তৈয়বুর রহমান সোহেল
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক কাজী আপন তিবরানি। যিনি ভিক্টোরিয়া ই-কমার্সের উদ্যোক্তা। যার হাত ধরে এখন দেড় হাজার তরুণ-তরুণী অনেকটাই স্বাবলম্বী। কেউ হয়েছেন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, কেউ খুদে ব্যবসায়ী।
করোনার প্রভাব শুরু হওয়ার পর অনেক ছেলেমেয়ে, যারা প্রাইভেট পড়িয়ে দিন চালাতো, অনেকের প্রাইভেট পড়ানো বন্ধ হয়ে যায়। পরীক্ষাগুলো ঝুলে যাওয়া, শহরে দাঁড়িয়ে থাকার মতো কোনো অবলম্বন না থাকা, অভাব-অনটনের সংসারের ভার বইতে না পারা এমন অনেক বেকার ছেলেমেয়ে কাজী আপন তিবরানিকে ফোন করে টিউশনি দেওয়ার কথা বলতে থাকে। কিন্তু এত বেশি ছেলেমেয়েকে টিউশনি পাইয়ে দেওয়ার মতো সামর্থ্য ছিল না তার। তারপরও এসব বেকার তরুণ-তরুণীর পাশে দাঁড়ানোর সংকল্প করেন তিনি। উপায় বের করেন কীভাবে কম পুঁজি বা পুঁজি না খাটিয়ে উদ্যোক্তা বা ছোট ব্যবসায়ী হওয়া যায়।
২০২০ সালের আগস্টেও যখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলার আভাস নেই, তখন ওই মাসের ১১ তারিখ তিনি ভিক্টোরিয়া ই-কমার্স নামে একটি ফেসবুক গ্রুপ খোলেন। ১০জন অ্যাডমিন ও মডারেটর রাখেন সহযোগী হিসেবে। ধীরে ধীরে সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকে। তারপর আয়োজন করেন ছোট ছোট ট্রেনিংয়ের। সেখানে আধুনিক যুগে কীভাবে নেতৃত্ব দিতে হয়, কীভাবে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা যায়, মানুষের সাথে যোগাযোগ করা যায়, ইংরেজিতে ভালো হওয়া যায়, ছোট ব্যবসার কর্মকৌশল, ই-কমার্সের নানা পদ্ধতিসহ নানান বিষয়ে প্রশিক্ষিত করে তোলা হয় তরুণ-তরুণীদের। অল্প সময়ের ব্যবধানে পাল্টে যায় দৃশ্যপট। সেপ্টেম্বর গোড়ার দিক থেকেই অনেক তরুণ-তরুণীর কাজের সফলতা আসতে থাকে। অল্প অল্প পুঁজিতে সফল হতে থাকেন অনেকে। শিক্ষিত মেয়েরা, যারা হাতের কাজ, সেলাইয়ের কাজ ও রান্নাবান্নায় ভালো; অর্থাৎ যে যে বিষয়ে দক্ষ তা নিয়ে বেকারত্ব মোকাবিলায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। বর্তমানে ভিক্টোরিয়া ই-কমার্সের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়া বা স্বাবলম্বিতার দিকে যাওয়া দেড় হাজার তরুণ-তরুণীর প্রায় এক হাজারই নারী।
এমনই একজন কুমিল্লার সদর দক্ষিণের মিনা আক্তার। ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের মাস্টার্স পরীক্ষার্থী ছিলেন। সিজারিয়ান অপারেশনের কারণে ওই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি। এর মাঝে করোনার বিস্তার শুরু হওয়ায় চাকরির সুযোগ সীমিত হয়ে যায়। স্বামী একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। কম বেতন, সাথে অনেক দূরে ট্রান্সফার, এসব কারণে চাকরি ছেড়ে বেকার হয়ে যান তিনি। এদিকে ঘরে অভাব। বাচ্চার মুখে ভালো কিছু তুলে দিবেন এমন অবস্থা নেই। তাই ভিক্টোরিয়া ই-কমার্স গ্রুপ চালু হওয়ার পরপরই বিভিন্ন পোস্ট দেখে চিন্তা করতে থাকেন কীভাবে নতুন কিছু শুরু করা যায়। পরামর্শ নেন কাজী আপন তিবরানির।
