মঙ্গল্বার ১৯ gvP© ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


কুমিল্লা মহানগরের সম্মেলন নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত আওয়ামীলীগ


আমাদের কুমিল্লা .কম :
02.11.2022

৫ নভেম্বর যত এগিয়ে আসছে, নগরীতে উত্তেজনা তত বাড়ছে
দাওয়াত না পেলেও সম্মেলনে যাবার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত সীমা গ্রুপের
তাদের দাওয়াত দিতে হবে কেন-প্রশ্ন বাহার গ্রুপের


তৈয়বুর রহমান সোহেল ।। ঘনিয়ে আসছে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সময়। আগামী ৫ নভেম্বর প্রথমবারের মতো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম এমপি, সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ এমপিসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। তবে সম্মেলনে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি এমপি সীমা গ্রুপকে উপেক্ষিত করার অভিযোগ করেছেন তার অনুসারীরা।
এদিকে সম্মেলনে এমপি সীমা গ্রুপকে কেন দাওয়াত দিতে হবে এ প্রশ্ন তুলেছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এমপি বাহার গ্রুপের অনুসারীরা। সম্মেলনের ঠিক আগ মুহূর্তে দুই গ্রুপের এমন অবস্থানে স্থানীয় রাজনীতিতে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এই উত্তেজনা শেষ মুহুর্তে কোন সংঘাত সংঘর্ষে জড়ায় কিনা তা নিয়ে উৎকন্ঠায় আছে স্থানীয় নেতাকর্মীরা।
সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য, প্রয়াত আফজল খানের মেয়ে ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আঞ্জুম সুলতানা সীমা বলেন, ৫ নভেম্বরের সম্মেলনের বিষয়টি আমাদের জানানো হয়নি। সম্মেলন কেন্দ্রিক প্রস্তুতি সভায় ও আমাদের কাউকে রাখা হয়নি। অথচ আমি মহানগর আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি। বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে জানানো হয়েছে।
আপনাদের কেন ডাকা হয়নি- এ প্রশ্নের জবাবে এমপি সীমা বলেন, সেটা ওনারা ভালো বলতে পারবেন। তবে আমি সম্মেলনে আসব। সম্মেলনে আসা থেকে আমাকে কেউ ফেরাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। কারণ, আমি আওয়ামী লীগেরই একজন কর্মী। জাতীর জনকের আদর্শের রাজনীতি করি এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার রাজনীতি করি।
তবে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র আরফানুল হক রিফাত বলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সম্মেলনের বিষয়ে জানানো হয়েছে। এটা কোনো জনসভা নয়, এটা সম্মেলন। যেখানে কাউন্সিররা আসবেন, ভোট দিবেন। লুকোচুরির কিছু তো এখানে হয়নি। এখন কেউ যদি দাওয়াতের বিষয়টি অস্বীকার করেন, তাহলে আমরা কি করতে পারি?
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমাদের সম্মেলনের প্রস্তুতি খুব ভালো। ২৭টি ওয়ার্ডেই আমরা মিটিং করেছি।
এমপি সীমা গ্রুপের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তো ওদের নিজেদেরই দল। মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয় তো ওদেরই ঘর। তারা নিজের ঘরে নিজে আসবে না কেন? তাদের দাওয়াত দিতে হবে কেন?
মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও কুমিল্লা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ ওমর ফারুক বলেন, আমি সম্মেলনের বিষয়ে কিছুই জানি না। সম্ভবত আমাদের (এমপি সীমা গ্রুপের) কেউই কিছু জানেন না। সম্মেলনে যাব কি-না সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিইনি। আর কারও বাড়িতে কেউ দাওয়াত না দিলে কি জোর করে যাওয়া যায়?
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক কবিরুল ইসলাম শিকদার বলেন, সম্মেলনে না রাখার উদ্দেশ্য হলো আমাদের শেষ করে দেওয়া। তিনি (স্থানীয় এমপি বাহার) নিজের মেয়েকে রাজনীতিতে আনার জন্য এমন কৌশল অবলম্বন করেছেন। দলের দু;সময়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। আমি দলের কর্মী। সুতরাং সম্মেলনে আমি থাকবই।
মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতিক উল্লাহ খোকন জানান, তারা (এমপি সীমা গ্রুপ) কয়েকজন ঘরে বসে অভিযাগের বাক্স খুলে রাখেন। আমার ঘরে আমি যাব, সেখানে দাওয়াতের কি আছে? এসব খোঁড়া যুক্তি বাদ দিয়ে তারা কিছু একটা করে দেখাক। সম্মেলনের আয়োজন তো তারা নিজেরাই করতে পারতো। তা না করে ঘরে বসে বসে অভিযোগ করছেন। সম্মেলনের ব্যাপারটি পত্রিকায় স্পষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসে এসে যদি ওই গ্রুপের কেউ অপমানিত হতেন, তাহলে অভিযোগ করতে পারতেন। এখন সম্মেলনকে সামনে রেখে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন।
আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুর রহমান জাহাঙ্গীর বলেন, তাদের (এমপি সীমা গ্রুপ) দাওয়াত দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এটা দলের প্রোগ্রাম। তাদের না আসার কোনো কারণ দেখি না।
মহানগর আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক নূর-উর-রহমান মাহমুদ তানিম বলেন, কোনো সমন্বয় সভায় আমাদের ডাকা হয়নি। তবুও ঘরে বসে থাকব না। দলের একজন কর্মী হিসেবে সম্মেলনে অবশ্যই যাব। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আসবেন, তাদের শুভেচ্ছা জানাব। আর আমাদের উপেক্ষা করার বিষয়টি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ অবগত আছেন।
প্রসঙ্গত, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার ছয় বছর পর ২০১৭ সালের ২২ জুলাই প্রথমবারের মতো মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সভাপতি করা হয় সংসদ সদস্য আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহারকে আর সাধারণ সম্পাদক করা হয় বর্তমান মেয়র আরফানুল হক রিফাতকে।