তৈয়বুর রহমান সোহেল ।।
অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন জমায় টানা সাতবার প্রথম হয়েছে ভ্যাট কমিশনারেট কুমিল্লা। ২০২০ সালের আগস্ট থেকে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত এ সাত মাস টানা চ্যাম্পিয়ন হয় তারা। কুমিল্লায় ফেব্রুয়ারি মাসে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করেছে ৯,৮৩৭টি প্রতিষ্ঠান। নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১০,১১২। মোট নিবন্ধনকারী প্রতিষ্ঠানের ৯৭.২৮শতাংশ প্রতিষ্ঠান ফেব্রুয়ারি মাসে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করে। এর প্রায় ৯৭ ভাগই অনলাইনে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করে।
ফেব্রুয়ারি মাসে সারাদেশের ১২টি ভ্যাট কমিশনারেট যেখানে গড়ে ৪২.১৬ শতাংশ দাখিল করে, সেখানে কুমিল্লার এ ঊর্ধ্বগতি রীতিমতো আলোড়নের সৃষ্টি করেছে। সেরা হওয়ার সাত মাসে পূর্বে গত জুন মাসে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটের ছয় জেলায় ভ্যাট রিটার্নকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ৪৫১৬। ফেব্রুয়ারিতে তা দাঁড়ায় ৯,৮৩৭-এ। এ সময়ে প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৫,৩২১টি।
চ্যাম্পিয়ন হওয়া বাকি ছয় মাসের মধ্যে আগস্ট মাসে ৯০.৮৭, সেপ্টেম্বর মাসে ৯৩.৮৭, অক্টোবর মাসে ৯৪.১৬, নভেম্বর মাসে ৯৩.৮০, ডিসেম্বর মাসে ৯৪.৯৯ ও জানুয়ারি মাসে ৯৭.০৯ শতাংশ ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করে কুমিল্লা। সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এ তিন মাসে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে অবস্থান করে যশোর, রংপুর, সিলেট ও এলটিইউ কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট। জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে অবস্থান করে যশোর, সিলেট, রংপুর ও এলটিইউ ভ্যাট কমিশনারেট। জানুয়ারি মাসে যশোর ৯৪.৭৫, রংপুর ৮৫.৪৩, সিলেট ৭৮.৪৯ ও এলটিইউ ভ্যাট কমিশনারেট ৬৬.৯০ শতাংশ ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করে। ফেব্রুয়ারি মাসে এ চার ভ্যাট কমিশনারেট যথাক্রমে ৯৫.১২, ৮৬.৩৫, ৮২.২৬ ও ৬৮.৩১শতাংশ ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করে।
কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সূত্রমতে, এ কমিশনারেটের আওতাধীন কুমিল্লা, চাঁদপুর ,ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর ও ফেনী জেলায় মোট ১৬টি কার্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৬টি বিভাগীয় ও বাকি ১০টি সার্কেল কার্যালয়। ৫২১টি অনুমোদিত জনবলের বিপরীতে কাজ করছেন ২১১জন। লোকবল নেই ৩১০টি পদে। এতে করে প্রচুর হিমশিম খেতে হচ্ছে এখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। তার ওপর সাধারণ মানুষের প্রযুক্তিগত অদক্ষতা রয়েছে, চরাঞ্চলে রয়েছে ইন্টারনেট সমস্যা।
কুমিল্লা কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমশিনারেট সূত্র জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে করদাতাদের উৎসাহী করে তোলা হয়েছে। জুলাই মাসে নতুন কমিশনারেট আসার পর জুম সভা করা হয়। সেখানে রিটার্ন জমাকে অগ্রাধিকার ঘোষণা দেন কমিশনার। সভার পরপরই শুরু হয় তদারকি। ছয় জেলার করদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি নজরদারি বাড়ানো হয়। রিটার্ন ওয়ান স্টফ কাউন্টার তৈরি করা হয়। ভ্যাট ওয়ান স্টপ সেবা সপ্তাহ পালন করে করদাতাদের অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের জন্য প্রশিক্ষিত করে তোলা হয়। তারপর বদলে যায় কুমিল্লার চিত্র।
এছাড়া সার্কেল অফিস থেকে জেলা ও উপজেলার করদাতাদের সাথে টেলিফোনে যোগাযোগ, রিটার্ন না দেওয়া ব্যক্তিদের কাছে মোবাইলে বাল্ক এসএমএস প্রেরণ, মাইকিং, পত্রিকায় প্রচারণা, শীর্ষ করদাতাদের উপহার সামগ্রী দিয়ে উদ্বুদ্ধকরণ, শুক্র ও শনিবার অফিস কার্যক্রম চালু রাখা, যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ভাইবার গ্রুপ চালু এবং কর্মকর্তাদের কাজের স্পৃহা বাড়াতে পুরস্কারের ব্যবস্থাও করা হয়।
ভ্যাট কমিশনারেট কুমিল্লা সদর দপ্তরের সহকারী কমিশনার ছালাউদ্দিন রিপন বলেন,‘ ২০২০ সালের এপ্রিল মাসেও কুমিল্লায় মাত্র ২,৯৭৫জন রিটার্ন দাখিল করে। এক বছরের কম সময় ব্যবধানে তা ১০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। দিন দিন ভ্যাট রিটার্ন দাখিলকারী প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা খুব ইতিবাচক পরিবর্তন। ডিজিটালাইজেশনের ফলে সরকারের কোষাগারে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব জমা হচ্ছে।’
বর্তমান অবস্থাকে ইতিবাচক মনে করছেন কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী। তিনি জানান,‘ আমি মনে করি এখানকার মানুষ খুবই শিক্ষিত। গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান, এক শতাংশেরও কম প্রতিষ্ঠান ম্যানুয়ালে ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করেছে। বাকি ভ্যাট দাখিলকারীদের সবাই অনলাইনে ভ্যাট দাখিল করেছেন। অটোমেশনের ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এটা এক যুগান্তকারী অর্জন। আমরা সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করেছি। এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে এখানকার স্টাফরা কখনো কখনো নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে। যেখানে ইন্টারনেট সমস্যা ছিল, ওই স্থান বদল করে অন্যত্র গিয়ে আমরা ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের কাজ করেছি। রামগতিতে ইন্টারনেট না থাকলে চলে গেছি চর আলেক্সেন্ডারে।’
তিনি বলেন,‘লোকবলের সংখ্যা বাড়ানো গেলে অন্য কর্মকর্তাদের ওপর চাপ কমে যাবে, আরও বেশিসংখ্যক প্রতিষ্ঠানে তদারকি করা যাবে। সোজা কথা সরকারের রাজস্ব আয় অনেক বেড়ে যাবে।’
এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের ১২টি কমিশনারেটে ভ্যাট রিটার্ন দাখিলের জন্য নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২লাখ ৪৪ হাজার ১৬টি। মার্চ মাসে হালনাগাদকৃত তথ্যানুসারে দেশের ১লাখ ২ হাজার ৮৭১টি প্রতিষ্ঠান তাদের ভ্যাট রিটার্ন দাখিল করে। প্রবৃদ্ধির হার ৪২.১৬শতাংশ।