ড.তোফায়েল আহমেদ।।
ছাত্রছাত্রীর প্রতি অপরিসীম স্নেহ বৎসল এক আদর্শ শিক্ষক, সর্বোপরি একজন অত্যন্ত নির্ভরশীল অভিভাবক, উদারতা ও বাৎসল্েযর এক মূর্ত প্রতীক প্রফেসর আনিসুজ্জামানও আজ থেকে স্মৃতি হয়ে গেলেন।তিনি যখন চবিতে যোগ দেন,তখনা আমরা দশম শ্রেণীর ছাত্র।বাড়ি চবি সংলগ্ন গ্রামে। তাই দুর থেকে দেখতাম।বেশ লম্বা ছিপছিপে গড়ন। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে স্যার যাকে বলে ‘আইকন’ সে রকম ভাবমূর্তি ও ব্যক্তিত্ব হিসাবে আবির্ভুত হন।আগে পরিচয় থাকলেও ঘনিষ্টভাবে মেলামেশার সুযোগ হয়নি। ১৯৯১এর পর থেকে স্যারের সাথে ঘনিস্ট হবার সুয়োগ হয়। ঢাকার ব্যস্ততার মাঝে অনেক কাজ একনিষ্ঠভাব করা সম্ভব হতো না। তাই তিনি মাঝে মাঝে স্বেচ্ছানির্বাসনে আসতেন কুমিল্লায়, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে। তখন সকাল, দুপুর ও বিকেলে কিছু সময় কাটানো যেত, বিশেষত ক্যাফেটেরিয়া এবং হোস্টেলে। কোন সময়েই স্যারের কোন তাড়াহুড়া দেখতাম না।আমারই মাঝে মাঝে মনে হতো নিরুপদ্রুবে কিছু কাজ করার জন্য এখানে আসা, আমি বোধ হয় স্যারের মূল্যবান সময় নস্ট করছি। কোন কোন রাতে বাসায় একসথে খাওয়ার দাওয়াত করেছি। স্যার শিশুসুলভ সারল্েয রাজি হয়ে যেতেন।আমাদের একমাত্র শিশু কন্যা সাদিয়ার বয়স তখন মাত্র ৪/৫্র বছর। স্যারের সাথে তার কি ভাব, কত গল্প! মাঝে মাঝে আমরা স্বামী-স্ত্রী দু’জনই
অপ্রস্তুত হয়ে যেতাম। মেয়ে স্যারকে এমন এমন প্রশ্ন এবং আবদার
করতো আমরা লজ্জা পেয়ে যেতাম। সৈয়দ মার্গূব মোর্শেদ একসময় বার্ড কুমিল্লার ডিজি ছিলেন।তিনি আমাদের মেয়ে সাদিয়াকে খুবই আদর করতেন। মার্গূব স্যার হয়ত কোন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসনে বসে আছেন, সে যদি কোন কারণে ঐ অনুষ্ঠানে থাকে, তাকে ধরে রাখা যেত ন্ াসে মঞ্চে উঠে সোজা উনার কোলে বসে পড়তেন । তিনি কোনদিন বিরক্তি প্রকাশ তো নয়ই, বরঞ্চ আমি তখন উচ্চ শিক্ষার্থে বিদেশে, আমার স্ত্রী মাসুদা চৌধুরীকে বলতেন যেন অফিসে আসার সময় তাকে নিয়ৈ আসে। এতগুলো অপ্রাসঙ্গিক কথার অবতারণা একটি কারণে । যখন মার্গূব সাহেব বার্ড থেকে ঢাকায় বদলি হয়ে গেলেন , তখন থেকে মেয়ের মধ্েয যে স্নেহশীল মানুষের ভাবমূর্তি ছিল তা সে আর অন্যদের কাছে দেখতে পায়নি। কাকতালিয়ভাবে ঐ সময় আনিস স্যারের বার্ডে আসা-যাওয়া এবং বাসায় কযেকবার আসা যাওয়া এবং আনিস স্যারেরও মার্গূব সাহেবের মতো স্নেহ, আদর এবং শিশুর সাথে শিশুর মত মিশে যেতে পারাটা তার সে শূণতা পূরণ করে। সে একদিন একটা আবদার করে বসল , ”আংকেল, আপনি বার্ডের ডিজি হয়ে যান।” আমরা লজ্জায় মাটির সাথে মিশে যাচ্ছিলাম। আমি ধমক দিয়ে বললাম। আংকেল তোমার বার্ডের ডিজির চেয়ে অনেক বড় পদে আছেন। মেয়ে বলে ,”তবুও”। তিনি বললেন, আহা সে তাঁর কথা বলেছে। তাঁর বাৎসল্যের একটি ছোট্ট নমূনা দিলাম। আমার এ মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে আনিস স্যার সস্ত্রীক, মার্গূব স্যার এবং সদ্য প্রয়াত ড. সা’দত হোসাইন এসেছিলেন। আমার স্ত্রী ও সে মেয়ে এখন বিদেশে চিকিৎসাধীন। তারা শুনে খুব কস্ট পাচ্ছে। স্যারের বাসায় কাজের লোকজন যারা ছিলেন বা আছেন, স্যারের ছেলেমেয়েরা তাদের ’ভাই’ ’আপা’ বলে ডাকেন এবং সম্বোধন করে ‘আপনি’ হিসাবে। বয়সে ছোট হলেই শুধু ’তুমি” বলা যেত। ১৯৯১এর পর থেকে নানাভাবে স্যারকে পেয়েছি। আমার কাছে কিছু ছবি আছে। সে ছবিগুলো অনেক কস্টের। কারণ
এ ফ্রেমের অনেকগুলো মানুষ আমাদের ছেড়ে পরপারে চলে গেছেন। নলেজ ট্রাস্ট নামক একটা প্রতিষ্ঠান আমরা করেছিলাম। স্নেহাষ্পদ বিধান চন্দ্র পাল যার সদস্য-সচিব।আমাকে সভাপতি করা হয়। মিসেস জামান নলেজ ট্রাস্টের একজন ট্রস্টি। স্যার নানাভাবে আমোদের সাহায্য করেছেন। উনার বাসায় প্রচুর খাওয়া-দাওয়াসহ আমরা ট্রাস্টের সভাও করেছি। স্যারের বিদেহি আত্মার শান্তি কামনা করি।
লেখক : ব্রিটানিয়া ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ,পল্লী উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ এবং বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।