এইবারের মহামারিতে হবে মায়েদের উদ্বেগ বেড়েছে নানা কারণে ।গর্ভাবস্থায় কি টিকা নেওয়া উচিত ? কোনও ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে না তো ? হঠাৎ করে করোনা সংক্রমিত হয়ে পড়লে কী করণীয় ?বাচ্চার কোনও মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে না তো ?
মহামারির কারণে মানসিক চাপ বেড়েছে দুনিয়া জুড়েই ।স্বাভাবিক ভাবেই গর্ভবতী মায়েদের অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়ছেন ।তবে গত দেড় বছরের অভিজ্ঞতায় আমরা এখন অনেক বেশি সচেতন এবং করোনা বিষয়ে মোটামুটি সবাই কমবেশী অবগত ।গর্ভবতীদের জেনে রাখা ভালো যে, করোনাভাইরাসের সঙ্গে গর্ভপাত বা ভ্রুণের ক্ষতি বা বাচ্চার বৃদ্ধির কোনও রকম সম্পর্ক রয়েছে এখন পর্যন্ত কোনও গবেষণায় উঠে আসেনি। ৯০ শতাংশ কোভিড পজিটিভ গর্ভবতী মায়ের সুস্থ সন্তান ধারণ করেছেন ।
আর পাঁচজনের মতো গর্ভবতীদেরও কোভিড বিধি ( স্বাস্থ্যবিধি সমূহ) যথাযথ ভাবে মেনে চলা উচিত ।কোনও রকম উপসর্গ দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে কোভিড পরীক্ষা করিয়ে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে ।প্রয়োজনমতো ওষুধ শুরু করে দিতে হবে শুরু থেকেই ।
মনে রাখতে হবে গর্ভাবস্থায় মায়ের স্বাস্থ্যকেই সর্বাপেক্ষা গুরুত্ব দেয়া হয় বেশি করে ।তাই সময়মতো দেরী না করে কোভিডের টিকা দিতে হবে সবার আগে। জানা দরকার কোভিডের টিকা বা প্রতিষেধক সদ্য তৈরি হয়েছে ।গর্ভবতীদের উপর টিকার প্রভাব নিয়ে আলাদা করে গবেষণার কথা এখনও আমাদের সেভাবে জানা নেই ।তবে ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রয়া যেহেতু দেখা যায়নি ,তাই এগুলো নিরাপদ বলেই ধরে নেয়া হচ্ছে ।সব গর্ভবতী মহিলাদের কোভিডের দুই ডোজ টিকা দেয়াই সকলের লক্ষ্য হওয়া উচিত ।যেহেতু অনেক মহিলাই গর্ভাবস্থায় টিকা নিতে খুব একটা উৎসাহী নন,তাঁদের যথাযথ কাউন্সেলিং করিয়ে আশ্বস্ত করতে হবে।
মহামারির প্রভাব দেখে অনেকেই কোভিড পরীক্ষা করতে ভয় পাচ্ছেন ।যদি পরীক্ষার ফল পজিটিভ আসে ,তাহলে মানসিক ভাবে বিপর্যস্থ বা ভেঙে পড়ছেন প্রায় সকলেই ।গর্ভাবস্থায় কোভিড সংক্রমণ হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে ।আইসোলেশন (নিভৃতবাস) এ থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ শুরু করতে হবে। নিয়মিত কিছু পরীক্ষা করিয়ে পরিস্থিতি নজরে রাখতে হবে ।অনেক গর্ভবতী মা কোভিড উপসর্গহীন বা মৃদু উপসর্গের সঙ্গে সুস্থ হয়ে যান। তাঁদের সন্তানের জন্মের সময় কোনও রকম জটিলতা তৈরি হয়নি ।খুব অসহায় লাগলে এমন মায়েদের সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে যাঁরা গর্ভাবস্থায় সংক্রমিত হয়েছিলেন ।
অনেক উপসর্গহীন গর্ভবতীদের কোভিড ধরা পড়তে পারে একেবারে শেষের দিকে কিছু পরীক্ষা করার সময়ে। কিন্তু এই সময়ে প্যানিক বা ভীত হওয়া যাবে না। উপসর্গহীন হলে বাড়িতে দু’সপ্তাহ আইসোলেশনে থাকতে হবে ।ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া ,গায়ে ব্যথা জ্বর বা কাশি হলে প্রয়োজনীয় ওষুধ খেতে হবে। খুব মারাত্মক কাশি বা শ্বাসকষ্ট হলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন ।মাঝারি উপসর্গ বা গুরুতর উপসর্গ দেখা দিলে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অতীব জরুরী।
বর্ষার এই সময়ে মশার উপদ্রব বাড়ে। তাই ডেঙ্গু ,ম্যালেরিয়া ,টাইফয়েড ,ডায়রিয়ার মতো রোগের আশংকাও বাড়ে ।এছাড়াও নানা রকম ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়া জনিত রোগ এই সময়ে বাসা বাঁধে ।এছাড়াও জ্বর কাশি অ্যালার্জির মতো নানাবিধ সমস্যা তো আছেই ।গর্ভবতীদের খাওয়াদাওয়ার প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে ।ফল সব্জি খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে ।খাবার সারাক্ষণ ঢেকে রাখতে হবে ।পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে ।অবশ্যই দিনে অথবা রাতে ঘুমানোর আগে মশারি টাঙিয়ে নিতে হবে ।এমন পোশাক পরতে হবে যাতে মশার কামড় না খেতে হয় ।ঘরের আশেপাশে পানি জমতে দেয়া যাবে না ।নিজে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকাও জরুরী ।অবশ্যই টিকা নিতে হবে ।এবং যেকোনও শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসকের প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহন বাণ্ছনীয় ।
লেখক : সাবেক পরিচালক,কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সাবেক সিভিল সার্জন,কুমিল্লা জেলা।