মঙ্গল্বার ১৯ gvP© ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


তিনজনের এইচএসসি পরীক্ষায় বসা অনিশ্চিত, দিশেহারা স্বজনরা


আমাদের কুমিল্লা .কম :
13.10.2022

আবদুর রহমান ।। নতুন গড়ে ওঠা একটি জঙ্গি সংগঠনে ফাঁদে পড়ে কথিত ‘সশস্ত্র জিহাদের’ উদ্দেশ্যে কুমিল্লা থেকে এক সঙ্গে ঘর ছাড়া ওই সাত তরুণের মধ্যে চারজনের সন্ধান মেলেনি এখনো। গেল ২৩ আগস্ট ওই তরুণরা ‘নিরুদ্দেশ’ হওয়ার পর থেকে গত ৫০ দিনের কোন হদিস না মেলায় তাদের স্বজনদের দিন কেটেছে চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়। কুমিল্লা থেকে ‘সশস্ত্র জিহাদে’ যাওয়া সাত তরুণের দুইজনকে গ্রেপ্তার করার কথা গত ৬ সেপ্টেম্বর জানিয়েছে র‌্যাব। আরেকজন নিজেই ওই পথ থেকে ফিরে এসে র‌্যাবকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটি।

এদিকে, এখনো সন্ধান না মেলা কুমিল্লার ওই চার তরুণের মধ্যে তিনজনই চলতি বছরে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার্থী। আগামী ৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। কিন্তু এখনো খোঁজ না পাওয়ায় ওই তিন তরুণের এইচএসসি পরীক্ষায় বসাও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় দ্রুত ওই চারজনকে উদ্ধার এবং এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজনেরা।

ঘটনার পর থেকে ওই তরুণের স্বজনরা এখনো বিশ^াস করতে পারছেন না তাদের সন্তানরা এমন কর্মকাণ্ডে জড়াতে পারে। তবে তারা বলছেন, জঙ্গি সংগঠনে ফাঁদে পড়ে কোন অপরাধে জড়িত হলেও তাদের উদ্ধার করে আইনের আওতায় আনা হোক। এরপরও তারা নিশ্চিত হতে চান, তাদের সন্তানরা বেঁচে আছে কি-না।

এখনো নিরুদ্দেশ থাকা কুমিল্লা ওই চার তরুণ হলেন- কুমিল্লা সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী নিহাল আবদুল্লাহ (১৭), কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ইমরান বিন রহমান ওরফে শিথিল (১৭) ও মোহাম্মদ আস সামি (১৮) এবং একই কলেজের স্নাতক ৩য় বর্ষের আমিনুল ইসলাম ওরফে আল-আমিন (২৩)।

আল-আমিনের বাবা জানিয়েছে- কয়েকদিন পরেই তার ছেলেরও অনার্স ৩য় বর্ষের চুড়ান্ত পরীক্ষা। অন্যদের মতো তিনিও ছেলের শিক্ষা জীবনে অনিশ্চয়তা দেখছেন।

গত ৬ সেপ্টম্বর রাজধানীতে এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান- কুমিল্লা থেকে নিখোঁজ হওয়া দুই ছাত্রসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছেন তারা। নতুন গড়ে ওঠা এক জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়ে ‘সশস্ত্র জিহাদের’ উদ্দেশ্যে তারা ঘর ছেড়েছিলেন। গ্রেপ্তার সাতজনের মধ্যে চারজন ‘নতুন রিক্রুট’। আর তিনজন তাদের তত্ত্বাবধায়ক ও প্রশিক্ষণদাতা ছিলেন।

গ্রেপ্তার হওয়া কুমিল্লার দুই তরুণ হলেন- কুমিল্লা সরকারি কলেজের চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হাসিবুল ইসলাম (১৮) ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো.ইমতিয়াজ আহম্মেদ ওরফে রিফাত (১৯)। আর কথিত সশস্ত্র জিহাদের উদ্দেশ্যে গিয়ে নিজেই পটুয়াখালী থেকে কৌশলে ফিরে আসা অপর তরুণ হলেন সরতাজ ইসলাম ওরফে নিলয় (২৫)।

রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা নিলয় কুমিল্লার ওই ৬ তরুণসহ নিরুদ্দেশ হয়েছিলো ঢাকা থেকে কুমিল্লা এসেই। নিলয় রাজধানীর ড্যাফোডিল বিশ^বিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। কুমিল্লা নগরীর রানীরবাজারের পাশের অশোকতলা এলাকায় তার খালা ফৌজিয়া ইয়াসমিনের বাসা। নিরুদ্দেশ থাকা নিহাল আবদুল্লাহ হলেন নিলয়ের খালাতো ভাই।

