জহিরুল হক বাবু, বুড়িচং ।। অন্য এক নারীর সঙ্গে স্বামীর সম্পর্ক আছে স্বামীর। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য-বাকবিতণ্ডা হয়। সামাজিকভাবে মীমাংসার চেষ্টা করে বিষয়টির সুরাহা না হওয়ায় শাহ আলমের প্রথম স্ত্রী খায়রুন নাহার ঝুনু আত্মহত্যা করেন। শনিবার মধ্যরাতে তিনি আত্মহত্য করেন। রোববার বেলা সাড়ে ১১টার সময় তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মাধবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেবপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন।
আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেছি। এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়েরসহ অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইননানুগ প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হবে।
নিহত খায়রুন নাহার ঝুনুর দুই সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে (১৬) ইস্পাহানী স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। আর ছোট ছেলে (১৪) ঢাকার কেরানীগঞ্জ এলাকায় একটি মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী।
নিহত খায়রুন নাহারের মেয়ে বলেন, গত তিন বছর আগে আমার বাবা শাহআলম প্রতিবেশী লাকি আক্তার পাখির সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে প্রায়ই আমার বাবা আমার মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করতো। এছাড়াও গত ১৪ জুন কুমিল্লা নগরীর মুন্সেফ কোয়ার্টার এলাকায় একটি বাসায় ওই মহিলা ও আমার বাবা আছে এমন খবরে আমার মা ওই বাসায় গিয়ে ঘটনার সত্যতা পায়। এ ঘটনার ৩ দিন পর আমার মা কুমিল্লা পুলিশ সুপার কার্যালয়ের নারী ও শিশু নির্যাতন সেলে একটি অভিযোগ দায়ের করে।
শনিবার রাতে মা-বাবার মধ্যে ঝগড়া হয়। আমার মা বাবাকে বলেন, হয় আমার সাথে না হয় ওই মহিলার সাথে থাকো। এ নিয়ে তর্কাতর্কির মধ্যে আমার মা রাত দেড়টায় বিষপান করে। পরে আমি বিষয়টি টের পেয়ে যাই। তখন আমার মা বলেন, তোমরা আমাকে মাফ করে দিও। পরে আমার আব্বু আম্মাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে প্রথমে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়, পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকায় নেয়ার পথে আম্মা মারা যায়।
স্থানীয় সমাজ সেবক রফিকুল ইসলাম বলেন, শাহ আলমের কর্মকাণ্ড নিয়ে তার স্ত্রী খায়রুন নাহার আমাদের নিকট অভিযোগ করে। এ নিয়ে সালিশ দরবার করে কোন সুরাহা হয়নি। আমরাও চাই সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক।
অভিযোগের বিষয়ে লাকি আক্তার পাখি জানান, আমাদের সম্পর্ক সাড়ে ৩ বছর ধরে। গত ২০২০ সালের শেষের দিকে আমরা আইনসম্মতভাবে বিয়ে করি। বিয়ের পর থেকে আমি আমার বাবার বাড়িতে অবস্থান করি। আমার স্বামী মাঝে মাঝে আমার বাড়িতে আসতো। তবে কখনো আমি তাকে তার বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করিনি।
তিনি আরও বলেন, পাঁচ বছর আগে আমার পূর্বের স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি হয়। কারণ আমার স্বামী নেশাগ্রস্ত ছিলো। আমার দুই মেয়ে। একটা অবলম্বন দরকার। পাশাপাশি আমার স্বামী মো. শাহ আলম বলেছেন, ইসলাম আইন অনুযায়ী ভরণপোষণ দিতে পারলে ৪ বিয়ে জায়েজ আছে। তাই আমিও রাজি হই।
এদিকে স্ত্রীর মরদেহ বাড়িতে রেখে পালিয়ে যায় শাহ আলম। বিষয়টি নিয়ে শাহ আলমের সাথে কথা বলার জন্য মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।