শুক্রবার ২৯ gvP© ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


ভাবির বিরুদ্ধে মাঠে দেবর, দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ড


আমাদের কুমিল্লা .কম :
11.05.2022

আবদুর রহমান ।। সন্ত্রাসীদের গুলিতে সহযোগীসহ খুন হওয়া কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সৈয়দ মোহাম্মদ সোহেলের ওয়ার্ডে নির্বাচন করতে প্রস্তুত হয়েছেন তারই স্ত্রী। এরই মধ্যে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে সোহেলের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার রুনার নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ওই ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করতে প্রস্তুত হয়েছেন কাউন্সিলর সোহেলের ছোট ভাই সৈয়দ মো. রুমনও। রুমন কাউন্সিলর সোহল ও তাঁর সহযোগী আওয়ামী লীগ কর্মী হরিপদ সাহা হত্যা মামলার বাদী। এরই মধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রকাশ্যে এসেছে দেবর-ভাবির দ্বন্দ্ব। বর্তমানে দু’জনই সমানতালে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন।
গত বছরের ২২ নভেম্বর বিকেলে নগরীর পাথুরিয়াপাড়া থ্রি স্টার এন্টারপ্রাইজে কাউন্সিলর কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন কাউন্সিলর সোহেল ও হরিপদ সাহা। কাউন্সিলর সোহেল কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ও ওই ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। নিহত হরিপদ সাহা নগরীর ১৭নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য এবং সাহাপাড়া এলাকার বাসিন্দা। জোড়া খুনের ঘটনায় পরদিন ২৩ নভেম্বর রাতে কাউন্সিলর সোহেলের ছোট ভাই সৈয়দ মো. রুমন বাদী হয়ে ১১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৮ থেকে ১০ জনের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুসিক নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় সোহেল হত্যাকাণ্ডের পর ওই ওয়ার্ডে আর উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। কুসিক প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত অনুষ্ঠিত দু’টি নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা সোহেল। তিনি কুসিকের প্যানেল মেয়রও ছিলেন। হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই আলোচনা চলছিলো শেষ পর্যন্ত কে কাউন্সিলর প্রার্থী হচ্ছেন সোহেলের পরিবার থেকে। চলতি বছরের শুরুতেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন সোহেলের ভাই সৈয়দ মো. রুমন। এরপর তাঁর স্ত্রী শাহনাজ আক্তার রুনাও নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে মাঠে নেমে পড়েন। তবে গত ২৫ এপ্রিল কুসিক নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার পর থেকে দু’জনই জোরেশোরে মাঠে নেমে পড়েছেন। ঈদ উপলক্ষে ওই এলাকার বিভিন্ন দেয়ালে লাগানো হয় দু’জনের পোস্টার। খুঁটিতে ঝুলছে ফেস্টুন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও সরব হয়ে উঠেছেন দেবর-ভাবির কর্মী-সমর্থকরা।
দলীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী নির্ধারণে ৫ মে নগরীর টাউন হলে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। সভায় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ এবং দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর বিষয়ে মতামত দেন। পরে সকলের মতামতের ভিত্তিতে সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে সোহেলের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার রুনার নাম ঘোষণা করেন।
নাম প্রকাশ না শর্তে কাউন্সিলর সোহেলের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি জানান, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের যুবলীগ নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব প্রয়াত কাউন্সিলর সোহেলের পিএস ও বিশ্বস্ত লোক হিসেবে সবার কাছে পরিচিত ছিলেন। খুন হওয়ার পরও হাবিব কাউন্সিলরের পরিবারের সঙ্গে রয়েছেন। সোহেলের স্ত্রী রুনা ভোটের মাঠেও হাবিবকে সঙ্গে রেখেছেন। যেখানে যাচ্ছন সঙ্গে হাবিবকে রাখছেন। কাউন্সিলর সোহেল বেঁচে থাকাকালে তাঁর ভাই রুমন এবং হাবিব দু’জনই ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি হিসেবে নেতৃত্বে আসতে চেয়েছিলেন। এনিয়ে রুমন ও হাবিরের মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্বও দীর্ঘদিনের। সোহেল খুন হওয়ার পর রুমন চেয়েছিলেন হাবিবকে যেন তাঁর ভাবি সঙ্গে না রাখেন। কিন্তু সোহেলের স্ত্রী রুনা সকল কর্মকাণ্ড হাবিবকে নিয়েই পরিচালনা করছেন। এছাড়া সম্পত্তি ও আর্থিক বিষয় নিয়েও দেবর-ভাবির মধ্যে অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয় সোহেল খুন হওয়ার পর। সর্বশেষ রুমন নির্বাচন করার ঘোষণা দেওয়ার পর রুনাও নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ভাবি-দেবরের দ্বন্দ্ব অনেকটা প্রকাশ্যেই চলে আসে। এবারের ঈদেও দেবর-ভাবি পৃথক পৃথক ভাবে নেতাকর্মীদের নিয়ে এলাকায় ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নিহত সোহেলের স্ত্রী শাহনাজ আক্তার রুনা বলেন, আমার স্বামী দলমত নির্বিশেষে সকলের কাছে জনপ্রিয় ছিলেন। তার রেখে যাওয়া কাজগুলো সম্পন্ন করার জন্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এলাকার প্রতিটি মানুষ সোহেলের মতোই আমাকে আপন করে নিয়েছে। তারা চায় আমি কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে সোহেলের মতোই তাঁদের পাশে থাকি।
দেবরের সঙ্গে দ্বন্দ্বের প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের অভিভাবক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার দলের নেতাকর্মীদের মতামত নিয়েই আমাকে দলের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছেন। আমি আগামী ১১ মে মনোনয়ন ফরম কিনবো। আর তাঁর (দেবর) বিষয়ে আমি কোন কথা বলতে চাই না। তিনি কী করবেন, সেটা তাঁর ব্যাপার।
এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কাউন্সিলর সোহেলের ছোট ভাই সৈয়দ মো. রুমন বলেন, আমি নির্বাচনের চাইতে বেশি চিন্তায় আছি আমার ভাইয়ের হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে। এখনো মূলহোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে, এজন্য আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। সবার জীবনে ঈদ এলেও আমরা ভাইকে ছাড়া জিন্দা লাশের মতো বেঁচে আছি। ভাইয়ের সকল খুনিদের বিচার হলেই আমার কষ্ট কমবে।
রুমন আরও বলেন, ভাইয়ের স্বপ্নগুলো পূরণ করার জন্য আমি আগেই নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছি। এখন শুনেছি ভাবিও নির্বাচন করবেন। তিনি হাবিবকে নিয়ে নির্বাচনী কাজ করছেন। তবে আমিও প্রস্তুত আছি, ইনশাআল্লাহ। আমিও নির্বাচন করবো। এলাকার মানুষ সোহেল ভাইয়ের জায়গায় আমাকে দেখতে চায়। মানুষের অনুরোধেই চূড়ান্তভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।