মিনা জানান,‘ আমি খাদের কিনারায় পড়ে গিয়েছি। কী করবো ভাবতে পারছিলাম না। তিবরানি ম্যাডাম পরামর্শ দিয়ে বলেন, গরুর বট নিয়ে কাজ করতে। কুমিল্লায় এর ভালো চাহিদা। তাই স্থির করলাম, শুরু করি। গ্রুপে পোস্ট দেওয়ার পরপর ভালো সাড়া পাই। প্রথমে ১২০০ টাকা দিয়ে শুরু করি। দিনদিন অর্ডার বাড়তে থাকে। এখন সব বাদ দিয়ে মাসে ১০হাজার টাকার মতো লাভ হয় আমার। নারী বলে প্রথম দিকে বাবা ও শ^শুর বাড়ির কেউ উৎসাহ জোগাননি, তার ওপর খুব কষ্টের কাজ এটি। তাই বলে দমে যাইনি। এখন পরিবারে অবদান রাখতে পারছি বলে গর্ববোধ করছি।’
আরেকজন কক্সবাজারের ওয়াহিদা আজিজ। কক্সবাজার সরকারি কলেজের এমবিএর ছাত্রী তিনি। বাড়িু রামু উপজেলায়। পরীক্ষা ঝুলে যাওয়ায় প্রচুর অলস সময় পান। তাড়না থেকেই নতুন কিছু করার ইচ্ছা জাগে তার। প্রথমে মেয়েদের পোশাক নিয়ে কাজ শুরু করেন। ভিক্টোরিয়া ই-কমার্স গ্রুপে যুক্ত হওয়ার পর দেখতে পান যে যে জেলার, সে সে জেলার ঐতিহ্যবাহী জিনিস বিক্রি করে সফল হচ্ছে। তাতে ভোক্তার মাঝে বিশ^াস সৃষ্টি হয়, গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে।
ওয়াহিদা আজিজ জানান,‘ আমার এলাকার বেশিরভাগ মানুষ রক্ষণশীল, আমার পরিবারও। যেকোনো কাজে বারবার বাধা পাচ্ছিলাম। তারপরও ভাবলাম, নিজের ভেতর যা করার তাড়না, তাতে সফল হতেই হবে। অক্টোবরে ভিক্টোরিয়া ই-কমার্সে যখন কক্সবাজারের শুঁটকি নিয়ে কাজ শুরু করি, ওই মাসেই প্রায় সবমিলিয়ে এক লাখ টাকার মতো বিক্রি হয় আমার। এরপর আবার কিছুদিন প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যবসা বন্ধ রাখি। তারপর ম্যাডাম (কাজী আপন তিবরানি) আবার পরামর্শ দিলেন শুরু করতে, সাথে আরও কিছু ঘনিষ্ঠ মানুষের সমর্থন পাই। এখন পুনরায় আবার ব্যবসা চালু করেছি। অনলাইনে অর্ডারও বেশ ভালোই পাচ্ছি।’
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেন রীপা আক্তার। কুমিল্লার বুড়িচংয়ের এই মেয়ের স্বামী গ্রামীণ চিকিৎসক, বর্তমানে জটিল রোগে আক্রান্ত। রীপা গ্রুপটি শুরুর দিকে সবজি নিয়ে কাজ করতেন। গ্রামের বিভিন্ন জমি থেকে তাজা সবজি সংগ্রহ করে অনলাইনে অর্ডার নিয়ে ডেলিভারি দিতেন। তাতে মোটেও সফল হননি তিনি। উল্টো পরিবারের ধমক সহ্য করতে হয় তাকে।
রীপা জানান,‘ ছোটবেলা থেকে নানা কারুকাজ করে জামা বানাতে পারতাম। নিজে কিছু করার নেশা আগে থেকেই ছিল। শহরে কিছু প্রাইভেট পড়াতাম। করোনার কারণে বন্ধ হয়ে যায়। তারপর শরণাপন্ন হই ম্যামের। প্রথমে সবজি বিক্রির পরামর্শ দেন তিনি। তাতে অসফল হই। আবার ম্যামের সাথে পরামর্শ করি। তিনি বললেন, কাজের ধরন পাল্টাও। গরুর ড্রাই বট, যেটা ১৫দিনেও নষ্ট হয় না, বাংলাদেশে এই ব্যবসার তেমন প্রচলন নেই, এটা নিয়ে কাজ শুরু করি। পাশে পাই ছোট ভাইকে। শুরুতেই সফলতা আসে। প্রথমে ৩৫০ টাকা পুঁজি দিয়ে শুরু করি। এখন ভালো বিক্রি হচ্ছে। বাইরের রাষ্ট্রে যাওয়ার সময় অনেকেই আমার কাছ থেকে বট নিয়ে যান। স্বামী ও স্বামীর পরিবার দারুণ সহায়তা করে যাচ্ছেন। নিজের একটা আইডেনটিটি তৈরি হলো। পাশাপাশি খাদি পাঞ্জাবি ও খাঁটি মধু বিক্রি করছি। একদিন বড় প্রতিষ্ঠান হবে। বিদেশেও রপ্তানি করার স্বপ্ন আছে আমার।’
