মঙ্গল্বার ১৯ gvP© ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


সাজেদার জীবন যুদ্ধ…


আমাদের কুমিল্লা .কম :
30.09.2021

আবু সুফিয়ান রাসেল।।
কুমিল্লায় বাণিজ্যিকভাবে বই বাঁধাই শুরু করেন সাজেদা বেগম। স্বামীর এ পেশাকে আগলে রেখেছেন তিন যুগ। তবে করোনার দুঃসময়, স্টাপলার, পাঞ্চ মেশিনের যুগে ভালো নেই এ পেশার মানুষরা।
সূত্রমতে, কুমিল্লার ছাপাখানার শতবছরের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। বই বাঁধাইকারীরা ছাপাখানা ভিত্তিক বেতনভুক্ত কর্মী হয়ে কাজ করতেন। পুরুষ কর্মীদের সাথে আশির দশকের পর থেকে যুক্ত হন সাজেদা বেগম। ১০ বছর বয়সে নাঙ্গলকোট উপজেলার সাজেদা বেগমের সাথে বিয়ে হয় মুরাদনগরের লিল মিয়ার।
স্বামী-স্ত্রী নগরীর চর্থায় ভাড়া বাসায় থাকা শুরু করেন। লিল মিয়া রাজগঞ্জ বাজারের মাকসুদ মিয়ার আনোয়ার এন্ড সন্স দোকানে বই বাঁধাই করতেন। ঘরে একা, তাই বউকে প্রতিদিন কর্মস্থলে নিয়ে আসতেন লিল মিয়া। লিল মিয়াকে বই বাঁধাই করার কাজে সহযোগিতা করতেন সাজেদা। বিয়ের পর একটি পুত্র সন্তানের জননী হন সাজেদা। পাঁচ বছরের সন্তান রেখে মারা যান লিল মিয়া। স্বামীর মৃত্যুর পর সে কাজের দায়িত্ব নেন নিজে। তিন বছর স্বামীর কর্মস্থলে চাকরি করেন। এরপর নিউ মার্কেটের মাহবুব মিয়ার বই নিকেতনে বাঁধাই করার কাজ করেন এক বছর। বেতন কম তাই নিউমার্কেটের সামনে নিজে বসে বই বাঁধাই শুরু করেন।
নগরীর বই বাঁধাইকারী মো. মাহবুব জানান, ওনি (সাজেদা) আমাদের বহু আগ থেকে বই বাঁধাই করেন। তবে সন তারিখ তো মনে নেই। এ পেশার চাহিদা কমছে। স্টাপলার, পাঞ্চ মেশিনসহ আধুনিক মেশিনে কাজ হয়। করোনার কারণে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কাজ তেমন নেই। দিনে এক-দেড়শ’ও আয় হয় না।
সাজেদা বেগম জানান, স্বামী থেকে কাজ শিখে বিভিন্ন দোকানে চাকরি করেছি। মহিলা মানুষ সবাই ঠিকঠাক বেতন দেয় না। রাগারাগি করে নিজেই দোকান নিয়ে বসেছি। আমি যখন দোকান নিয়ে বসি, তখন মানুষ তাকিয়ে থাকতো। কেউ হাসতো। কারণ বাইরে বই বাঁধাই করার দোকান আগে কুমিল্লায় ছিলো না। তিন চার বছর পর পুরুষরাও আমার সাথে দোকান নিয়ে বসেছে। এতে আমার ভালো হইছে। প্রায় ৩৫-৩৬ বছর নিউ মার্কেট বই বাঁধাই করি। বই বাঁধাই করে এক ছেলেকে বড় করেছি। তার নাম রুবেল। সে অটোরিকশা চালক, তার এক সন্তান। এখনও আমরা চর্থা ভাড়া বাসায় থাকি। বাঁধাই দাম সম্পর্কে বলেন,স্কুলের বই ১৫-২০ টাকা। কোরআন হাদিসের বই যে যা হাদিয়া দেয়।
মোটা পুরাতন বইও বাঁধাই করি। বড় হাজিরা খাতা, রেজিস্ট্রার খাতা, অফিসারদের বড় কিছু কাজ আলোচনা সাপেক্ষে করে থাকি। তবে বড় কাজ ৬ মাস, বছরে একবার পাই।
ক্যাপশন: নিউ মার্কেটে বই বাঁধাই করছেন সাজেদা বেগম