শুক্রবার ১৯ GwcÖj ২০২৪
Space Advertisement
Space For advertisement


ঝুঁকি নিয়ে করোনা সেবায় ডা. নিসর্গ


আমাদের কুমিল্লা .কম :
04.05.2020

মনোহরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী।

ফারুক আল শারাহ।।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে যে সময়ে দেশের অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চেম্বার গুটিয়ে নিয়েছেন সে সময় করোনা চিকিৎসায় সাড়া জাগাচ্ছেন কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী। চলমান সময়ে চিকিৎসায় ঝুঁকি জেনেও নিষ্ঠা ও বুদ্ধিদীপ্ততার সাথে তিনি দিন-রাত কাজ করে চলেছেন।
জানা যায়, ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী ইতোপূর্বে আইইডিসিআর-এফিল্ড এপিডেমিওলজি ট্রেনিং প্রোগ্রামে ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই ট্রেনিংটি বিশ্বের ৭০টি দেশে আছে, যা আমেরিকার সিডিসি আটলান্টা দ্বারা পরিচালিত। প্রতিবছর সারাদেশ থেকে পাঁচজনকে এই ট্রেনিং এর জন্য নির্বাচন করা হয়। বর্তমানে কুমিল্লা জেলায় একমাত্র এপ্লাইড এপিডেমিওলজিস্ট ডা. নিগর্স মেরাজ চৌধুরী। এরই প্রেক্ষিতে দেশে করোনার প্রভাব শুরু হলে গত ১১ এপ্রিল স্বাস্থ্যবিভাগ তাকে কুমিল্লা জেলায় করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের সমন্বয়ক দায়িত্ব অর্পণ করেন। তিনি আইইডিসিআর-এ কাজ করার সময় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংক্রমক রোগ আউটব্রেকে অংশ নিয়েছিলেন। করোনা পরিস্থিতিতে সংক্রমণ প্রতিরোধে তিনি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবেন, এমন বিবেচনায় তাঁকে এ দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।
দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করে চলেছেন। গতকাল রোববার পর্যন্ত কুমিল্লা জেলায় সর্বমোট ৯২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে চারজন মৃত্যুবরণ করেছেন এবং ২২ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
সূত্রে জানা যায়, একজন এপিডেমিওলজিস্ট হিসেবে রোগীকে সেবা দেয়াটা সহজবোধ্য নয়। রোগীকে খুঁজে বের করা, কাকে সন্দেহভাজন হিসেবে বিবেচনা করা হবে, কে কখন কোথায় গিয়েছে, তা বের করে সেখান থেকে নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা, এর সবকিছুই এপিডেমিওলজিস্টের কাজ। আর এ কাজগুলোই ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী বুদ্ধিদীপ্ততায় করে যাচ্ছেন। কোন রোগীর রিপোর্ট পজেটিভ হলে রোগীর সাথে নিয়মিত কথা বলা কিংবা চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মীকে নিয়মিত নির্দেশনাও দিতে হয় তাকে। একই সাথে কন্টাক্ট ট্রেসিং করে অন্য আরো সন্দেহভাজনদের শনাক্ত, রোগীর সাথে কথা বলে তাকে খাবার, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে পরামর্শ এবং নিয়মিত ফলোআপ করাও তাঁর কাজ। কন্টাক্ট ট্রেসিং এবং নমুনা সংগ্রহের সময় তাকে সন্দেহভাজনদের কাছে যেতে হয়। রোগীর রিপোর্ট পজেটিভ হলে যদি দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলেও তাকে রোগীর সংস্পর্শে যেতে হয়। এ পর্যন্ত তিনি সরাসরি পাঁচজন করোনা রোগীর সংস্পর্শে গিয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়েছেন। অন্য সবার সাথে ফোনে যোগাযোগ রেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
কুমিল্লা জেলায় এ পর্যন্ত যে ২২ জন করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়েছেন তাদের সাথে তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। তারা সবাই ঘরে থেকেই চিকিৎসা নিয়েছেন। সকলেই সম্পূর্ণ আইসোলেশনে ছিল। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এমন খাবার ও ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে তারা দ্রুত আরোগ্য লাভ করেছে বলে তিনি জানান।
এপ্লাইড এপিডেমিওলজিস্ট ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী কুমিল্লার লাকসাম, দেবিদ্বার, চান্দিনা, দাউদকান্দি বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এসব এলাকায় সম্পূর্ণ লকডাউন বা জনতার কারফিউ এমন কোন কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যাবশ্যক বলে তিনি জানান। সন্দেহভাজন সকল ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা প্রয়োজন। যত রোগী শনাক্ত হবে ততই ভালো বলেও তিনি মত দেন। এতে অন্যরা শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উদ্বুদ্ধ হবে। ধীরে ধীরে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসবে বলে তিনি জানান।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং কুমিল্লা জেলায় একমাত্র এপ্লাইড এপিডেমিওলজিস্ট ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী বলেন, যেহেতু আমি সরকারি চাকুরি করি তাই আমি এবং আমার উপজেলার সকল চিকিৎসক সেভাবেই মোটিভেটেড। আমরা একটা টিম হিসেবে কাজ করি। এটা বিশ্বাস করি যে, আমরা দেশের জন্য কিছু করছি। দেশের ক্রান্তিলগ্নে জনগণের জন্য কিছু করতে পারাটা সৌভাগ্যের বিষয়। সেই দায়িত্ববোধ থেকে করোনা চিকিৎসায় সর্বোচ্চ চেষ্টায় কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি আরো বলেন, আমরা এখন এমন অবস্থায় আছি, যা থেকে খুব ভালো কিংবা খুব খারাপ, যে কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তাই অবশ্যই এবং অবশ্যই আমাদের সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ঘরে থাকতে হবে, সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। এখনো সুযোগ আছে, যদি মানতে পারি আমরা দ্রুতই এর সুফল পাবো। করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে তিনি যেন শতভাগ পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করতে পারেন এজন্য সকলের আন্তরিক সহযোগিতা ও দোয়া চেয়েছেন।
ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী ৩২তম বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারে সরকারি চাকুরিতে যোগদান করেন। তিনি বর্তমানে মনোহরগঞ্জে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। ইতোপূর্বে তিনি একই পদে ছিলাম চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় চাকুরি করেন। এর আগে আইইডিসিআর-এ ফিল্ড এপিডেমিওলজি ট্রেনিং প্রোগ্রামে ফেলো হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী একজন সত্যিকারের করোনা যোদ্ধা হিসেবে দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। রোগী ও তাদের স্বজনরা যে কোন প্রয়োজনেই তাঁর প্রয়োজনীয় পরামর্শ পাচ্ছেন। এতে জেলাজুড়ে তাঁর অবদান প্রশংসিত হচ্ছে।
তিনি কুমিল্লা সদর উপজেলার ঘিলাতলী চৌধুরী বাড়ির সন্তান। তার পিতা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ,কবি,সাংবাদিক ও নজরুল গবেষক ড. আলী হোসেন চৌধুরী।