শুক্রবার ২৯ gvP© ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


কিশোর গ্যাংকে সমূলে উৎপাটন করতে হবে


আমাদের কুমিল্লা .কম :
28.08.2022


শাহাজাদা এমরান ।।
কুমিল্লা নগরীর ঝাউতলা। তালুকদার কোচিং সেন্টার। সেখানে পড়ে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া আমার এক মাত্র কণ্যা সাবিকুন নাহার দিবা। গেল সপ্তাহে এক কাজে ঐ কোচিং সেন্টারে যাই। গিয়ে দেখি উপস্থিত বেশ কয়েকজন অভিভাবক আমার পরিচিত। দাঁড়িয়ে কয়েক মিনিট কথা বললাম। এরই মধ্যে আমাদের সংক্ষিপ্ত আড্ডার লোক সংখ্যা হয়ে গেল ১০/১২ জন। বিষয় বস্তু ছিল সবার একটাই কিশোর গ্যাং ও শাহাদাত হত্যা। তাদের সবার ধারণা,সাংবাদিকরা সবার আগে জানে এবং জগতের সব খবরের খবর রাখে। যদিও সব সময় এই ধারণাটা সত্য হয় না এবং হওয়ার কথাও না। তবে একটি জিনিস লক্ষ্য করলাম, সব অভিভাবকদেরই চোখে মুখে বেশ আতংকের ছাপ। বিশেষ করে ছেলে অভিভাবকদের উদ্বেগটা ছিল চোখে পড়ার মত। কিশোর গ্যাং নিয়ে যে নগরীর অভিভাবকগণ কতটা শংকিত ঐদিন তাদের সাথে কথা না বললে হয়তো অনুধাবন করা যেত না।
২০১৫ সালের আগে কুমিল্লায় কিশোর গ্যাং এর নাম খুব একটা শোনা যেত না। এরপর থেকেই মূলত এই কিশোর গ্যাং কালচার বেড়ে উঠতে শুরু করে। ২০১৬ সালে সম্ভবত মার্চ এপ্রিলের দিকে কুমিল্লা মডার্ন হাই স্কুলের দুই গ্রুপের ছাত্রদের মধ্যে দেশীয় নানা অস্ত্র দিয়ে মারামারি হয়। পরে জানা যায়, এই মারামারির দলে জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীও ছিল। এরা সবাই ছিল নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। যা ২০১৭ সালের ২৭ মে কুমিল্লা নগরীর নজরুল এভিনিউ এলাকায় প্রকাশ্যে ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজাদা ইসলাম নামে এক মেধাবী শিক্ষার্থীকে এলোপাতাড়ি ভাবে কুপিয়ে হত্যা করে বীরদর্পে চলে যায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এই হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে শান্তি ও সুনীতির কুমিল্লায় শুরু হয় কিশোর গ্যাং কর্তৃক হত্যাকাণ্ড। এই কিশোর গ্যাংয়ের হাতে ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ ৬টি হত্যাকাণ্ডসহ গত ৬ বছরের ( চলতি আগস্ট মাসের শাহাদাত হত্যাসহ) ১০ জন কিশোর নির্মমভাবে খুন হয় তাদেরই এক সময়ের সহ পাঠিদের হাতে। এরপর টনক নড়ে প্রশাসনের। জেলা আইনশৃংখলা সভায়ও এনিয়ে বেশ জোরালো কথা উঠে। পরে প্রশাসনের কিছুটা কঠোরতার কারণে কিশোর গ্যাং কিছুদিনের জন্য পিছু হটে বটে কিন্তু তাদের কঠোরভাবে দমানো যায়নি। পরবর্তী পর্যায়ে করোনা মহামারির কারণে আইন শৃংখলা বাহিনী হয়তো এদিকটায় তেমন নজর দিতে পারেনি। এই সুযোগে সংগঠিত হতে থাকে কিশোর গ্যাং। বর্তমানে নগর কুমিল্লায় প্রায় ১৫টি কিশোর গ্যাং এর গ্রুপ রয়েছে নানা নামে ।
