সোমবার ২৯ †g ২০২৩
Space Advertisement
Space For advertisement


চাপালিশে রঙিন লালমাই পাহাড়


আমাদের কুমিল্লা .কম :
01.07.2022

মাহফুজ নান্টু ।। আষাঢ়ের আকাশ থেকে যেন আগুন ঝরছে। রোদের তাপে গরম একটু বেশী লাগছিলো। এমন গরমে দুষ্ট ছেলের দল হানা দেয় কুমিল্লা কোটবাড়ি এলাকার লালমাই পাহাড়ে। সেখানে গাছে গাছে ঝুলে আছে লাল চাপালিশ। পাকা চাপালিশ ভেঙ্গে এ্যালমুনিয়ামের পাত্রে কোষগুলো একসাথে করে নেয়। তারপর শুকনো মরিচ আগুনে পুড়িয়ে লবন দিয়ে মেখে ভর্তা বানায়। হাল্কা মিষ্টি ও টক স্বাদের চাপালিশের ভর্তা মুখে পুড়ে নিয়ে আহ! উহু স্বাদে তৃপ্তি আস্বাদন করে দুরন্ত কিশোর দল। তপ্ত রোদে উদরপূর্তির জন্য এর চেয়ে ভালো আয়োজন কি হতে পারে। চাপালিশ দেখতে কাঁঠালের মতই। কাঁচা অবস্থায় সবুজ পাকলে লাল বর্ণ ধারণ করে। আকারে ছোট। ভেতরে ছোট ছোট কোষ থাকে। টক মিষ্টি স্বাদের এই চাপালিশকে স্থানীয়রা চামল কেউবা চাম্বল নামেই চেনে। কেউ কেউ চাপলাইশও বলে। কোষের ভেতরে ছোট বিচি আছে। আগুনে পুড়িয়ে বিচিগুলো খায়। অনেকটা চিনা বাদামের স্বাদ পাওয়া যায়।

লালমাই পাহাড়ে শতবর্ষ ধরে প্রাকৃতিকভাবেই চাপালিশ গাছের জন্ম। ঘণ সবুজ পাতায় ঘেরা গাছগুলোতে ঝুলে থাকে লাল চাপালিশ। এমন দৃশ্য যে কারো দৃষ্টি আকর্ষণ করে। গাছের পাতা সরল। ডাল ভাঙলে দুধের মত সাদা তরল পদার্থ বের হয়। আষাঢ় মাসেই চাপালিশ পেকে লাল হয়ে উঠে। নম্বইয়ের দশকে লালমাই পাহাড়ে যে পরিমান চাপালিশ গাছ ছিলো তা এখন নেই। বর্তমানে লালমাই পাহাড়ে কমে এসেছে চাপালিশ গাছ।

কোটবাড়ি এলাকার বাসিন্দা ফয়েজ আহমেদ জানান, পুরো লালমাই পাহাড়ে অর্ধশতাধিক চাপালিশ গাছ আছে। এক সময় হাজারের বেশী চাপালিশ গাছ ছিলো। কাঠের জন্য কিংবা জমি প্রশস্থ করতে গত কয়েক বছরে স্থানীয়রা বহু চাপালিশ গাছ কেটে ফেলেছে৷ ফয়েজ আহমেদ বলেন প্বার্শবর্তী সেনানিবাসের ভেতর বর্তমানে বেশ কিছু চাপালিশ গাছ রয়েছে।

কোটবাড়ি এলাকার বিজিবি ক্যাম্পের পশ্চিমপ¦ার্শে হাতিগড়া এলাকায় চাপালিশ বিক্রি করেন স্থানীয় চা দোকানীরা। দোকানের সামনে ঝুড়িতে রাখা থাকে চাপালিশ। কেউবা দোকানের আড়ার সাথে সাথে ঝুলিয়ে রাখেন ক্রেতা আকর্ষণের জন্য।

চা দোকানী খায়ের মিয়া বলেন, পতিডা চামল ২০ টেহা কইরা বেচি। আষাঢ় শাওন মাসে কাডলের লগে চামলও পাহে। শহর থাইক্কা লোক আইয়া কিন্না লইয়া যায়। একটা গাছো কমছে কম ২ থাইক্কা ৩ মন চামল ধরে। এহনদো পাহাড়ে আগের মতন চামল গাছ নাই। আগে পাহাড়ের উপ্রে যেই চামল গাছ আছিলো। হারাদিন শতে শতে বান্দর চামল খাইতো। বহুত মানুষ চামল বেইচ্চা বহুত টেহা কামাই করছে। এহন আগের মত চামল গাছও নাই বান্দরও কমছে।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেহেরুন্নেছা বলেন, চাপালিশ একটি বিপন্ন উদ্ভিদ। আবাসস্থল ধ্বংস এবং মাত্রাতিরিক্ত আহরণের জন্য চাপালিশের বিস্তৃতি নাই বললে চলে। সরকারের উচিত পরিকল্পিত বনায়নের অংশ হিসেবে চাপালিশ বৃক্ষের আবাদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রাখা। এর কাঠ যেমন মূল্যবান তেমনি এর ফল বন্যপ্রানী ও মানুষের খাবার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু সংকটে নিপতিত এই পৃথিবীকে আবাসযোগ্য রাখতে হলে শক্তভাবে বৃক্ষনিধন দমন করতে হবে ও ব্যাপকভাবে বনায়ন কর্মসূচী গ্রহণ করে তা সার্থক করে তুলতে হবে। সেক্ষেত্রে চাপালিশের চাষ হতে পারে চমকে দেবার মতো!

কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিজানুর রহমান জানান, সারাদেশে যে কয়টা এলাকায় চাপালিশ গাছ জন্মে তার মধ্যে কুমিল্লার লালমাই পাহাড় অন্যতম। সংরক্ষণের অভাবে চাপালিশ কমছে। এখন গাছটি বিলুপ্তপ্রায়। এর কাঠ ও ফল মূল্যবান। পাখি ও বনের পশুর জন্যও চাপালিশ উন্নত খাবার। এই গাছের কাঠ দিয়ে তৈরী আসবাব বছরের পর বছর টিকে থাকে। যেহেতু চাপালিশ গাছ বনজ প্রকৃতির তাই এই গাছ রক্ষায় বন বিভাগের উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে মনে করি।

কুমিল্লা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা কোটবাড়িতে উদ্ভিদ উদ্যান করেছি। সেখানে চাপালিশের বীজ থেকে চারা করে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করার চেষ্টা করছি। যে কেউ চাইলে আমরা বীজ কিংবা চারা দিয়ে সহযোগীতা করবো।