শনিবার ২০ GwcÖj ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement



আমাদের কুমিল্লা .কম :
08.11.2020

শাহাজাদা এমরান,কুড়িগ্রাম থেকে ফিরে।।
মুক্তিযুদ্ধের পর আমার জন্ম। মুক্তিযুদ্ধ দেখার বা যাওয়ার আমার সৌভাগ্য হয়নি বটে, তবে একে লালন ও ধারণ করি আমি প্রতিনিয়ত। আমি সব সময়ই মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের ভিন্ন প্রেক্ষাপটের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরে তাদের চোখে ৭১’র একটি অবয়বটি আঁকতে চাই । এর কারণ,আমাদের লাল সবুজ পতাকাটি যে এত সহজে আসেনি, এর বিনিময়ে যে মূল্য আমাদের দিতে হয়েছে তা কখনো বিনিময়যোগ্য নয়। এর ঋণ অপরিশোধ্য। তাই তো আমি দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করছি অসহায়,দরিদ্র ও অবহেলিত মুক্তিযোদ্ধা,বীরাঙ্গনা ও শরণার্থীদের নিয়ে। বলতে পারেন আমি তাদের ফেরিওয়ালা। ফেরিওয়ালা যেমন কাস্টমারের গন্ধ পেলেই ছুটে বেড়ায়, ঠিক তেমনই আমিও। যেখানে শুনি এই তিন পর্যায়ের মানুষের সম্মিলন রয়েছে, সেখানেই আমার পথচলা শুরু হয়ে যায়। খাগড়াছড়ি,যশোর,কুষ্টিয়া,মাগুরা.ঝিনাইদহ শেষ করে যাই দেশের একেবারে উত্তারাঞ্চল কুড়িগ্রাম,লালমনিরহাট ও রংপুরে। শরণার্থীদের খোঁজে উত্তরের এই তিন জেলায় কাটে আমার (১ নভেম্বর থেকে ৪ নভেম্বরÑ২০২০) ৪দিন। আর দুই দিন ছিল যাওয়া-আসার। এ চারদিন এ তিন জেলার শরণার্থীদের সাথে কথা বলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর তুলনায় উত্তরের জেলাগুলোর একটি মৌলিক পার্থক্য আমার কাছে পরিলক্ষিত হয়েছে। সেটি হল যশোর,কুষ্টিয়া,মাগুরা ও ঝিনাইদহের জেলাগুলোতে যুদ্ধের সময় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী,রাজাকার ও বিহারিদের মূল টার্গেট ছিল মূলত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এ জেলাগুলোতে তাদের ওপর আক্রমণ হয়েছে বেশি। আর উত্তরের জেলাগুলোতে হিন্দুরা যেমন হানাদার বাহিনী ও দেশীয় দোষরদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত ছিল, ঠিক তেমনই মুসলমানেরাও ছিল একই রকম। ক্ষেত্র বিশেষ মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ বেশি হয়েছে। যা আমাদের কুমিল্লায় প্রকাশিতব্য শরাণার্থীদের খোঁজে ধারাবাহিক সিরিজে পাওয়া যাবে চলতি সপ্তাহের যে কোন দিন থেকেই। শরণার্থীদের খোঁজে বের করতে গিয়ে উত্তরের মঙ্গাপীড়িত এই তিন জেলার অর্থনৈতিক,সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের একটি অবয়বও এই লেখকের মনে দৃষ্টিপাত করেছে। যা নিয়েই আজকের আলোচনা।

শরণার্থীদের খোঁজে কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে গত ৩১ অক্টোবর বিকালে আমরা সপরিবারে কুমিল্লা ত্যাগ করি। আসলে গবেষণার কাজে আমার একারই যাওয়ার কথা থাকলেও কুড়িগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মো. আবদুল মান্নান ভাইয়ের আমন্ত্রণেই মূলত জাহেরা,আবির ও দিবাকে সাথে নেয়া। সন্ধ্যা নাগাদ ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছি। রাত পৌনে নয়টায় কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে ছাড়ার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ের প্রায় একঘণ্টা বিলম্বে ট্রেন ছাড়ে। ছোট কাল থেকেই শুনে আসছি ট্রেন কখনো সময়মতো ছাড়ে না। এ কথার যথার্থতা পেলাম সেদিনও। এই দুর্নাম থেকে আমাদের ট্রেন কবে যে মুক্ত হবে এক মাত্র আল্লাহই ভাল জানেন। করোনার কারণে যাত্রীর চাপ যে কিছুটা কম তা বুঝতে পারলাম ট্রেন ছাড়ার পর। তবে ট্রেনের ভিতরে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয়নি। সারা