শুধু মেয়েরা নন, শিক্ষিত ছেলে বেকাররাও এই গ্রুপে যুক্ত হয়ে বেশ সফলতা অর্জন করেছেন। এর সুন্দর দৃষ্টান্ত চাঁদপুরের রাশেদ। চাঁদপুর সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শেষ বর্ষের ছাত্র তিনি। চতুর্থ বর্ষে ওঠার পরপরই প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তাই ৭৫ হাজার টাকা পুঁজি দিয়ে মুরগির খামার গড়ে তোলেন। বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু করোনার কারণে মুরগির দাম পড়ে যায়। হঠাৎ এক ধাক্কায় ৬৫ হাজার টাকা লোকসান হয় তার। এবার ভিক্টোরিয়া ই-কমার্স গ্রুপে যুক্ত হন। এর আগে বন্ধুর সহায়তায় উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ৯০দিনের একটি ফ্রি ট্রেনিং করেন। গ্রুপে যুক্ত হওয়ার পর সাহায্য পান কাজী আপন তিবরানির। তিনি পরামর্শ দেন স্ব-স্ব জেলার পণ্য নিয়ে কাজ করতে।
রাশেদু চৌধুরী জানান,‘ আমার জেলার ঐতিহ্য ইলিশ। চাঁদপুর ঘাটে ২৭ জেলার ইলিশ মাছ আসে। তাই আসল-নকল বোঝা দায় হয়ে পড়ে। তার ওপর আমার বাড়ি চাঁদপুর জেলা সদর থেকে ৫২কিলোমিটার দূরে হাজীগঞ্জ উপজেলায়। আড়তদার এক বন্ধুর সহায়তা নিই। ১৫দিন টানা ঘাটে এসে ঘোরাঘুরি করি। তারপর খাঁটি ইলিশ চেনার কৌশল রপ্ত করি। অনলাইনে পোস্ট দিতে থাকি। ২৬দিন পর সিলেট থেকে প্রথম অর্ডার আসে। ১৫হাজার টাকার মাছ ডেলিভারি দিই। কিন্তু প্যাকেটিং কৌশল না জানার কারণে সাত হাজার টাকার মাছ পচে যায়। তারপরও থেমে থাকিনি। একদিন ফ্রান্স প্রবাসী এক ব্যক্তি কিছু ইলিশ মাছ নেন। ওই ব্যক্তি একাই বিভিন্নজনের কাছে প্রায় পাঁচ লাখ টাকার ইলিশ মাছ অর্ডার করান। তাতে ভাগ্য খুলে যায় আমার। গত ৮মাসে আমি ২৪লাখ টাকার ইলিশ ও মধু বিক্রি করেছি। বর্তমানে আমার অধীনে ১৭জন যুবক কাজ করেন। যাদের বেশিরভাগ শিক্ষিত বেকার ছিলেন।’
রাশেদ চৌধুরীর মতো আরেকজন নাঙ্গলকোটের আরিফ। আরিফ কাজ করছেন ব্ল্যাক রাইস, রেড রাইস ও পারপল রাইস নিয়ে। কুমিল্লার অজিতগুহ কলেজের বাংলা ২য় বর্ষের ছাত্র সে। ভিক্টোরিয়া ই-কমার্সের সাথে যুক্ত শুরু থেকেই। এর আগে আরও কয়েকটি গ্রুপে যুক্ত থেকে নতুন কী করবেন, তা নিয়ে কুল পাচ্ছিলেন না তিনি। ভিক্টোরিয়া ই-কমার্সের সাথে যুক্ত হওয়ার পর কিছু পোস্ট দেন তিনি। আর ওই পোস্ট চোখে পড়ে তার লন্ডন প্রবাসী এক আত্মীয়ের। ওই আত্মীয় পরামর্শ দেন ব্যতিক্রমধর্মী ধান চাষের জন্য। কিন্তু ওই ধানের বীজ কোথায় পাবেন তা জানতে কাজী আপন তিবরানির শরণাপন্ন হন তিনি। তিবরানি কুমিল্লার এক বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তার সাথে তার পরিচয় করিয়ে দেন। ওই কর্মকর্তা রাজশাহী থেকে আরিফকে বীজ সংগ্রহ করে দেন। বোরো মৌসুমে নিজেদের ১২০শতক জমিতে ব্ল্যাক রাইস, ৩০ শতক জমিতে রেড ও একই পরিমাণ জমিতে পারপল রাইস আবাদ করেন তিনি। খরচ হয় ৭০ হাজার টাকা।
আরিফুল জানান,‘ বোরো মৌসুমে ৩৫ মণ ধান পাই। ওই ধানে চাল হয় প্রায় ২৬মণ। প্রথম মৌসুমে একলাখ টাকার মতো লাভ হয় আমার। আমার ইচ্ছা এলাকার বেকার ছেলেদের এসব ধান চাষে প্রশিক্ষিত করে তোলা। কুমিল্লা জেলা প্রশাসন থেকে তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে এবছর পুরস্কৃত করা হয়েছে আমাকে। যা বিরাট অর্জন। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয় গবেষণার জন্য আমার কাছে বীজ চেয়েছেন। পাশাপাশি চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে আমাকে তাদের প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন।’
