মঙ্গল্বার ১৯ gvP© ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


কিছুই পেলো না কৃষক জীবন মিয়ার পরিবার


আমাদের কুমিল্লা .কম :
16.09.2021

পল্লী বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে কৃষকের মৃত্যু

মাহফুজ নান্টু।।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলায় জমিতে ধান কাটতে গিয়ে জমির ওপর ঝুলে থাকা পল্লী বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে কৃষক জীবন মিয়ার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়। প্রান্তিক কৃষক জীবন মিয়ার মৃত্যুর ২৩ দিন পার হলেও পল্লী বিদ্যুতের আশ্বাস ছাড়া কোন ক্ষতিপূরণ পায়নি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি। আর উপার্জনক্ষম লোকটিকে হারিয়ে পরিবারটি এখন চরম মানবেতর দিন পার করছে।
নিহত কৃষক জীবন মিয়া সরকারের এক ছেলে ও চার মেয়ে। তিন মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়েটি দশম শ্রেণিতে লেখাপড়া করছে।
নিহত কৃষক জীবন মিয়ার ছেলে সজিব মিয়া সরকার জানান, আমডার ভিডা ছাড়া আর কোন জমিন নাই। আব্বায় মাইনষের জমিন চাষ করতো। মাঝে মইধ্যে অন্যর জমিনে কামলা খাটতো। আমি নোয়াখালীতে একটা ব্যাটারির দোহানে চাকরি করি। আব্বায় মরণের পরে আমি বাড়িত আই। আমার বেতনের কয়ডা টেকা আর আব্বার আয় দিয়া চলতো আমডার সংসার। এহন আব্বায় নাই। খুব কষ্টে আছি ভাই। কারো কাছে কইতামও পারি না। সইতামও পারি না।
কান্নারত কণ্ঠে সজিব জানান, আম্মার বয়স হইছে। শইলডাও ভালা যাইতেছে না। একটা ছোডু বইন আছে। সংসারটা নিয়া বহুত কষ্টে আছি। কেউ আমডার লাইগ্গা একটু চিন্তা করে না।
পল্লী বিদ্যুতের ভুলে বাবার মৃত্যু হয়েছে। অথচ আইজ ২৩ দিন পার হইলো পল্লী বিদ্যুতের লোকজন একবার আইয়া হুদা কইয়া গেছে। তারা কইলো কাইল ১৫ তারিখ সমাধান দিবো। কিন্তু তারা আইলো না । মুসা সরকার নামে আমডার বংশের এক চাচা দায়িত্ব নিছে বিষয়ডা সমাধান করবো। আইজ চাচার কাছে যায়াম। দেহি চাচায় কি কয়।
চাচা মুসা সরকারের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, তারা কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১এর কোম্পানীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম একেএম আজাদের সাথে কথা হয়েছে। তারা বলেছেন ১৫ বা ১৬ সেপ্টেম্বর বিষয়টা সমাধান করবেন। আজ আবার আমরা যোগাযোগ করবো। দেখি কি হয়।
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ এর কোম্পানীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম একেএম আজাদের সাথে যোগাযোগ হয়। ডিজিএম আজাদ বলেন, আমরা জীবন মিয়ার পরিবারের জন্য আলাদা করে কোন ক্ষতিপূরণ দিতে পারবো না। আমরা সর্বোচ্চ অফিসে কর্মরতদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে তার পরিবারকে সহযোগিতা করবো।
পল্লী বিদ্যুতের ভুলে কৃষক জীবন মিয়ার মৃত্যু হয়েছে, তাহলে অফিসিয়ালি কেন জীবন মিয়ার পরিবার ক্ষতিপূরণ পাবে না- এমন প্রশ্নে ডিজিএম একেএম আজাদ বলেন, এমন কোন বিধান বা আলাদা কোন ফান্ড নেই।
তদন্ত কমিটি দুই কার্য দিবসে রিপোর্ট দেয়ার কথা ছিলো, রিপোর্ট কি এসেছে-এমন প্রশ্নে ডিজিএম আজাদ বলেন, তদন্ত রিপোর্টটা আমাদের পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ এর ম্যানেজার মহোদয়ের কাছে সম্ভবত দেয়া হয়েছে। এর বেশি আমি কিছু জানি না।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ এর ম্যানেজার মকবুল হোসেনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, তদন্ত রিপোর্টে এসেছে বজ্রপাতে পল্লী বিদ্যুতের তার ঝুলে ছিলো।লাইন সংস্কার না হওয়ায় তারে জড়িয়ে জীবন মিয়ার মৃত্যু হয়।
তাহলে জীবন মিয়ার পরিবার এ ক্ষতিপূরণ পাবে কি-এমন প্রশ্নে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ এর ম্যানেজার মো. মকবুল হোসেন বলেন, আমাদের কোনও ফান্ড নেই। বেতন হলে সবার থেকে চাঁদা তুলে সহযোগিতা করবো।

উল্লেখ্য, গত ২৫ অগাস্ট কুমিল্লার মুরাদনগরে ধান কাটতে গিয়ে ঝুলে থাকা বিদ্যুতের তারে জড়িয়ে জীবন মিয়া সরকারের মৃত্যু হয়। উপজেলার গুঞ্জর মধ্যপাড়া এলাকায় মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত জীবন মিয়ার বাড়িও ওই এলাকায়।