মঙ্গল্বার ১৯ gvP© ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement
  • প্রচ্ছদ » জেলা উপজেলার খবর » কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস– টাকা নেওয়ার প্রতিবাদ করলে সেবাগ্রহিতার মোবাইল ভেঙ্গে দেয় পুলিশ


কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস– টাকা নেওয়ার প্রতিবাদ করলে সেবাগ্রহিতার মোবাইল ভেঙ্গে দেয় পুলিশ


আমাদের কুমিল্লা .কম :
03.10.2022

# নতুন ডিডি বললেন, মোবাইলের দাম দিয়ে দিতে বলেছি


সুফিয়ান রাসেল।।
কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসের বিতর্কিত উপ-পরিচালক (ডিডি) নুরুল হুদাকে বদলির পর আরেক নুরুল হুদা যোগদান করেছেন গতমাসে। নতুন ডিডির যোগদানের পর দৌরাত্ম্য বেড়েছে দালালদের। নেপথ্যে ভাগবাটোয়ায় জড়িত অফিসের কর্মকর্তারা। পুলিশ আনসার সদস্যদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। নতুন ডিডি জানিয়েছেন অভিযোগে পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
তিতাস উপজেলার গৌরিপুর থেকে আসা মোহাম্মদ শাহীন অভিযোগ করেন, সকাল ছয়টায় লাইনে দাঁড়িয়েছি গেইটের বাহিরে। আটটার পর গেইটের ভেতরে প্রবেশ করে দেখি,লাইন আর সামনে যায় না। পুলিশ সদস্য, আনসার সদস্যরা সামনে এগিয়ে দেয়। তাই পুলিশ কন্সটেবল রেজাউল করিম স্যারকে বললাম, স্যার সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি। তিনি বললেন পাঁচশ টাকা দাও। পাঁচশ টাকা নিয়ে তিনি দূরে দূরে থাকে। ওনাকে বললাম, স্যার কাজ না করলে টাকা দেন। তখন তিনি আমাদের দু’জনকে হুমকি দিয়ে বলেন,বেশী কথা বললে লকারে ডুকাবো। এরপর পাসপোর্ট অফিসের লকার রুমে নিয়ে যায়। এ সময় আমি ৯৯৯ নম্বর কল দিলে তিনি(পুলিশ) হাত থেকে ফোন নিয়ে কল কেটে দেয়। আমার মোবাইল ভেঙ্গে ফেলে। এ বিষয়ে ডিডি স্যারের কাছে মৌখিক ভাবে অভিযোগ করেছি।
বরুড়ার ঝলম থেকে আসা বাহা উদ্দিন বলেন, জরুরি চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়া যাবো। লাইনে দাঁড়িয়েছি ভুল হয়েছে বলে জমা রাখেনি। পরে যখন বাবুল দালালের মাধ্যমে গিয়েছি। তখন সব হয়েছে, জমা রেখেছে। এখন ছবি তুলতে যাবো। বাবুল দালাল সব কিছু করতে খেয়েছে ১০ হাজার টাকা। এ সময় বাহা উদ্দিন দুই কাগজের মাঝে স্টেপলারের নিচে নীল কালির দাগ দেখিয়ে বলেন, এটা ভাইয়ের কোড নম্বর। প্রয়োজনে বলবেন।
রবিবার (২ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায়, পাসপোর্ট অফিসের ভেতরে বাইরে কয়েকশ’ মানুষের জমায়েত। এখানে একটু পরপর একজন জিজ্ঞাস করে লাইন লাগবে না আসেন। ভেতরে প্রবেশ করতেই নজরে পরে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের কর্মতৎপরতা। আইন শৃঙ্খলায় দায়িত্ব থাকা সদস্যদের নিকট দৃশ্যমান নেই পরিচয়পত্র। পরিচয়পত্র দৃশ্যমান নেই পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারিদের। অভিযোগ রয়েছে, সবার যোগসাজশে বাহির থেকে দালালরা কাজ করেন। দালালদের সবাই অফিসের সামনের কম্পিউটার দোকানের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করে থাকেন।
প্রতিবেদক পরিচয় না দিয়ে পাসপোর্ট অফিসের সামনে কথা হয় বাবুল নামের এক দালালের সাথে। তিনি জানান, গত ২৯ বছর এ অফিসে কাজ করি। কোন খারাপ রেকর্ড নাই। তুমি আসো কাজ করো আমার সাথে। দিনে চার-পাঁচ টাকা কোন বিষয় না। নতুন ডিডি সম্পর্কে এ দালাল সর্দার জানান, বর্তমান ডিডিও খুব ভালো। যে কোন কাজ নিয়ে আসো। তোমার চিন্তা করতে হবে না।
সেবা গ্রহিতার মোবাইল ফোন ভাঙ্গা ও টাকা দেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য রেজাউল করিম খান (ডনার) বলেন, ওনি আমার কাছে সহযোগিতা চাইছে। তাই সহযোগিতা করছি। টাকা নিয়ে ফেরত দিয়েছি। ওনি ভিডিও করে, ৯৯৯ নম্বরে কল দেয়। আমি বলছি, বন্ধ রাখেন। মোবাইল ভাঙ্গিনি।
এ বিষয়ে কুমিল্লা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ডিডি (উপ-পরিচালক) নুরুল হুদা বলেন, মোবাইল ভাঙ্গার অভিযোগ সম্পর্কে পুলিশ সদস্যকে বলেছি মোবাইলের দাম দিয়ে দেওয়ার জন্য। আর আমি জয়েন করেছি গত মাসের শেষ সাপ্তাহ। কাজ শুরু করেছি মাত্র। অভিযোগে পেলে সাথে সাথে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, গত ১৮ এপ্রিল কুমিল্লা পাসপোর্ট অফিসে সেবা গ্রহিতাকে লক্ষ্য করে চেয়ার ছুড়ে মারেন তৎকালিন ডিডি নুরুল হুদা। সেদিন ওই ঘটনার একটি ভিডিও সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে তা আদালতের নজরে আসে। এ ঘটনায় গত ২৬ এপ্রিল কুমিল্লার ১ নম্বর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্বাস উদ্দিন র‌্যাবকে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেন। গত মাসের ১২ সেপ্টেম্বর ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর মোহাম্মদ আইয়ূব চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সেই ডিডিকে বদলি করা হয়।