এদিকে, কুমিল্লা ওই সাত তরুণ নিখোঁজের পেছনের ‘কারিগর’ ও নির্দেশদাতা কুমিল্লা নগরীর কোবা মসজিদের ইমাম শাহ মো. হাবিবুল্লাহকে গ্রেপ্তারের কথা গত ৯ অক্টোবর জানিয়েছে র‌্যাব। তবে বাকি চার তরুণের সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে এখনো কিছুই জানাতে পারেনি সংস্থাটি।
নিরুদ্দেশ থাকা ইমরান বিন রহমান ওরফে শিথিলের বাবা নগরীর রেসকোর্স মফিজ উদ্দিন সড়কের বাসিন্দা মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, আইনশৃংখলা বাহিনীর লোকজন বলছে- নির্দেশদাতা হাবিবুল্লাহ ও সাতজনের মধ্যে তিনজন উদ্ধার হয়েছে। তাহলে আমার ছেলে কোথায়? ছেলের এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হবে ৬ নভেম্বর। আমি ছেলেকে দ্রুত ফিরে পেতে চাই। ঘটনার পর থেকে আমাদের প্রতিটি রাতই বলতে গেলে নির্ঘুম কাটছে। আমি জানতে চাই ছেলেটা বেঁচে আছে কি-না?

নিহাল আবদুল্লাহর এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন তার বাবা কুমিল্লা নগরীর অশোকতলা মসজিদ গলি এলাকার বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম। নিহালের খালাতো ভাই নিলয় এরই মধ্যে গণমাধ্যমকে বলেছে, তাকে ঘর ছাড়তে প্রথমে উদ্বুদ্ধ করেছে নিহাল আবদুল্লাহ। নিহালই তাকে সংগঠনের বড় ভাইদের সঙ্গে পরিচয় করায়। কিন্তু সেখানে গিয়ে নিজের ভুল বুজতে পেরে কৌশলে পালিয়ে আসেন তিনি। তবে নিহালের শেষ পরিণতি তিনি জানেন না।

নিহালের মা ফৌজিয়া ইয়াসমিন বলেন, আমার বোনের ছেলে ফিরে এসেছে। আমার ছেলেরও দ্রুত সন্ধান চাই। ছেলেটার শেষ পরিণতি কী হয়েছে, সেটা জানতে চাই।

ঘরছাড়া আস সামীর এইচএসসি পরীক্ষা নিয়েও দুশ্চিন্তায় রয়েছে তার পরিবার। সামীর বাবা মাহাবুবুর রহমান বলেন, এখনো বিশ^াস হয় না আমার ছেলে এগুলোতে জড়াতে পারে। ছেলেটাকে আমি ছোটবেলা থেকে দেখে-শুনে বড় করেছি। আমি ছেলের সন্ধান চাই। এরপর সে অপরাধী হলে দেশের আইনে তার বিচার হোক।

আরেক নিরুদ্দেশ আমিনুল ইসলাম ওরফে আল-আমিনের বাবা কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা এলাকার বাসিন্দা মো.নুরুল ইসলাম বলেন, আল আমিন আমার বড় ছেলে। কয়েকদিন পরেই তার অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা। সে পড়াশোনার পাশাপাশি কান্দিরপাড়ে আমার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে সময় দিতো। ধর্মকর্ম করার পাশাপাশি সে তার বৃদ্ধ দাদার সেবা করে। তার চলাফেরায় কখনো মনে হয়নি সে জঙ্গিবাদের মতো ঘটনায় জড়াতে পারে। আমার এখনো বিশ^াস হয় না আমার ছেলে জঙ্গিদের ফাঁদে পা দিয়েছে। তবে আমার ছেলে যদি এমন অপরাধ করে থাকে, এরপরও আমরা তার সন্ধান চাই। তাকে উদ্ধারের পর প্রয়োজনে আইনের মাধ্যমে তাকে শাস্তি দেওয়া হোক। তারপরও মনকে বুঝাতে পারবো আমার ছেলেটা বেঁেছ আছে।

শিথিলের বাবা মজিবুর রহমান আরও বলেন, আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে এখন সব তথ্যই আছে বলে আমরা বিশ^াস করি। তারা চাইলেই বাকি চারজনকে ফিরিয়ে দিতে পারে। আমরা চাই তাদের শিক্ষা জীবন যেন নষ্ট না হয়। আর যারা ভুল ব্যাখা দিয়ে ছেলেদের ফাঁদে ফেলে এই কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে, তাদের কঠোর শাস্তি চাই।