কোরআনে হাফেজ হেলাল উদ্দিন। কুমিল্লা নগরীর অশোকতলার বাসিন্দা। চাকরি করেন একটি মাদরাসায়। তিনি সরিষার তেল নিয়ে কাজ করেন।
হেলাল জানান,‘ ফেসবুক গ্রুপে কীভাবে পোস্ট দিতে হয় জানা ছিল না। এক বছর ধরে খাঁটি সরিষার তেলের ব্যবসা করছি। ভিক্টোরিয়া ই-কমার্স গ্রুপে যখন পোস্ট দেওয়া শিখে যাই, তখন আমার অর্ডার বাড়তে থাকে। যেখানে দিনে অর্ডার পড়তো ৭০-৮০ লিটার, সেখানে দৈনিক গড়ে ২০০ লিটার তেলের অর্ডার পাই আমি। দিনে গড়ে লাভ হয় চার হাজার টাকা। এই গ্রুপ আমার জীবন বদলে দিয়েছে। মাসে যে বেতন পেতাম, একদিনে তার চেয়ে বেশি আয় হচ্ছে আমার।’
ই-কমার্স গ্রুপের উদ্যোক্তা কাজী আপন তিবরানি জানান,‘ প্যানডেমিকে আমি বেকার তরুণ-তরুণীদের হাহাকার শুনতে পাই। বেকার তরুণ-তরুণী, আবার তাদের পুঁজিও নেই, এসব ভাবনাও মাথায় আসে। তাই কম পুঁজিতে তারা কীভাবে শুরু করতে পারে তা নিয়ে ভাবি। এখন গ্রুপ ও ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে দেড় হাজার ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছি। ট্রেনাররা খুবই আন্তরিক। এতদিন ছোটখাটো ট্রেনিং করানোয় তেমন কোনো টাকা খরচ হয়নি। অল্প যে টাকা খরচ হতো, তা আমি বহন করতাম। বড় উদ্যোক্তা তৈরির জন্য বড়ধরনের ট্রেনিং ও বেশি পুঁজি দরকার। সে সামর্থ্য আমাদের নেই। তবে আমার স্বপ্ন, একদিন অনেক বড় বড় উদ্যোক্তা তৈরি হবে এই গ্রুপের মাধ্যমে।’
বর্তমানে এই গ্রুপে সদস্য সংখ্যা এক লাখ ৩০ হাজারের বেশি।
কে এই আপন তিবরানি
অদম্য আপন তিবরানি। এসএসসি পাস করার পর উচ্চমাধ্যমিকের শুরুর দিকে মাত্র ১৬ বছর বয়সে কুমিল্লা নগরীর এক ঠিকাদারের সাথে বিয়ে হয়ে যায় তার। ১৭ বছর বয়সে মেয়ে সন্তানের মা হন। কিন্তু ওই বছরই আঘাতজনিত কারণে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি। তিন বছর তার স্মৃতিভ্রম ছিল। ২০০০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী হলেও অসুস্থতার কারণে ২০০৩ সালে এইচএসসি পরীক্ষা দিতে হয় তাকে। এরপর কোনো বিরতি ছাড়াই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন তিনি। তারপর ৩২-তম বিসিএসের মাধ্যমে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের প্রভাষক পদে যোগদান করেন তিনি। বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা, মা গৃহিণী। ছোট বোনদের একজন অগ্রণী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার, আরেকজন চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ে স্নাতক করছেন। আর একমাত্র ভাই একটি কোরিয়ান কোম্পানিতে চাকরি করেন। স্বামীর ঠিকাদারি, বাবার চাকরি আর নিজের শিক্ষকতা মিলিয়ে অর্থনৈতিকভাবে বেশ সক্ষম তিনি। কিন্তু অর্থনৈতিক সক্ষমতা থাকলেও জীবনে বহু প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। সমাজের চক্ষুশূল নানাভাবে তাকে বিঁধে। সন্তান, বিয়ে ও পড়াশোনা নিয়ে এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন তিনি। তারপরও থেমে যাননি তিনি। এই থামতে না চাওয়ার পুঁজিই ব্যবহার করেন বেকার ছেলেমেয়েদের মধ্যে। প্রাণে সঞ্চার করেন নতুন উদ্দীপনা। তাতে বেশ সফল তিনি।