ধুকছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড


আমাদের কুমিল্লা .কম :
13.11.2022

রুবেল মজুমদার ।। জনবল সংকটে ধুকছে দেশের প্রাচীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কুমিল্লা। ১৯৬২ সালে যে জনবল নিয়ে বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল, এখন সেই সংখ্যা অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। কিন্তু কাজের পরিধি বাড়ছে দ্বিগুণ। নতুন নিয়োগ না হওয়ায় কাজের পরিধি বাড়লেও বাড়েনি গুণগত সেবার মান। ব্যাহত হচ্ছে বোর্ডের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডও।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম বিভাগের ১৫টি জেলার ২৭টি কলেজ এবং ৫৩২টি মাধ্যমিক স্কুল নিয়ে ১৯৬২ সালে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কুমিল্লা স্থাপিত হয়। এরপর এই বোর্ড ভেঙে চট্টগ্রাম এবং সিলেটে পৃথক দুটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড স্থাপিত হয়। বর্তমানে কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, ফেনী ও লক্ষীপুর- এই ৬টি জেলার এই বোর্ডের অধীন ৫৩২টি মাধ্যমিক স্কুল এবং ৪২৬টি কলেজের কার্যক্রম চলছে।
বোর্ডের কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে জনবল সংকট বর্তমানে চরমে পেঁৗঁছেছে। বোর্ডের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে ২১৯টি পদের মধ্যে শূন্য পদ রয়েছে ১৫১টি, যা অর্ধেকেরও কম। দীর্ঘদিন ধরে লোকবল সংকটের মধ্যে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। এতে সময় মতো সেবা পাচ্ছে না বোর্ডের অধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৯ নভেম্বর) সরেজমিনে বোর্ডে গিয়ে দেখা যায়, শারমিন আক্তার নামে এক শিক্ষার্থী নোয়াখালী থেকে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এসেছেন নিজের নাম সংশোধন করতে। সকাল ১১টা থেকে বোডের্র বিভিন্ন কক্ষে ঘোরাঘুরি করেও তিনি কাজ শেষ করতে পারেননি। পরে তাকে জানানো হয় আগামী রোববার আসতে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করে শারমিন আক্তার বলেন, ‘নাম সংশোধনের জন্য এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে আছি। এখন বলা হচ্ছে আগামী রবিবারে আসতে। এত দূর থেকে বারবার আসা আমাদের পক্ষে কীভাবে সম্ভব? সময় এবং টাকা উভয়টাই অপচয় হচ্ছে।’
বোর্ড সূত্র জানায়, ১৯৮৪ সালের পর অনেক বছর ধরে লোকবল নিয়োগ না দেয়ায় এবং কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা অবসরে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডের সচিব নূর মোহাম্মদ বলেন, বর্তমানে শিক্ষাবোর্ডে ১৫১টি পদ শূন্য রয়েছে। শূন্য পদগুলোর ৬৮টি নিয়োগযোগ্য প্রাপ্ত এবং ৮৩টি পদোন্নতি যোগ্য। প্রথম শ্রেণির অনুমোদিত পদের সংখ্যা ২৪টি, যার মধ্যে কর্মরত ১৯ জন। দ্বিতীয় শ্রেণির ১৯টি পদের মধ্যে ১৩টিতে জনবল রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণির ১১৫টি পদের মধ্যে কর্মরত পদের সংখ্যা মাত্র ১৩। চতুর্থ শ্রেণির ৬১টি পদের মধ্যে ২৩টিতে কর্মরত জনবল রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, প্রথম শ্রেণির পদগুলোর মধ্যে অডিট অফিসার, তথ্য কর্মকর্তা, ক্রীড়া কর্মকর্তা, সহকারী মেইনটেনেন্স ইঞ্জিনিয়ারের ১টি করে পদ শূন্য। দ্বিতীয় শ্রেণির পদের মধ্যে সহকারী সচিব, সহকারী ক্রীড়া কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মকর্তা, সহকারী গ্রন্থাগ্রারিক, উপসহকারী প্রকৌশলী ও ডাটা এন্ট্রি কম্পিউটার অপারেটরের পদ শূন্য রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানান, তথ্য, ক্রীড়া, নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও সহকারী গ্রন্থাগারিকের পদ শূন্য থাকার কারণে বোর্ডের সার্বিক কাজের উপর চাপ পড়েছে। একজন উপসচিব একাডেমিক ও জনপ্রশাসন দীর্ঘদিন ধরে ভারপ্রাপ্ত ক্রীড়া কর্মকর্তার ও তথ্য কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। তথ্য কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকায় বোর্ডে সেবা নিতে আসা লোকজন বিপাকে পড়ছে। এ ছাড়া বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লেও এখানে ডাটা অপরেটরসহ কম্পিউটার শাখায় জনবল সংখ্যা কম। অবিলম্বে শূন্য পদ পূরণ করে সেবা প্রত্যাশীদের ভোগান্তি কমানোর আহ্বান জানান সংশ্লিষ্টরা।
কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. জামাল নাসের বলেন, কিছুদিন পূর্বে একসঙ্গে অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী অবসরে গিয়েছেন। এ কারণে লোকবল কিছুটা কমেছে। বহু পদ শূন্য হচ্ছে। আমার পূর্বে সালাম স্যার (শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান) দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের লোকবল বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টিতে সাড়াও দিয়েছে। আশা করি আগামী দুই মাসের মধ্যে আমরা নিয়োগ দিতে পারবো। জনবল নিয়োগ দেওয়া হলে পুরোদমে প্রতিষ্ঠানটির প্রাণ ফিরবে বলেও জানান বোর্ডের চেয়ারম্যান।