শুক্রবার ১৯ GwcÖj ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


করোনাকাল : উপসর্গ ও কিছু কথা


আমাদের কুমিল্লা .কম :
26.06.2020

ডা. মুজিবুর রহমান।।
জ্বরের কোনও লক্ষণ নেই,নেই কাশি গলাব্যথা কিংবা শ্বাসকষ্ট ।কিন্তু সন্দেহ হওয়ায় পরীক্ষা করে দেখা গেল কোভিড ১৯ পজিটিভ। কোভিড ১৯ আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।এই রোগের অন্যতম উপসর্গ জ্বর বলেই জানা ছিল এতদিন ।কিন্তু জ্বর কাশি গলাব্যথা আর শ্বাসকষ্ট ছাড়াও নতুন নতুন উপসর্গ নিয়ে আসছেন রোগীরা ।টেষ্ট করতে গিয়ে করোনা ধরা পড়ছে ।কোভিড ১৯ আক্রান্তদের শ্বাসকষ্ট ও জ্বর হয় সংক্রমণের ৫-৬ দিন পর থেকে ।জ্বর নিয়ে যখন রোগীরা আসেন তার সপ্তাহ খানেক আগেই তিনি আক্রান্ত হয়েছেন ।বলাই বাহুল্য তার সংস্পর্শে থাকা অন্য মানুষদের মধ্যে কিন্তু ইতিমধ্যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে ।
জানা দরকার উপসর্গসমূহ কী কী ?
ক.স্বাদ বা গন্ধ কিছুই পাওয়া যায় না
খ.পেট ব্যথা ডায়রিয়া ও বমি হতে পারে
গ.গা ম্যাজম্যাজ করে,ব্যথা হতে পারে
ঘ.জ্বরের সঙ্গে কাঁপুনি হতে পারে
ঙ.পায়ের আঙুলে ছোট ফুসকুড়ি অথবা ঘা হতে পারে
চ.জ্বর গলাব্যথা কাশিও শ্বাসকষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে ।
কোভিড ১৯ আক্রান্তদের মধ্যে খুব স্বল্পসংখ্যক রোগীর প্রচন্ড গলাব্যথা ও শ্বাসকষ্ট হয় ।এদের অক্সিজেন ও প্রয়োজনে ভ্যান্টিলেটর সাপোর্ট দরকার হয় ।
হঠাৎ করে ৬-৭ দিন পর প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হল ।এই অবস্থাটাই সবচেয়ে সংকটজনক ।এই অবস্থায় রোগীকে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসার পাশাপাশি সব সাপোর্ট দিতে হয় ।কোভিড ১৯ এর
চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনও ওষুধ নেই ।তাই উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা হয় ।
কোভিড ১৯ সংক্রমণ হলে ডায়রিয়ার ঝুঁকি বেশি ।শ্বাসনালীতে যে রিসেপ্টরগুলিতে কোভিড ১৯ আক্রমণ করে সেই রকম অন্ত্রেও সেই রিসেপ্টর আছে ।নাক মুখ দিয়ে প্রবেশ করে করোনা ভাইরাস শ্বাসনালীতে না গিয়ে পেটে পৌঁছে গিয়ে অন্ত্রে সংক্রমণ হলে ডায়রিয়া পেট ব্যথা ও বমি হওয়ার ঝুঁকি থাকে ।করোনায় সংক্রমিত রোগীর ডায়রিয়া হয় প্রায় শুরুর দিকে ।সাধারণত এক থেকে আট দিনের মধ্যে(গড়ে তিন দিনের মাথায়)দেখা দেয় ।পানির মতো তরল পায়খানা হয় ।কয়েকদিনের মধ্যেই অবশ্য এ ডায়রিয়া সেরে যায় ।তবে কারও ক্ষেত্রে ১৪ দিন পর্যন্ত সময় নিতে পারে ।শ্বাসনালী ও ফুসফুসের তুলনায় ডায়রিয়া হলে রোগের সঙ্গে মোকাবিলা সহজ হয় ।পর্যাপ্ত স্যালাইন ও জিন্ক দিয়ে ডায়রিয়া মোকাবিলা করা যায় ।
নিজে নিজে ওষুধ সেবন করে কখনো কখনো রোগী নিজেই নিজের অনেক ক্ষতি করে ফেলতে পারেন ।কাজেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত জ্বরের ওষুধ এন্টিবায়োটিক এমনকি এন্টিভাইরাল ওষুধ সেবন করা চলবে না ।জ্বর বা যে কোনও উপসর্গে অবশ্যই করোনা পরীক্ষা করতে হবে ।জ্বরের জন্য পরিমাণমতো প্যারাসিটামল ছাড়া আর কিছু সেবন করার দরকার নেই ।ডায়রিয়া হলে খাবার স্যালাইন খাবেন।পটাশিয়াম সমৃদ্ধ ফল(ডাবের পানি,কলা )বা ফলের রস এবং প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাবেন ।
লকডাউনের পর আনলক পর্যায় এলেও কোভিড ১৯ এর প্রকোপ বেড়েই চলছে ।তাই নিজেদেরই সাবধান থাকতে হবে ।যথাযথভাবে মাস্ক ব্যবহার ও হ্যান্ড হাইজিন মেনে এই সংক্রমণ অনেকাংশেই প্রতিরোধ করা যায় ।তবে মাস্কের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে সবচেয়ে বেশি ।ভীড়ের জায়গা এড়িয়ে চলতে হবে।স্বাস্থ্যবিধি সমূহ পূর্ণাঙ্গভাবে মেনে চলতে হবে ।জ্বর বা কাশি ছাড়া কোভিড ১৯ এর যে কোনও উপসর্গ দেখা গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে ।
লেখক : পরিচালক,কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।মোবাইল :০১৭১২-০৭৮৬১৯