রাত ট্রেন চড়ে সকাল ৮টায় ট্রেন কুড়িগ্রাম স্টেশনে থামার সাথে সাথেই দেখি জজ মান্নান ভাইয়ের লোকজন আমাদের কামরায় হাজির। তিনি আমাদের রিসিভ করার অনেক আগেই গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। রাত পৌনে তিনটায়ও সজাগ থেকে তিনি খবর নিয়েছেন আমরা কোথায় আছি। এমন দায়িত্ববোধসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব আমি খুব কম দেখেছি। ৫ নভেম্বর চলে আসার দিনেও তিনি একই ভূমিকা রেখেছেন। মাঝখানের যে চারদিন কুড়িগ্রাম,লালমনিরহাট ও রংপুর শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করেছি এর পুরো দেখভাল করেছেন কুড়িগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ আবদুল মান্নান ভাই। কুড়িগ্রাম তার বাসাতে থেকেই পুরো সফরটি আমরা শেষ করেছি। মুক্তিযুদ্ধের গবেষণার কাজে তাঁর এই কমিটমেন্ট আমাকে আরো ভাল কাজ করতে উৎসাহ দিবে নি:সন্দেহে। একজন জেলা জজ হয়েও তার যে সামাজিকতা আমি গত চার দিন কাছ থেকে দেখেছি, গত প্রায় দুই শতাব্দী সংবাদকর্মী হিসেবে কাজ করেও এই লেভেলের অফিসারদের মধ্যে পাইনি। যাক মান্নান ভাইকে নিয়েই আমার একটি আর্টিকেল আছে।সেখানে বিস্তারিত বলব। এবার আসি তিন জেলার চার দিনের সফর প্রসঙ্গে ।
কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রাম জেলার উত্তরে লালমনিরহাট জেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলা, দক্ষিণে গাইবান্ধা জেলা, পূর্বে ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবরী জেলা ও দক্ষিণ শালমারা মানকার চর জেলা এবং পশ্চিমে লালমনিরহাট জেলা ও রংপুর জেলা অবস্থিত। এই জেলার আয়তন ২২৩৬.৯৪ বর্গ কিঃমিঃ। উপজেলা ৯টি, পৌরসভার ৩টি, ইউনিয়ন পরিষদ ৭২টি এবং গ্রাম ১৮৬টি।
আমি আর জীবন বন্ধু জাহেরা চেষ্টা করেছি কাজের ফাঁকে ফাঁকে শহরটিকে ঘুরে দেখতে। একটি অনুন্নত জেলা শহর কুড়িগ্রাম। যদিও শহর হিসেবে এটি বেশ প্রচীন। ব্রিটিশ আমলেই এটি মহকুমার মর্যাদা পায়। কিন্তু স্থানীয় রাজনীতিক নেতৃবৃন্দদের জেলার উন্নয়নের প্রতি দায়বদ্ধতার অভাবের কারণেই এখানে কোন মিল ফ্যাক্টরি গড়ে উঠেনি এবং জেলাবাসীর জীবন মানও উন্নত হচ্ছে না। আরেক দিক হলো, এখানকার এমন কোন নেতা তৈরি হচ্ছে না যারা কেন্দ্র থেকে প্রভাব খাটিয়ে জেলার উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। জেলাটিকে ছোট বড় ১৩টি নদী আর শহরটিকে ৩টি নদী ঘিরে রেখেছে। কুড়িগ্রামে কোন পাহাড় না থাকলেও সীমান্তবর্তী হওয়ায় ভারতের পাহাড়ি ঢল জেলার সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থাকে সব সময়ই বিপর্যস্ত করে তোলে। সামান্য বৃষ্টি শহরবাসীর অভিশাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সরকারি অফিস আদালত ও বাস ভবনের বাইরে ব্যক্তি মালিকানাধীন দ্বিতলা বিশিষ্ট পাকা দালান কুড়িগ্রাম শহরে খুবই কম। আধুনিক সুবিধা সম্পন্্ন কোন মার্কেট গড়ে উঠেনি। একমাত্র পৌর বাজারটিকে ঘিরেই গোটা কুড়িগ্রাম শহরের অস্তিত্ব কল্পনা করা হয়। শহরে যেমন লোকসংখ্যা কম তেমনই যানবাহনের সংখ্যাও কম। শহরবাসীর চলাচলের জন্য রিকশা ও অটোরিকশা। গরুর গাড়ি চলে মালামাল আনা নেয়ার জন্য। ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রাইভেটকার খুব একটা চোখে পড়েনি গত চার দিন। মানুষের আয় কম হলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সব সময়ই এখানে ঊর্ধ্বগতি থাকে। কারণ, বৃষ্টিতে কিংবা বন্যার পানিতে ফসল তলিয়ে নিয়ে যায় অধিকাংশ সময়। দূর থেকে কাঁচামাল আসার কারণে পরিবহন ব্যয়ও বেশি। ফলে জিনিসপত্রের দাম এখানে কমে না। একমাত্র সরকারি সদর হাসপাতাল ছাড়া উল্লেখ করার মত বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এখানে নেই বললেই চলে। সরকারি পর্যায়ে সামান্য একটি মাঝারি পর্যায়ের অনুষ্ঠান করলেও এর আপ্যায়নটি পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী রংপুর শহর থেকে নিয়ে আসতে হয়। অথবা আগের দিন অর্ডার দিয়ে নাইট কোচে ঢাকা থেকে আনতে হয়।
