স্টাফ রিপোর্টার ।। অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হলেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মৃত্যুঞ্জয়ী সাবেক ছাত্র নেতা আরফানুল হক রিফাত। গত ১৫ জুন অনুষ্ঠিত কুসিক নির্বাচনে তিনি গত দুই বারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুকে ৩৪৩ ভোটে পরাজিত করে প্রথম বারের মত মেয়র নির্বাচিত হন। গত ৩১ বছর পর তিনিই একমাত্র আওয়ামী লীগ নেতা যার হাত ধরে নৌকা গেল নগর ভবনে। বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) নিজ বাস ভবনে গণমাধ্যম কর্মীদের মুখোমুখি হন নতুন মেয়র রিফাত। তার সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারের চুম্বুক অংশটি জাগো নিউজের সৌজন্যে দৈনিক আমাদের কুমিল্লার পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন : সারাদিন সুষ্ঠু ভোট হলো। ফল গণনার শেষ ১৫ মিনিটের হট্টগোল আপনার বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করবে কি না?
রিফাত: আমি বরাবরই এগিয়ে ছিলাম। আমি আমার অফিসে বসে সব কেন্দ্রের ফলাফল শিট দেখছিলাম। হঠাৎ শুনলাম সাক্কু সাহেব মিছিল করতেছেন। চিন্তায় পড়ে গেলাম, এখনো রেজাল্ট দিলো না, তিনি জয়লাভের মিছিল করে উল্লাস করছেন। তখন আমাদের ছেলেপেলেরা উত্তেজিত হয়ে সেখানে যায়। প্রশ্ন হলো, সাক্কু সাহেব সেখানে গেল কেন? আমি তো সেখানে যাইনি। তাকে তো নির্বাচন কমিশন থেকেও ডাকেনি।
প্রশ্ন : মনিরুল হক সাক্কু সাবেক মেয়র হিসেবে তার কাছ থেকে আপনি কোনো পরামর্শ নেবেন কি না?
রিফাত: কুমিল্লা নগরীর উন্নয়ন করতে কুমিল্লার মানুষ যে রায় দিয়েছেন তার প্রতি সম্মান দেখিয়ে তিনি (সাক্কু) আমাদের সহযোগিতা করবেন। তার মেধা, বুদ্ধি এবং উনি যেভাবে সিটি করপোরেশন চালিয়েছিলেন, নিশ্চই তিনি সেখানে ভালো কিছু কাজও করেছেন। আমাদের ভালো কিছু পরামর্শ দিক না, আমি অবশ্যই গ্রহণ করবো।
প্রশ্ন : আপনি তো দলীয় একক প্রার্থী ছিলেন। আপনার সঙ্গে যারা লড়েছেন তারা তো একই দলের দুইজন। তারপরও কি আপনি মনে করেছিলেন বিজয়ের লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হবে?
রিফাত: হ্যাঁ, আমি জানতাম। লড়াইটা হাড্ডাহাড্ডি হবে। মঙ্গলবার সে বিষয়টা আপনাদের (গণমাধ্যমকে) বলেছিলাম। নির্বাচনটা জমজমাট হবে এবং আমি জানতাম খুব কাছাকাছি এটার রেজাল্ট হবে।
প্রশ্ন : বিজয়ের পর আপনার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা কি অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং আপনি কি তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশা করেন?
রিফাত: একদম নেই, এটা বলবো না। অনেক জায়গা থেকে এসেছে। যাদের থেকে খুব বেশি আশা করি তারা এখনো পাঠায়নি।
প্রশ্ন : আপনি কি পরাজিত প্রার্থীদের ফোন করেছিলেন, যে একসঙ্গে নগর উন্নয়নে কাজ করতে চাই?
রিফাত: আমার সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু এবং নিজাম উদ্দিন কায়সারের কাছে যাওয়া উচিত এবং তাদের বলা দরকার ছিল। মেয়র সাক্কু তো ফলাফল মানেননি। যিনি ফলাফল মানেননি, আমি যদি ওনার কাছে যাই, উনি আমাকে যদি পাল্টা কোনো প্রশ্ন করেন সেখানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে।
প্রশ্ন : সাক্কু তো দাবি করছেন শেষ পর্যায়ে এসে ফলাফল পাল্টে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন?
রিফাত: ফলাফল পাল্টায় কীভাবে? ফলাফলের রেজাল্ট শিট ওনার কাছেও আছে এবং প্রিজাইডিং অফিসারের সই করা প্রতি কেন্দ্রেও আছে। ওনার যদি খুবই সন্দেহ হয় তিনি পুনরায় গণনার দাবি করতে পারেন।
প্রশ্ন : নগর গড়ার ক্ষেত্রে আপনার কোন ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে এবং দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম কোন কাজটা করবেন?
রিফাত: আমি কুমিল্লাবাসীর কাছে কমিটেড (প্রতিজ্ঞাবদ্ধ)। দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথম কাজটি হবে সাবেক মেয়রসহ সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা যেসব দুর্নীতি করেছেন তালিকা করে শ্বেতপত্র প্রকাশ করবোই। আর নগরীর সৌন্দর্যবর্ধন করার জন্য দেশের নামিদামি যেসব নগরবিদ রয়েছেন তাদের সাহায্য নেবো। প্রয়োজনে বিদেশি নগরবিদদের সহযোগিতাও নেবো। এছাড়া প্রয়োজন হলে সাবেক মেয়রের সহযোগিতাও নেবো। এক কথায় সবাই একসঙ্গে বসে নতুন পরিকল্পনা করে কীভাবে কুমিল্লাবাসীকে যানজট ও জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দেওয়া যায় সে বিষয়ে পরিকল্পনা করেই কাজ শুরু করবো।
প্রশ্ন : নাগরিক সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে দলীয় নেতাকর্মীদের সুবিধা দেবেন কি না?
রিফাত: আমি কুমিল্লার মানুষকে কথা দিয়েছি সিটি করপোরেশন কার্যালয়কে কখনো দলীয় কার্যালয় বানাবো না। আমার কাছে সব দলের মানুষ সমান থাকবে এবং সমান সুবিধা পাবে।
প্রশ্ন : কুমিল্লা সিটির দুইবারের মেয়র সাক্কুর বিরুদ্ধে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে গেলে কোনো বাধার সম্মুখীন হবেন কি না?
রিফাত: দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো আপস নেই। এক্ষেত্রে আপনি মনে করেন যদি কেউ আমাকে বাধা দেবে, বাধা দিলেই বাধবে লড়াই। আর সেই লড়াইয়ে জিততে হবে।