মাহফুজ নান্টু । পরিবার পরিজন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে আদৌ ভালোভাবে পড়ালেখা হবে কি না তা নিয়ে সন্দেহ ছিলো পরিবারের সবার। তবে বাবা ও কলেজের শিক্ষকদের উৎসাহ অনুপ্রেরণায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে রেকর্ড সংখ্যক মার্কস পেয়ে উত্তীর্ণ হলো। সবচেয়ে বেশী নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হওয়ায় পর নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজের বিভাগের শিক্ষকও হয়েছেন। আজ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি স্বর্ণ পদক পেয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করলো কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী নয়ন তারা। নয়ন তারার প্রাপ্ত ফলাফল সর্বমোট ৪ পয়েন্ট থেকে সিজিপিএ ৩.৯৬ অর্জন করে । যা এখন পর্যন্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সর্বোচ্চ নম্বর।
সমাবর্তনে স্বামী সন্তান নিয়ে আসা নয়ন তারা জানান, তার সাফল্যর গল্প। ২০০৭ সালে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীত বিভাগে ভর্তি হন। স্মৃতিচারণ করে নয়ন তারা জানান,এখনকার মতো এত পরিপাটি ক্যাম্পাস ছিলো না তখন। তবুও দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাই। কিন্তু মাঝে মাঝে খুব হতাশায় পড়ে যেতাম। স্যারদেরকে বলতাম আমি শুধু পাশ করতে চাই। আমার শ্রেণী শিক্ষকরা আমাকে ধমক দিয়ে বলতো, আমরা ভাবছি তুমি প্রথম হবে। সে জায়গায় তুমি এসব কি বলো। আমার বিভাগের শিক্ষকদের এমন কথা শুনে আমার উৎসাহ দ্বিগুণ হয়। আমি আরো মনোযোগী হই। ফলাফল দেখে আমি অভিভূত হই। এত ভালো করেছি যে তখন থেকে আমার মনে স্বপ্ন জাগে আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হবো।
শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়েছি। তার মাঝে আমি একটি সরকারি ব্যাংকে ছয় বছর চাকরি করি। তার মাঝেই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে আবেদন করি। ডাক পড়ে আমার। শিক্ষক হিসেবে মনোনীত হই। ওই দিনটি ছিলো আমার জীবনে স্মরণীয় দিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার জন্য আমার স্বামী আমাকে যথেষ্ট উৎসাহ দিয়েছেন। আমার স্বামী একজন ব্যাংকার। অফিসের পাশাপাশি সংসার সন্তান দেখাশুনাতেও আমার স্বামীর যথেষ্ট ভূমিকা ছিলো বলেই হয়তো আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হতে পেরেছি।
তবে জীবনে সফল হওয়ার পিছনে শিক্ষকদের অবদানের কথা স্বীকার করলেন অকপটে। নয়ন তারা জানান, কুমিল্লা বুড়িচং উপজেলার সোনার বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি থেকে শুরু করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া পর্যন্ত সব বিষয়ে উৎসাহ দিতেন কলেজের অধ্যক্ষ আবু ছালেক মো:সেলিম রেজা সৌরভ স্যার। অধ্যক্ষ স্যারসহ কলেজের অন্য সব শিক্ষকদের অভিভাবকত্বের জন্যই আজ আমার এত অর্জন। আমি স্যারদের প্রতি আমার হৃদয় নিংড়ানো কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।