কুড়িগ্রামে সরকারি চাকরি করেন এমন একাধিক ব্যক্তির সাথে আলাপ করে জানা যায়, এখানকার বাহিরের চাকরিজীবীরা সাধারণত বৃহস্পতিবার অফিস করেন না। কারণ, এদিন সকাল সোয়া ৭টায় কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ট্রেন শহর থেকে ছেড়ে যায়।ফলে সবাই এ দিন সকালেই যার যার নীড়ে ফিরতে চায়।
আপনাদের এত অভাব অনটন আপনাদের ছেলেদের বিদেশ পাঠান না কেন জানতে চাইলে একাধিক রিকশা চালক জানান,আমাদের ছেলেরা তো বিদেশ করে। কোন দেশে জানতে চাইলে কমপক্ষে ৮/১০ জন রিকশাচালক ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, ঢাকা,কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে আমাদের ছেলেরা চাকরি করে। অর্থাৎ বিদেশ বলতে তারা ঢাকা,কুমিল্লা ও চট্টগ্রামকে বুঝায়। রাত ৯টায় কুড়িগ্রামের প্রাণকেন্দ্র শাপলা চত্বরে এই প্রতিবেদক কথা বলেন এক রিকশা চালকের সাথে। জানতে চাইলাম আজ কত টাকা আয় হয়েছে। তিনি জানান,সকাল ৯টায় বাসা থেকে বের হইছি। এখন বাজে রাত ৮টা। এই পর্যন্ত মোট ৩২০ টাকা রোজগার হয়েছে। অথচ নগর কুমিল্লায় এই সময়ে একটি রি´া চালকের গড় আয় হয় ১,৫০০ টাকা। এই শহরে নেই কোন বিনোদন কেন্দ্র।
এখানকার জীবনমান অত্যান্ত নিচু হলেও মানুষগুলো খুবই সহজ সরল। তবে অপরাধপ্রবন সীমান্তবর্তী কয়েকটি উপজেলা রয়েছে। শহরে গত চারদিন বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে তাদের মধ্যে কোন ধরনের ভণ্ডামি,গোড়ামি কিংবা অসততা খুঁজে পাইনি। লোকগুলো খুবই সহজ সরল।তারা কাজকে পবিত্র হিসেবে মনে করে।
কুড়িগ্রামের সফরে আমাকে জেলা ও দায়রার জজ মান্নান ভাই ছাড়া আরো বেশ কয়েকজন সহযোগিতা করেছেন তাদে নাম না নিলে লেখাটি কোনভাবেই সম্পন্ন হবে না। এর মধ্যে রয়েছেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা কুড়িগ্রামের সমন্বয়কারী রোকনউজ্জামান রুকু। বাম ঘরানার রাজনীতিতে বেড়ে ওঠা বলেই হয়তো কমিটমেন্টের প্রতি রয়েছে তার অগাধ শ্রদ্ধা। তিনি আমাকে কুড়িগ্রামের প্রথম আলোর সাংবাদিক সফি খান ভাইয়ের বাসায়, প্রেস ক্লাবে এবং কুড়িগ্রাম সফরের প্রথম দুইজন শরণার্থীর সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছেন। এ জন্য তাকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না। তবে মুক্তিযুদ্ধের খেতাব প্রাপ্ত বীর প্রতীক তারামন বিবিকে খুঁজে বের করার যিনি কৃতিত্ব দেখিয়েছেন সেই সাংবাদিক হলেন সফি খান। সফি ভাই একটি নান্দনিক মানুষ। তার বাসার ছাদে সুন্দর একটি ছাদ বাগান করেছেন। যেখানে সপরিবারে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশে আপ্যায়ন করে কৃতজ্ঞতার পাশে বসিয়েছেন। কুড়িগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও যুগান্তরের সাংবাদিক এড.আহসান হাবীব নীলু । অত্যন্ত সংবেদনশীল মনের মানুষ নীলু ভাই প্রেস ক্লাবে সময় দিয়েছেন,আপ্যায়ন করেছেন মুক্তিযুদ্ধে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে আমাকে সমৃদ্ধ করেছেন।
