তাহমিনা শবনম।।
আমরা মানুষ। আমরা সৃষ্টির সেরা জীব। আমরা আখলাকুল মাখলুকাত। আসলে কি তাই? হয়তো তাই। কিন্তু আমরা সাম্প্রতিক সময়ে মানবতাবোধ হারিয়ে ফেলছি। মানুষ হিসেবে জন্ম নিয়ে আমরা ক্রমাগত আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছি। এই করোনা কালে ক্রমেই আমরা যেন স্বার্থপরতা, আত্মকেন্দ্রিক মানসিকতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ছি।
আমাদের বিবেক আছে, মন আছে, ভাষা জ্ঞান আছে। আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি আমরা কতটুকু বিবেকবান বা বিবেক বর্জিত? যদি তাই হয়, কেন আমরা মানুষের বিপদ দেখে ক্রমাগত নিজকে গুটিয়ে নিচ্ছি? কেনোইবা বুঝিয়ে দিচ্ছি, আমরা যা করি তা শুধুই লোক দেখানো, নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য? কেনোইবা বুঝি না আজ অন্যের জন্য যে বিপদ সেটা আগামীকাল হয়তো আমার জন্যও অপেক্ষা করছে।
আমি বুঝতে পারি না, কি হয়েছে আজকাল আমাদের। করোনা সংক্রমনের বিপদ দেখে দিনের পর দিন আমরা আমাদের মানবিকতাবোধ হারিয়ে ফেলছি। কঠিন দুঃসময়ে আমরা যেন ক্রমশই বিবেক বর্জিত হয়ে যাচ্ছি। স্ত্রী স্বামীকে, ছেলে মাকে বা বাবাকে বা বোনকে বা ভাইকে রাস্তায়, হাসপাতালে ফেলে পালিয়ে যাচ্ছে- এ জাতীয় সংবাদ এখন নিত্যদিন।
এই যে যুগে যুগে মহামারী এসেছে, আবার চলে গেছে। এই করোনা মহামারীতে আসলে আমরা কি প্রমান করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। মহামারীর প্রকোপে আমরা আমাদের মনুষত্ববোধ হারিয়ে অমানবিক রোবট মানুষে পরিণত হচ্ছি।
আমি বিশ্বাস করি, কেনো মহামারীর তান্ডবের কাছে আমরা আমাদের বিবেক আর মনুষ্যত্ববোধ বিলীন করে দিতে পারি না। কিন্তু হালের যা অবস্থা তা দেখে প্রশ্ন জাগে এই কি আমাদের মানবিক বোধ? এই কি আমাদের জাগ্রত বিবেক?
জীবন নদীর খেয়াঘাটে বসে খুব কষ্ট হয়, যখন দেখি মানুষের জীবন কতটা মূল্যহীন। প্রতিটি মৃত্যু যেন শুধুমাত্র সংখ্যায় পরিণত হয়েছে।
আমরা কি পারি না নিজেদের বিবেকের কাছে ওয়াদাবদ্ধ হতে। পৃথিবীর বুক থেকে যেন আমাদের অনাদর অবহেলায় আর একটি মানুষও যেনো ঝরে না যায় জীবনের অন্তিম শয়নে।স্বাভাবিকতাকে আমদের মানতেই হবে এবং সেটা চিরন্তন। আবার মহামারী করোনাকালে অনেক ব্যাতিক্রম ঘটনাও দেখছি। এই ব্যতিক্রমী অমানবিক ঘটনাগুলো আর দেখতে চাই না, শুনতে চাই না।
আবার করোনাকালে কিছু অতি মানবীয় আলোকিত ঘটনাও আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত হয়ে আসে। আসুন না সেই ব্যাতিক্রম ঘটনার পথপ্রদর্শক বিবেকবান কিছু মানুষের কীর্তিকে সামনে রেখে নিজেদের কিছুটা আলোকিত করি, মানুষের কল্যাণে নিজেদর বিলিয়ে দেই। কারণ রাতের শান্তিময় ঘুমের পর ভোরের আলো কার চোখে শান্তির বাতায়ন মেলে ধরবে আমরা কেউ জানি না, সেটা জানেন কেবলমাত্র আমাদের সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ, ভগবান কিংবা ঈশ্বর, যার যার ধর্ম অনুযায়ী যে নামেই ডাকি।
আসুন এই মহামারীতে যে যতটা পারি সাহায্যের হাতটুকু বাড়িয়ে দেই, পাশে দাড়াই, আমার আপনার মা, বাবা, বন্ধু-বান্ধবী, আতœীয়, প্রতিবেশীর। আজ যাকে দেয়ার সাধ্য থাকার পরও দিচ্ছি না, কে জানে কাল হয়তো সে আর এই নশ্বর পৃথিবীতে নাও থাকতে পারে। আর তখন যেনো আপনাকে বিবেকের দংশন কুড়ে না খায়। আমাদের মানব জনম তখনই স্বার্থক হবে যখন মানুষ মানুষেরই জন্য এগিয়ে আসবে। বিত্তের বৈভব নয়, মানুষের প্রয়োজন শুদ্ধ চিত্ত। শুদ্ধ হোক আমাদের বিবেক। শুদ্ধ হোক আগামীর ধরিত্রী।
লেখিকা-সাবেক শিক্ষক, পুলিশ লাইন হাইস্কুল। মোবাইল ০১৭৫৪ ৪৬০২৪৩