দাউদকান্দি পৌরসভা নির্বাচন
আবদুর রহমান,দাউদকান্দি থেকে ফিরে।।
কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার বুকচিরে গেছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পথ। অবশ্য মহাসড়কের উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে পৌরসভাটির আলাদা গুরুত্বও রয়েছে। চতুর্থ ধাপে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ওই পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। প্রথমবারের মতো ওই পৌরসভায় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। এনিয়ে ভোটারদের মধ্যে উৎসাহের পাশাপাশি রয়েছে শঙ্কাও।
সরেজমিনে গিয়ে মহাসড়ক থেকে পৌর এলাকায় প্রবেশ করতেই দেখা গেছে নির্বাচনী আমেজ। পুরো পৌর এলাকা ছেয়ে গেছে প্রার্থীদের পোস্টার-ব্যানারে। তবে আশার কথা হচ্ছে প্রায় সকল প্রার্থীদের পোস্টারই ছিলো চোখে পড়ার মতো। এ নির্বাচেন মেয়র পদে লড়ছেন তিন প্রার্থী।
গত পৌর নির্বাচনে ভোটে নির্বাচিত হয়ে মাত্র ৩১ বছর বয়সে দাউদকান্দির পৌর পিতার আসনে বসেন নাইম ইউসুফ সেইন। কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধক্ষ্য ও বর্তমান মেয়র সেইনে আস্থা রেখে এবারও তার হাতেই নৌকা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। দলের দু’জন বিদ্রোহী মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেওয়ায় তরুণ প্রার্থী সেইন রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। এছাড়া উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং পৌর পিতার চেয়ারটি ধরে রাখতে তার পক্ষে ভোট চেয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন দলের নেতাকর্মীরা।
তবে হাল ছাড়েনি প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির নেতাকর্মীরাও। হারানো মসনদ ফিরে পেতে মরিয়া বিএনপি। তাদেও দাবী ভোট সুষ্টু হলে মেয়র পদে বিপুল ভোটে জিতবেন তারাই। এ নির্বাচনে মেয়র পদে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন পৌর বিএনপির সভাপতি নুর মোহাম্মদ সেলিম। নতুন প্রার্থী সেলিমে আস্থা রেখে মেয়রের আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় বিএনপি। এছাড়া নারিকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবু মুছাও তাঁর সমর্থকদের নিয়ে চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনের মাঠ।
দাউদকান্দি থানা কমপ্লেক্স সংলগ্ন জারিফ আলী পার্কে দুপরে কথা হয় ষাটোর্ধ্ব বিমল চন্দ্র সরকারের সঙ্গে। তিনি বলেন, আগামীতে পৌরবাসীকে বেশি সেবা দিতে পারবে এবং বেশি উন্নয়ন করতে পারবে এমন প্রার্থীকেই আমরা বেছে নেব। তবে শুনেছি এবার মেশিনে (ইভিএম) ভোট হবে, তাই ঠিকমতো ভোট দিতে পারবো কি-না চিন্তায় আছি।
দাউদকান্দি বাজারে কথা হয় তরুণ ভোটার দিলবার চৌধরীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা বিগত দিনের উন্নয়ন দেখে এবং তরুণদের জন্য কাজ করবে এমন প্রার্থীকেই ভোট দেব। আর খুবই ভালো লাগছে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট দিতে পারবো বলে।
জানা গেছে, বর্তমান মেয়রের পিতা প্রয়াত ইউসুফ জামিল বাবু ছিলেন সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক। গত নির্বাচনে জেলার সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী হয়েও বিজয়ী হওয়ার পেছনে তার পরিবারিক ইমেজের একটি ভূমিকা আছে। এবারও সেই ইমেজ কাজে লাগাতে চা তিনি।
এদিকে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন নিজে দাউদকান্দি এসে দলের নেতাকর্মীদের মতামত নিয়ে নুর মোহাম্মদ সেলিমকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছেন। তিনি ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য সকলকে নির্দেশনাও দিয়েছেন। তাই এ নির্বাচনে সেলিমও একজন হেভিওয়েট প্রার্থী। বিগত ৫ পৌর নির্বাচনে বিএনপি জিতেছে তিনবার আর আওয়ামী লীগ দুইবার।
নির্বাচন প্রসঙ্গে বর্তমান মেয়র নাইম ইউসুফ সেইন বলেন, বিগত পাঁচ বছরে পৌরসভার যত উন্নয়ন দরকার ছিলো তার প্রায় ৮০ শতাংশ করতে পেরেছি। পুরো পৌর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র এখন দৃশ্যমান। উন্নয়নের স্বার্থে আবারও নৌকায় ভোট চাই। ইতোমধ্যে চারদিকে নৌকার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। বয়স্কদের পাশাপাশি তরুণদের সবাই নৌকার জন্য ভোট চাইছে। বিগত সময়ে পৌরসভায় মাদকের বিস্তার, বাল্য বিয়েসহ সকল সামাজিক সমস্যা অনেকাংশেই কমে গেছে। আবার নির্বাচিত হলে এসব পুরোপুরি বন্ধে কাজ করবো। পাশাপাশি তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কাজ করবো। সিনিয়র নাগরিকদের পরামর্শে তরুণদের সঙ্গে নিয়ে সকল উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবো।
আর ধানের শীষের প্রার্থী নুর মোহাম্মদ সেলিম বলেন, দাউদকান্দি বিএনপির ঘাঁটি। সুষ্ঠুৃ ভোট হলে এবং মানুষ ভোট দিতে পারলে আমার বিজয় সুনিশ্চিত। ইভিএম নিয়ে অনেক ভোটারের মতো আমরাও শঙ্কিত। নৌকার প্রার্থীর নেতাকর্মীরা প্রতিনিয়ন আচরণবিধি ভঙ্গ করছেন। অনেক স্থানে আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে, প্রচারণায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমরা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে নৌকার প্রার্থী সেইন বলেছেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। সবাই সমানভাবেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপির এখন কাজই হলো মিথ্যা অভিযোগ করা।