কুড়িগ্রাম যাওয়ার আগেই আমি যাতে সেখানকার এইড কুমিল্লা অফিস দেখে আসি সেই বিষয়ে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছে আমার অত্যন্ত শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া বেগম শেফালী আপা ও দুলাভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম আজাদ। আপাকে বলেছিলাম আপনার এখানে যেতে পারি, আমাকে কয়েকজন শরণার্থীর সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিতে হবে। শেফালী আপার কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি দেলোয়ার হোসেন সেই দায়িত্বটি আপন মনে নিষ্ঠার সাথে পালন করেছে। পরে এইড কুমিল্লার অফিস নাগেশ্বর যাই। সেখানে না গেলে ধারণাই করতে পারতাম না আমাদের কুমিল্লার প্রতিষ্ঠান এইড কুমিল্লা সেখানে কীভাবে মাথা উঁচু করে গৌরবের সাথে দাঁড়িয়ে আছে। কুড়িগ্রামের আর্থসামাজিক উন্নয়নে এইড কুমিল্লা ভুমিক রেখে চলছে। সেখানে শেফালী আপার ভালবাসাময় নির্দেশে আমরা সপরিবারে দুপুরের খাবার খাই।
আমাদের সফর শুধু কুড়িগ্রাম থাকলেও জেলা জজ সাহেবের গাড়ি চালকের আন্তরিকতায় ৩ নভেম্বর আমরা যাই লালমনিরহাট জেলা সদরে। গাড়ি চালক বিশ্বজিত সেখানে আমাদের তিন জন শরণার্থীদের সাথে কথা বলার সুযোগ করে দিয়েছে। লালমনির হাটের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে গেছে এবং তার বোনের বাসায় নিয়ে আমাদের নাস্তা করারও ব্যবস্থা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রক্ষায় তার অবদানটিও আমি স্মরণ করছি।
লালমনিরহাট ঘুরে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়েছি, এই জেলা সদর কুড়িগ্রাম থেকে অনেক উন্নত। যদিও মঙ্গাপীড়িত জেলা হিসেবে লালমনিরহাটেরও নাম রয়েছে। তবে সেখানে বিমান বাহিনীর রক্ষাণাবেক্ষণের একটি ইউনিটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অফিস রয়েছে যা কুড়িগ্রামে নেই।
পর দিন ৪ নভেম্বর কুমিল্লায় চলে আসার সিদ্ধান্ত থাকলেও মান্নান ভাই আবির দিবাকে ভিন্ন জগত পার্ক দেখিয়ে নেয়ার জন্য রংপুর প্রোগ্রাম দিলেন। রংপুর গিয়ে এক মহা বিপদে পড়লাম। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে পেয়ে গেলাম এক শরণার্থীকে। তাকে আমার উদ্দেশ্যটি বলার সাথে সাথেই উত্তেজিত হয়ে গেলেন। বললেন,আপনারে সাক্ষাৎকার দিলে আমার কি লাভ হবে,সরকার আমাকে কোন সাহায্য করবে কি না ইত্যাদি। আমি তাকে কোনভাবেই রাজি করাতে পারলাম না। তার একটিই কথা, আমাদের গরিবদের থেকে কথা শুনে আপনারা ঢাকা শহরে গিয়ে ও বিদেশ থেকে অনেক সুবিধা নেন।আপনাদের সুবিধার জন্য আমি কাজ রেখে কথা বলব না। তার কথা শুনে রংপুর শহরের আর কোন শরণার্থীর সাথেই কথা বলার ইচ্ছে হল না। অবশ্য সময়ও তখন খুব একটা ছিল না। পরে রংপুরের বড় বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ভিন্ন জগতে যাই। সেখানে ঘুরে যাই রংপুরের ছাওয়াল সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের বাড়ি দেখতে। নয় বছর শাসন ক্ষমতায় ছিল অথচ তার পল্লীনিবাসটি দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। পরে তার কবর জিয়ারত করলাম। আসার সময় নারী জাগরণের পথিকৃৎ বেগম রোকেয়ার নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি দেখে কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। পরদিন ৬ নভেম্বর ফিরে এলাম প্রাণের শহর কুমিল্লায়। শরণার্থী খুঁজতে গিয়ে কুড়িগ্রাম -লালমনিরহাট ১২ জন শরণার্থীর সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি। এদের মধ্যে ১০ জনের কণ্ঠেই একটি কমন কথা ছিল, আমরা যে শরণার্থী ছিলাম এটিই তো বুঝতাম না। আর সারাজীবন তারা সাংবাদিক নাম শুনেছেন, কোনদিন কাছে দেখেননি। আমাকে দেখে যেমন তারা খুশি আর তাদের পেয়ে আমার সফরটি শতভাগ সফল হয়েছে । সুতরাং কৃতজ্ঞতা তো তাদের প্রতিই থাকবে আমার।