মঙ্গল্বার ১৯ gvP© ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


কুমিল্লার সবজির চারা রপ্তানি হচ্ছে ভারতে


আমাদের কুমিল্লা .কম :
05.11.2022

স্টাফ রিপোর্টার ।। একপাশে গোমতীনদী অন্য পাশে রানী ময়নামতির প্রাসাদ। তার মাঝেই সমেষপুর গ্রাম। ছায়া সুনিবিড় সমেষপুর গ্রামে এখন নজড় কাড়ে চারা চাষীদের ব্যস্ততা। কেউ জমি প্রস্তুত করছেন। কেউবা পানি ছিটাচ্ছেন। কেউবা চারা তুলে আটি করছেন। পাশে দাঁড়িয়ে থেকে পাইকাররা চারা গুনে গাড়িতে তুলছেন। এমন দৃশ্য কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার সমেষপুর গ্রামে। বছরের ভাদ্র থেকে অগ্রহায়ণ এই ৪ মাস চারা উৎপাদন ও বিক্রয় হয়। এই চার মাসে প্রায় চার কোটি টাকারও বেশী রবিশস্যের চারা উৎপাদন ও বিক্রি করেন ওই জনপদের কৃষকরা। এসব রবিশস্যের চারা দেশের সবজি চাষিদের চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে প¦ার্শবর্তী দেশ ভারতেও।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ছোট প্লটে গায়ে গায়ে লেগে হাজারো চারা দোল খাচ্ছে। রোদ থেকে বাঁচাতে চারা গাছের উপরে বাঁশ পলিথিন দিয়ে ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। চাষীরা নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিস্কার করছেন। কেউবা পানি ছিটিয়ে চারাগুলোকে সতেজ করার চেষ্টা করছেন। প্লটগুলোতে মাথা তুলে আছে ফুল কফি, বাঁধা কফি, মরিচ, টম্যাটো, শিং নাথ বেগুন, তাল বেগুন, লাউসহ নানান প্রজাতির চারা। এই চারাগুলোই কিছু দিন পরে বিভিন্ন জমিতে ফুল ফলে ভরিয়ে দেবে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর বুড়িচং উপজেলার সমেষপুরসহ পাশের কয়েকটি গ্রামে প্রায় ৩০ একর জমিতে চারা চাষ করেছেন কৃষকরা। চারটি ব্লকে ৯৪ জন চাষী চারা উৎপাদনের সাথে জড়িত।
সমেষপুর এলাকার চারা চাষী মোঃ হুমায়ূন কবির বলেন, তিনি এ বছর ১০০ শতক জমিতে চারা চাষ করেছেন। তার বাগানে টমেটো, ফুল কফি, বাঁধা কফিসহ নানান জাতের চারা রয়েছে। হুমায়ূণ কবির জানান, এই ১০০ শতক জমিতে চারা উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা। আবহাওয়া ঠিক থাকলে খরচ বাদে তার মুনাফা হবে অন্তত ৫ লাখ টাকা।
আরেক চারা চাষী মোঃ মামুনুর রশীদ বলেন, বীজের দাম, সারসহ সবকিছুর মূল্য বেড়েছে। বেড়েছে কৃষি শ্রমিকের মজুরী। প্রতিজন কৃষি শ্রমিককে মাসে ১২-১৫ হাজার টাকা দিতে হয়। সেই সাথে বর্ধিত দামে কিনতে হয় বীজ সার ও কীটনাশক।
চারা চাষী মোতাহের হোসেন জানান, ১০০ ফুল কফির চারা আকার আকৃতি ও জাত হিসেবে ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫০ টাকায় বিক্রি করেন। তাল বেগুনের চারাও ১০০ টি ১০০ টাকা। বিভিন্ন শাক সবজির এসব চারার গড় দাম প্রায় এমনই।
চারা চাষী মোতাহের হোসেন আরো জানান, সমেষপুরের চারা সিলেট, সুনামগঞ্জ, ছাতক, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, চট্টগ্রাম মীরশ^রাই, সীতাকুণ্ডসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যায। তবে গত কয়েক বছর ধরে ভারত থেকেও পাইকাররা এসে চারা নিয়ে যান। বিশেষ করে ভারতে বক্সনগর, সোনামূড়ার কৃষকরা আসেন। কেউ কেউ লোক পাঠিয়েও নিয়ে যান।
ছাতক থেকে চারা কিনতে আসা পাইকার আবদুর রউফ বলেন, তিনি গত দশ বছর ধরে কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার সমেষপুর থেকে চারা কিনেন। এখানের চারা যেমন সাশ্রয়ী তেমনি চারা মরে যাওয়ার প্রবনতা কম। ফলনও ভালো হয়। আবদুর রউফ সমেষপুর থেকে চারা কিনে নিজের এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে প্রায় দ্বিগন দ্বামে এসব চারা বিক্রি করেন বলে জানান।
বুড়িচং উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ বানিন রায় জানান, কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে চারা উৎপাদনের সময় রোগ ও পোকামাকড় এর আক্রমণ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পরামর্শ উপ-সহকারি কৃষি অফিসারগণ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া, রবি প্রণোদনা, বোরো হাইব্রিড প্রণোদনা, পারিবারিক সবজি পুষ্টি বাগান, ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন প্রদর্শনীসহ কৃষক প্রশিক্ষণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কৃষককে অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে।
কৃষিবিদ বানিন রায় আরো জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের বিশেষ উদ্যোগ হিসাবে চারা শিল্পের কৃষকদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ এ মাসেই আয়োজনের কথা রয়েছে। কারন বুড়িচং উপজেলার চারা শিল্প একটি প্রসিদ্ধ ও লাভজনক ব্যবসা। দেশের ১০-১৫টি জেলায় চারা বিক্রির মাধ্যমে শীতকালীন সবজি উৎপাদনে এটি গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে। এ শিল্পের প্রসারে প্রযুক্তিগত সকল ধরনের পরামর্শ আমরা প্রদান করে আসছি। কৃষি পরামর্শ ও সেবা গ্রহণ করে কৃষকগণ আরো সচেতন হলে শিল্পটি আরো বিকশিত হবে বলে মনে করি।