মাহফুজ নান্টু ঃ
দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়ে আলামিন সরকার। বাবা- মা, আত্মীয় ও পড়শীদের কাছে সজিব নামে পরিচিত। তাগড়া যুবক সজিবের দৈহিক গড়ন ভালো। বাবা মার আশা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরি করবে দেশের সেবা করবে। তবে সজিব চায় চাকরি হোক আর না হোক তার আগে লেখাপড়াটা চালিয়ে নিতে হবে। অভাবের সংসার। তাই নিজেই চাকরি করে লেখাপড়ার খরচ বহন করবে।
কুমিল্লা বিসিক শিল্পনগরীর বেঙ্গল ড্রাগস অ্যান্ড ক্যামিকেল কোম্পানিতে পাঁচ হাজার টাকা বেতনের চাকরি নেয়। সজিবের সাথে তার সে স্বপ্নও জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে।
বুধবার সকাল সোয়া দশটায় কোম্পানিতে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে চারজন আহত হয়। যার মধ্যে সজিবের অবস্থা গুরুতর। তাকে বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
সজিবের বাবা আলী আজগর সরকার জানান, তিনিও বিসিকে ঝাড়ুদারের চাকরি করেন। তার তিন ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে সজিব সবার ছোট।
কান্নারত কন্ঠে বাবা আলী আজগর সরকার বলেন, ভাই আমি গরিব মানুষ। আমার ছোট ছেলে সজিব নিজের লেহাপড়ার লাইগ্গা চাকরিত ডুকছে। আইজ সোহালে আৎকা আওয়াজ হইছে। আইয়া দেহি বিল্ডিং ভাঙ্গা। আমার পোলারে কল দিছি। নম্বর বন্ধ। একটু পরে দেহি আমার পোলা সজিবরে কয়েকজনে ধইরা নামাইতাছে। তার শইলে শুধু রক্ত। এ কথা বলেই কান্না শুরু করেন। বাবা আলী আজগর সরকার বলেন, আমি কিচ্ছু চাইনা শুধু চাই আল্লায় আমার পোলাডারে বাচাইয়া দেউক।
কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জানান, সজিব দেয়ালের নীচে চাপা পড়ে ছিলো। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সদর হাসপাতালে পরে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই।
কুমিল্লা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা চারজনকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছি। ভবনের ক্ষতির পরিমাণ দেখে মনে হচ্ছে, ক্যামিকেলের কোন বিক্রিয়া থেকে এই বিস্ফোরণ হয়েছে।
উল্লেখ্য বুধবার সকাল ১০দিকে বেঙ্গল ড্রাগস কোম্পানির কারখানায় এই বিস্ফোরণ হয়। এতে কারখানার দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেয়াল ওড়ে ৫০ মিটার দূরে গিয়ে পড়ে। আহতরা হচ্ছেন,প্যাকেজিং বিভাগের কর্মী আল-আমিন (২০),সন্ধ্যা রানী (৫৭),মুকুল(২৫) ও ক্লিনার শামীমা আক্তার(২৬)। তাদের মধ্যে আল-আমিন ও মুকুলের অবস্থা আশংকাজনক। তিনতলা ফ্যাক্টরির ২য় তলায় প্যাকেজিং করা হয়। সেখানে বিস্ফোরণে দেয়াল ওড়ে যায়। এতে সাত/আটজন আহত হয়। তাদের মধ্যে চারজন বেশি আহত হয়।