মঙ্গল্বার ১৯ gvP© ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


শিক্ষার্থীর মুখে টমেটোর রঙিন হাসি


আমাদের কুমিল্লা .কম :
10.09.2021

মাহফুজ নান্টু।
এখনো শীত আসেনি। তবে তার আগেই মাচায় ঝুলে আছে শীতকালীন সবজি টমেটো। সবুজ টমেটোগুলো সূর্যের আলোয় ঝলমল করে।
এমন দৃশ্য দেখা গেলো বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তবর্তী কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে।
ওই গ্রামের মেধাবী ছাত্র খায়রুল আলম। তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি করোনাকালে নিজের জমিতে বারী-৪ টমেটো চাষ করেছেন। চমৎকার ফলন হয়েছে। তাই বেশ আনন্দিত খায়রুল।
মো. খায়রুল আলম ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার নারায়পুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। তিনি চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার ভুলদীঘি কামিল মাদ্রাসার কামিল ২য় বর্ষের ছাত্র।
শিক্ষার্থী খাইরুল জানান, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নারায়পুর গ্রামে পাহাড়ের ঢালুতে ১৫০ শতক জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে পলি সেট নির্মাণ করে বারী-৪ টমেটো চাষ করেছেন।
খায়রুল জানান, টমাটো চাষের জন্য জমি প্রস্তুত, সার, ওষুধ ও পরিচর্যা বাবদ তার ৫ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে তার জমিতে যে পরিমাণ টমেটোর ফুল এবং যে অবস্থা বিদ্যমান রয়েছে তাতে যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে তার জমি থেকে অন্তত ২০ লাখ টাকার টমেটো বিক্রি করতে পারবেন।
খায়রুল জানান, এখন পর্যন্ত তার জমি থেকে প্রতি কেজি ১শ টাকা দরে ৫০ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন। টমেটো চাষের শুরুর নেপথ্যের গল্পটা জানান খারুল আলম।
তিনি বলেন, করোনার কারণে গত বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। চাঁদপুর থেকে কুমিল্লা নিজ বাড়িতে চলে আসি।
কিছু করে সময়টাকে কাজে লাগাতে চিন্তা করি। তাই অলস সময়টাকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিই। আমাদের বাড়ির পাশে ছোট ছোট টিলা রয়েছে। তার নীচে প্রচুর অনাবাদি জমি রয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী ৫০ শতক জমি তৈরি করি। জমি তৈরির পাশাপাশি সিলেট কমলগঞ্জ থেকে উন্নত জাতের বারী-৪ টমেটোর গ্রাফটিং কলমের চারা সংগ্রহ করি। দিনরাত পরিশ্রম শুরু করি। স্বপ্ন দেখি। আমার জমিতে টমেটোতে পরিপূর্ণ হবে। আমার স্বপ্ন বাস্তব হয়।
গত বছরের সফলতা আমাকে চলতি বছর উৎসাহ জোগায়। এ বছর আমি দেড় একর (১৫০ শতক) জমিতে টমেটো চাষের সিদ্ধান্ত নিই।
১৭টি পলি সেট নির্মাণ করি। এতে প্রায় ছয় হাজার বারী-৪ টমেটোর গ্রাফটিং কলমের চারা রোপন করি। স্থানীয়ভাবে আমার জমির টমেটোর অনেক চাহিদা। পাকা টমাটো ১ শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।
খায়রুল আরো বলেন, সম্প্রতি তার জমি থেকে টমেটো কিনতে পাইকাররা যোগাযোগ শুরু করেছেন।
স্থানীয় কৃষক আবুল হাশেম মুগ্ধ হয়েছেন খায়রুলের টমাটো চাষে। আবুল হাশেম বলেন, খাইরুল একটা শিক্ষিত পোলা। হেতে যেই কামডা করছে তা কইয়া শেষ করন যাইতো না। আমডা মনে করি অইন্য পোলাপাইনডিও যদি হুদাই বইয়া না থাইক্কা কাম করতো খায়রুইল্লার মত ভালো হইতো।

মাসুম আলম নামে এক ব্যবসায়ী খায়রুলের বাগানে এসেছেন। তিনি জানান, ১০ কেজি টমেটো কিনেছেন। মাসুম জানান, খায়রুলের টমেটো কীটনাশক মুক্ত। খায়রুলের এমন উদ্যোগটাকে স্বাগত জানাই।
খায়রুল জানান, তার এমন উদ্যোগের নেপথ্যে অবশ্যই কৃষি অফিসের সহযোগিতা অনস্বীকার্য।
বিষয়টি নিয়ে কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান জানান, আমরা কৃষি সম্পর্কিত যে কোন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। শিক্ষার্থী খায়রুল পরিশ্রম করেছে। বারি ৪ জাতের টমেটো চাষ করেছে। আমরা তাকে প্রয়োজনীয় সব রকম পরামর্শ দিয়েছি। অন্যান্য আরো কিছু সহযোগিতা করেছি। নিঃসন্দেহে বারি ৪ জাতের টমাটো স্বাদে গুণে অনন্য। আমরা চাই অন্যরাও কৃষি নিয়ে এগিয়ে আসুক। আমরা সব রকম সহযোগিতা করবো।