প্রথম দিকটায় শুধুমাত্র শিক্ষার্থীরা এই গ্যাংয়ের সাথে সম্পর্কিত থাকলেও বর্তমানে এই কিশোর গ্যাং কালচারে জড়িয়ে আছে স্কুল কলেজে না যাওয়া কিশোররাও। এই কালচারে এসেই একটা কিশোর সহজেই পেয়ে যায় অর্থ,মাদক,অস্ত্র ও প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করার মত ক্ষমতা। আর এদের পেছনে যোগানদাতা রয়েছে তাদের তথাকথিত বড় ভাইয়েরা। কথিত আছে , এই বড় ভাইয়েরা এই কিশোরদের তাদের রাজনৈতিক মিছিল মিটিংসহ সুবিধামত সময়ে তাদের বিশ্বস্ততার সাথে ব্যবহার করে। বড় ভাইদের হাতে ব্যবহৃত হতে হতে একদিন তার নিজের জীবনই চির দিনের জন্য ব্যবহার হয়ে যায়। আর তার বাবা মা হারিয়ে ফেলে তার প্রিয় সন্তানকে। এই কিশোর গ্যাং সদস্যদের হাতে নিহতের মধ্যে এমনও আছে বাবা মার একমাত্র সন্তান ছিল ঐ কিশোরটিই।
গত ২৫ আগস্ট দৈনিক আমাদের কুমিল্লার এক মন্তব্য প্রতিবেদনে আমি লিখেছিলাম, ‘মাননীয় পুলিশ সুপার,ধর্মপুর কত দূর ’ কুমিল্লায় ব্যাপক আলোচিত ও প্রশংসিত এই লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর বিভিন্ন পেশার কমপক্ষে অর্ধশত মানুষ এই প্রতিবেদককে অনুরোধ করেছেন , কিশোর গ্যাং নিয়ে নবাগত পুলিশ সুপারের দৃষ্টি আর্কষণ করে কিছু একটা লেখার জন্য। তাদের ধারণা আমি লিখলেই কাজ হবে। নবম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলেদের অভিভাবকদের এখন ঘুম হারাম এই নগর কুমিল্লায়। সকালে আদরের ছেলেটি স্কুল কিংবা কলেজে গিয়ে দুপুরে ফিরে আসবে তো মায়ের বুকে। বিকেলে প্রাইভেটে কিংবা খেলার মাঠে গিয়ে বা বন্ধুদের সাথে সময় কাটিয়ে সন্ধ্যার পর দু:খিনী মায়ের আঁচলে দেখা মিলবে কিনা এই চিন্তায় অস্থির থাকে অভিভাবকগণ। আমি এই লেখার মাধ্যমে কুমিল্লার সদর আসনের এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা ও কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজী আকম বাহাউদ্দিন বাহার, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান ও নবাগত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল মান্নানকে বিনীত অনুরোধ করব, আপনারা কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করুন। জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করুন। কুমিল্লা নগর থেকে একেবারে কিশোর গ্যাং কালচারকে সমূলে উৎপাটন করুন একই সাথে এই কিশোর গ্যাংদের কারা মদদ দিচ্ছে, কারা গড ফাদার হিসেবে কাজ করে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে অংকুরেই বিনাশ করছে তাদের খুঁজে বের করে জনসম্মুখে তালিকা প্রকাশ করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করুন। প্লিজ, কিশোর গ্যাং নিয়ে চিন্তা করার আর এক মুহূর্ত সময় নেই। তাদের একেবারে নির্মূল করা ছাড়া নগরবাসীকে শান্তিতে রাখার বিকল্প কোন উপায় নেই। একই সাথে অভিভাবকদেরকেও সবিশেষ অনুরোধ করব, আসুন, আমরা নিজের সন্তানের খোঁজটি আগে রাখি। ছেলেটি কখন কার সাথে যায় তার খোঁজ নিয়ে তার বন্ধু নির্বাচনেও সুযোগ থাকলে ভূমিকা রাখি। কুমিল্লা হোক কিশোর গ্যাং কালচার মুক্ত এই কামনায় শেষ করছি।
লেখক : সাংবাদিক, সংগঠক ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক।