শুক্রবার ২৯ gvP© ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement
  • প্রচ্ছদ » sub lead 1 » বুড়িচংয়ে মাদক কারবারিদের গুলিতে সাংবাদিক নিহত; আটক চার


বুড়িচংয়ে মাদক কারবারিদের গুলিতে সাংবাদিক নিহত; আটক চার


আমাদের কুমিল্লা .কম :
16.04.2022

জহিরুল হক বাবু ।। কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলায় ‘মাদক ব্যবসায়ী’র ছোড়া গুলিতে মহিউদ্দিন সরকার নাঈম নামে এক সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। বুধবার (১৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টায় উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তবর্তী হায়দ্রাবাদ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মহিউদ্দিন পাশ^বর্তী ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মালাপাড়া ইউনিয়নের অলুয়া গ্রামের মোশাররফ সরকারের ছেলে। তিনি আনন্দ টিভির ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক কুমিল্লার ডাক পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ছিলেন।
মহিউদ্দিন সরকার নাঈম এর ফেসবুক ওয়াল ঘুরে দেখা যায়, প্রতিদিনই মাদক ও মাদক কারবারীদের বিরুদ্ধে একাধিক স্ট্যাটাস দিতো সে। কুমিল্লাসহ বিভিন্ন এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হওয়া মাদক কারবারিদের সংবাদ ও ছবি আপলোড করতো সে।
বিভন্ন স্থানে মাদকের বিরুদ্ধে লিফলেট ও ফেস্টুন বিতরণের ছবিও ছিল তার ওয়ালে। সম্প্রতি সময়ে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের সাদেক মিয়ার ছেলে একাধিক মাদক ও অস্ত্র মামলার আসামী মোঃ রাজু (২৪) কে নিয়ে তাঁর ফেসবুকে লেখালেখি করে নিহত মহিউদ্দিন।
গত ৯ এপ্রিল মহিউদ্দিন তার ফেসবুকে রাজুর ছবি দিয়ে একটি পোস্ট দেয়, সেখানে লিখে ‘‘কুমিল্লার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় আশংকাজনকভাবে বেড়েছে মাদক কারবারিদের দৌরত্ম্য! তালিকাভুক্ত ও চিহ্নিতদের সাথে যোগ হয়েছে নতুন মাদক ব্যবসায়ীরা। এদের মধ্যে অন্যতম হলো রাজু যা সবাই চিনে ভূয়া বিজিবি গোয়েন্দা সদস্য হিসেবে।
মহিউদ্দিনের সহকর্মী মাহফুজ বাবু জানান, ফেসবুকে লেখার কারনে দু’দিন আগে রাজু প্রকাশ্যে মহিউদ্দিনকে চর-থাপ্পর মারে ও দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। এ নিয়ে মহিউদ্দিন নিজের ফেসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাস দেয়।
বুধবার রাতে নিহত সাংবাদিক মহিউদ্দিনের সঙ্গে থাকা পলাশ নামে এক যুবক জানান, রাত ৯ টার কিছু আগে মহিউদ্দিনের মোবাইলে একটি ফোন আসে। তখনই মহিউদ্দিন, পালাশ ও মনির একটি মোটরসাইকেল যোগে সীমান্তে যায়। তারা সীমান্তের কাছাকাছি একটি দোকানে বসে ছিলেন। এ সময় রাজুর নেতৃত্বে একটি দল এসে মহিউদ্দিনের ওপর একাধিক গুলি চালায়। গুলিতে মহিউদ্দিন মাটিতে লুটিয়ে পরলে, লাঠি দিয়ে তার উপর হামলা চালায় ১০/১৫ জন সন্ত্রাসী। হামলাকারীরা এসময় তাদেরকেও পিটিয়ে আহত করে। পরে আত্মরক্ষার্থে মহিউদ্দিনকে ফেলে রেখে মনির ও পলাশ পালিয়ে চলে আসে।
ওই এলাকার রাব্বি ও রুবেল নামের দুই যুবক বলেন, রাত সাড়ে ৯টার দিকে মহিউদ্দিন সরকার নাঈমকে আহত অবস্থায় দু’জন বিজিবি সদস্য এনে তাদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে নির্দেশ দেন। এ সময় বিজিবি সদস্যরা জানান, সীমান্তে মারামারিতে আহত হয়েছে মহিউদ্দিন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দিতে বলে তারা চলে যায়। পরে ওই দুই যুবক মোটরসাইকেল যোগে সীমান্ত থেকে শংকুচাইল এলাকা পর্যন্ত আনে। পরে শংকুচাইল থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশা যোগে বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মুজাহিদুল ইসলাম তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে বুড়িচং থানার উপ-পরিদর্শক মামুনসহ একদল পুলিশ হাসপাতালে পৌঁছায়। এদিকে রাত ১টায় কুমিল্লা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার ফারুক আহম্মেদসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বুড়িচং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মীর হোসেন মিঠু জানান, হাসপাতালে আনার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। নিহতের মাথা ও শরীরে একাধিক গুলির চিহ্ন রয়েছে।
খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে আসেন নিহত মহিউদ্দিনের মামা এনামুল হক। তিনি জানান, নিহত মহিউদ্দিনের বাবা পুলিশের কন্সটেবল ছিলেন, তিন মাস পূর্বে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করেন। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে মহিউদ্দিন ছিলো সবার বড়। সে কুমিল্লা ব্রিটেনিয়া ইউনিভার্সিটিতে অধ্যায়নরত ছিলেন। পড়ালেখার পাশাপাশি সে সংাবাদিকতা করতো।
এদিকে হাসপাতালে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করে বৃহস্পতিবার সকালে মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহটি পরিবারের নিকট হস্থান্তর করে পুলিশ। পরে বাদ আসর জানাজা শেষে পারিবারিক করস্থানে দাফন করা হয় তাকে।
মাদক কারবারীদের গুলিতে সাংবাদিক নিহতের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কুমিল্লার সাংবাদিক সমাজ। বুড়িচং প্রেসক্লাবের সভাপতি কাজী খোরশেদ আলম বলেন, মহিউদ্দিন সরকার মাদক ব্যবসায়ীদের চোরাচালান নিয়ে প্রতিবাদ করতেন। সম্প্রতি মাদক ব্যবসায়ী রাজু গং নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে এ নিয়ে বিরোধের জেরেই তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। তিনি হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।
এদিকে সাংবাদিক নিহতের ঘটনায় ৪ আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর হোসেন জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে দুজন এজাহার নামীয় ও দুজন অজ্ঞাতনামা আসামি।
গ্রেফতারকৃত এজহার নামীয় আসামীরা হলেন মোঃ ফরহাদ মৃধা মনির (৩৮) ও মোঃ পলাশ মিয়া (৩৪)। বাকীরা হলো মোঃ নূরু মিয়া ও সুজন।
ওসি আরো জানান, গ্রেফতারকৃত মনির ও পলাশ মামলার ১ নম্বর আসামি রাজুর সঙ্গে যোগসাজশে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ভিকটিমকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। হত্যাকাণ্ড শেষে মোটরসাইকেল রেখে পালিয়ে যায় তারা। এছাড়া হত্যাকাণ্ড সংগঠনে এবং পরে আসামিদের পালাতে নুরু ও সুজন সহায়তা করে।
তিনি আরও বলেন, ঘটনাস্থল থেকে ফেলে যাওয়া মনির ও পলাশের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আমরা সাত দিনের রিমান্ড চাইবো।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার নিহত সাংবাদিক মহিউদ্দিন সরকার নাঈম এর মা নাজমা আক্তার বাদী হয়ে ৩ জন নামীয় ও অজ্ঞাত আরে ৬ জনকে আসামি করে বুড়িচং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের সাদেক মিয়ার ছেলে একাধিক মাদক ও অত্র মামলার আসামি মো. রাজুকে (২৪)