মাকছুদুর রহমান ।। ভোরের সূর্য উঠতে না উঠতেই হতে না হতেই অনেক আশা নিয়ে কুমিল্লা নগরীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় এসে হাজির হয় অসংখ্য দিন মজুর। যাদের অধিকাংশের বাড়িই দেশের উত্তারাঞ্চল কিংবা দক্ষিনাঞ্চলে। অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন এক দিকে যেমন তাদের কাজ কমে গেছে, অপর দিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দামও উর্ধ্বগতিতে। ফলে আয়ের সাথে ব্যয়ের হিসেব মিলাতে পারছে না এই অভাবী ও অসহায় নিম্মআয়ের মানুষ গুলো। তাই তাদের এখন মন ভালো নেই। শনিবার(২৩ জুলাই) সরেজমিনে কান্দিরপাড় গিয়ে কুমিল্লায় কাজের সন্ধ্যানে আসা এই মানুষ গুলোর সাথে কথা বলে তাদের মন খারাপ থাকার কারণ জানা গেছে।
কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় শনিবার সকাল ৭টায় গিয়ে দেখা যায় শ্রম বিক্রি করতে আসা প্রায় অর্ধশত মানুষ কাজের বিভিন্ন উপকরন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে যেতেই এগিয়ে এলো ৭/৮ জন এক সাথে। কি কাজ ভাই, কয় লাগবে, আমরা সব কাজ পারি ইত্যাদি বলতে শুরু করল। সংবাদকর্মীর পরিচয় পেয়ে পিছু হটলো কয়েকজন।
রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা রহিম উদ্দিন ভরসা নামের (৬০) এক বৃদ্ধ জানান, গতকালও কাজ পাইনি মামা।আজ আমার কাজ না পাইলে না খেয়ে থাকতে হবে।
উপস্থিত বিভিন্ন বয়সের ৭/৮ জন দিনমজুরের সাথে কথা বলে জানা গেল, আগের মত এখন আর তেমন কাজ পাচ্ছে না তারা। আগে এই কান্দিরপাড় সকাল ৯টার পরই প্রায় খালি হয়ে যেত শ্রম বিক্রি করতে আসা মানুষের আনা গোনা। এখন বেলা ১১টা পর্যন্তও কেউ কেউ কাজের আশায় দাঁড়িয়ে থাকে। যারা কাজ পায় তারা আগের চেয়ে কম দামেই রাজি হয়ে যায় । অনেকেই আবার কাজ না পেয়ে মন খারাপ করে চলে যায়।
কুড়িগ্রাম জেলার সদর উপজেলার আবদুল মালেক জানান, আজ তিন মাস ধরে কুমিল্লা আসছি। গত দুই মাস ভালো কাজ পাইলেও চলতি মাসের শুরুতেই তেমন কাজ পাচ্ছি না। অন্যদিকে, জিনিসপত্রের দামও বেশী। চলতে খুব কষ্ট হয় আমাদের।
লালমনিরহাটের তাজু মিয়া বলেন, বর্তমানে আমরা অনেকেই সপ্তাহের ৭ দিনের মধ্যে ২/৩ দিন কাজ পাই না। কাজ না পাইলেও না খেয়েতো আর থাকতে পারি না। বাড়িতে পরিবার আছে। তাদের জন্য টাকা পাঠাতে হয়। খুব কষ্টে আছি ভাই।
অভাবী এই মানুষগুলো রাজমিস্ত্রির কাজ, মাটি কাটার কাজ, এবং ইট ভাঙ্গার কাজসহ নানা ধরনেরর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। যে দিন কাজ পান সেদিন ৩ শ থেকে ৭০০ শ টাকা পর্যন্ত আয় করেন তারা। কিন্তু কোন দিন কাজ না পাইলেই অভাব দেখা দেয় তাদের। কারণ, নিজে খেয়ে,মেস ভাড়া ও পকেট খরচ চালিয়ে তারপর পরিবারের জন্য টাকা জমাতে হয় তাদের।